ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাসযোগ্য পৃথিবী গড়তে-

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ১৯ নভেম্বর ২০১৬

বাসযোগ্য পৃথিবী গড়তে-

জলবায়ু পরিবর্তনের চলমান হুমকির মুখে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো। আগামী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তুলতে এই হুমকি মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার মরক্কোর মারাকাশে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে ভাষণদানকালে শেখ হাসিনা এই আহ্বান জানান। নিরাপদ খাবার পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি বৈশ্বিক তহবিল গঠনেরও প্রস্তাব দেন তিনি। সেই লক্ষ্যে আবারও বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে, বিশেষ করে উন্নতদেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে সহযোগিতায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনার এই বক্তব্যকে মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো। উল্লেখ্য, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকিতে যেসব দেশ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশ তার অন্যতম। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের উপকূল ভাগের প্রায় সকল জেলার হাজার হাজার পরিবার কার্যত জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে। কঠিন এই সমস্যা মোকাবিলায় নিজস্ব অর্থায়নে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের রক্ষার সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এ জন্য গঠন করা হয়েছে ট্রাস্ট ফান্ড। যাতে ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের অশুভ প্রতিক্রিয়ার জন্য বাংলাদেশ বা দেশের উপকূলবর্তী মানুষজন এই ঘটনার জন্য কোনভাবেই দায়ী নয়। মূলত শিল্পোন্নত দেশগুলোর দূষণ প্রক্রিয়া বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি করছে। এর ফলে একদিকে মেরুদেশের বরফ গলছে অন্যদিকে বাড়ছে সাগরপৃষ্ঠের উষ্ণতা। এর ক্ষতিকর প্রভাবও আমরা লক্ষ্য করছি যেমন এসব অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো জলোচ্ছ্বাসের তাণ্ডব বৃদ্ধি পেয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের এই হুমকির দায় শিল্পোন্নত ধনী দেশগুলোর। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের জীবন-জীবিকার পথে এক ধরনের হুমকি সৃষ্টি হয়েছে এতে। সব কিছু জানার পরও এই দেশগুলো এখনও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর প্রতি নেতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন করে চলছে। পরিসংখ্যানে জানা যায় এ পর্যন্ত ১১০ দেশ প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুমোদন করলেও ধনী দেশগুলোর মনোভাব যেন ধরি মাছ না ছুঁই পানির মতো অবস্থা। শেখ হাসিনা এবারও তার বক্তব্যে এই বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরেছেন। দ্রুত এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি। তিনি জলবায়ু উদ্বাস্তুদের অভিবাসনের চ্যালেঞ্জ সঠিকভাবে মোকাবেলার তাগিদ এবং বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে স্মরণ করিয়ে দেন, এটা না হলে আমরা কখনই টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে সামর্থ্য হব না। মারাকাশ সম্মেলন বিশেষ তাৎ্পর্য বহন করে। কারণ, দীর্ঘকাল ধরে জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্বের তাপমাত্রা কমিয়ে আনতে কার্বন নিঃসরণের একটি আইনী বাধ্যবাধকতার দাবি করে আসছিল জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশগুলো। এবার সেই আইনী বাধ্যবাধকতা সমন্বিত চুক্তি হলে এই খবর নিঃসন্দেহে অর্জনের ক্ষেত্রে একটি অগ্রগতি ধরে নেয়া যায়। এবার সর্বোচ্চ কার্বন নিঃসরণকারী দেশ বিশেষ করে জি-৭৭ ভুক্ত চীন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র খসড়া চুক্তির ব্যাপারে সমর্থন জানায়। এতে জলবায়ু বিপন্ন দেশ ও পরিবেশবাদী এবং তাদের সংগঠনগুলোর দুশ্চিন্তার কিছুটা অবসান হবে বলে আমরা মনে করি একথা সত্য যে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব রাতারাতি সমাধান হবে না। তবে এই প্রক্রিয়ায় যতটুকু অগ্রসর হলো সেটাই বা কম কিসে! জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর কোটি কোটি মানুষের অস্তিত্বের স্বার্থে সব দেশ সব জাতির ইতিবাচক মনোভাব দেখাবেনÑ এটা সবার প্রত্যাশা।
×