ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তানের চালবাজি

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ১৯ নভেম্বর ২০১৬

পাকিস্তানের চালবাজি

মঙ্গলবার পাকিস্তান স্টেট ব্যাংককে উদ্ধৃত করে পাকিস্তানের এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ১৯৭১ সালের আগে সরকারী অফিস, ঋণ, আগাম সুবিধাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরিবর্তনের কারণে পূর্ব পাকিস্তানের কাছে যে টাকা পাওনা ছিল, তা ২০১৬ সালের জুন নাগাদ মূল্য নির্ধারণ করে তা ৬০০ কোটি ৯২ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। একাত্তরে পরাজিত পাকিস্তানের এই ‘আকস্মিক পাওনার হিসাব’ স্বাধীন বাংলাদেশের সঙ্গে দৃষ্টতারই নামান্তর। এত ঔদ্ধত্য তাদের হয় কী করে! দীর্ঘ সাড়ে চার দশক ধরে বাংলাদেশে আটকেপড়া পাকিস্তানীদের মানবিক কারণে বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়ে এসেছে। আর কতকাল এভাবে চলবে? বরং চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তানের কাছে পাওনা আমাদের সম্পদের ন্যায্য হিস্যা পাকিস্তানকে মিটিয়ে দিতে হবে। ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পরে বৈদেশিক সাহায্য হিসেবে পাওয়া ২০০ মিলিয়ন ডলারসহ ৪ দশমিক ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ সম্পদের ন্যায্য হিস্যার দাবি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনেক আগেই জানানো হয়েছে। তবে পাকিস্তানের কাছ থেকে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা আদায়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা আরও জোরদার করাই সমীচীন। ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে ১৯৭৫ সালে জ্যামাইকার কিংস্টনে কমনওয়েলথ রাষ্ট্র প্রধানদের সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাবেও বাংলাদেশের পাওনা পরিশোধের জন্য পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। প্রসঙ্গত সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশকেই অসহযোগিতা করে আসছে পাকিস্তান যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার বিভিন্ন ফোরামেও দেশটির অসহযোগিতা বাড়ছে। স্পষ্ট করে বললে বলতে হয়, এই অসহযোগিতা করা ছাড়া যেন তাদের কোন বিকল্পও নেই। কারণ তারাই বর্তমান বিশ্বে জঙ্গীবাদের মোড়ল হয়ে উঠেছে। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন সন্ত্রাস ও জঙ্গীগোষ্ঠীকে পাকিস্তান দীর্ঘকাল মদদ দিয়ে আসছে। আল কায়েদা, লস্কর-ই-তৈয়বা, জইশ-ই-মোহাম্মদসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর পেছনে রয়েছে পাকিস্তানের মদদ। আর পাকিস্তানের কারণেই ভারত, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানে জঙ্গীবাদের ঝুঁকি বাড়ছে। স্মরণযোগ্য সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদ-ের রায় কার্যকর হওয়ার পর পাকিস্তান তার দীর্ঘকালের ওই দুই মিত্রের জন্য কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন করে এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য প্রকাশ করে। ‘পাকিস্তানের প্রতি অনুগত এবং ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে সমর্থন করায়’ কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে দাবি করে সে সময় দেশটির পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। লক্ষ্যযোগ্য হলো যুদ্ধাপরাধীদের একের পর এক ফাঁসির পরিপ্রেক্ষিতে একই ধরনের ধৃষ্টতা দেখিয়ে চলেছে পাকিস্তান। প্রত্যেকবারই এ জাতীয় ধৃষ্টতার কড়া প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ সরকার। জঙ্গী তৎপরতা বাড়িয়ে এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে উষ্মা প্রকাশ করে পাকিস্তান ইতোমধ্যে বুঝিয়ে দিয়েছে তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান থেকে একচুলও সরে আসেনি, বরং নানাভাবে ষড়যন্ত্র সচল রেখেছে। হঠাৎ করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক অর্থদাবি বাংলাদেশের ন্যায্য পাওনা, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত, সেটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে নতুন অপকৌশল ছাড়া আর কিছু নয়। উদোর পি-ি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর তাদের নয়া চালবাজি নস্যাৎ করার জন্য শুধু নিন্দা প্রকাশই তাই যথেষ্ট নয়। সময় এসেছে পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ব্যাপারে নতুন চিন্তা-ভাবনার! সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক রীতিসিদ্ধ উপায়ে বাংলাদেশের যাবতীয় পাওনা ফেরত পাওয়ার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণও জরুরী।
×