ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

১৯ রানে হেরে পিছিয়ে পড়ল রাজশাহী কিংস

অবশেষে জয়ের দেখা পেল চিটাগাং

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ১৯ নভেম্বর ২০১৬

অবশেষে জয়ের দেখা পেল চিটাগাং

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ টানা চার ম্যাচ হেরে ক্রমেই প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে যেতে শুরু করেছিল চিটাগাং ভাইকিংস। অবশেষে চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল টি২০) জয়ের দেখা পেল তামিম ইকবালের দল। শুক্রবার দিনের প্রথম ম্যাচে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ১৯ রানে তারা হারিয়েছে রাজশাহী কিংসকে। ষষ্ঠ ম্যাচে এটি চিটাগাংয়ের দ্বিতীয় জয়। আর চার ম্যাচে রাজশাহীর তৃতীয় পরাজয়। টস হেরে আগে ব্যাট করে এনামুল হক বিজয় আর মোহাম্মদ নবির জোড়া অর্ধশতকে ৫ উইকেটে ১৯০ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়েছিল চিটাগাং। জবাব দিতে নামার পর দারুণ লড়াই করছিল রাজশাহী। কিন্তু পেসার তাসকিন আহমেদ ৫ উইকেট নিয়ে তাদের লক্ষ্যে পৌঁছুতে দেননি। শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটে ১৭১ রানেই শেষ হয় রাজশাহীর ইনিংস। এ জয়ের ফলে একধাপ এগিয়ে ৫ নম্বরে উঠে আসল চিটাগাং আর একধাপ পিছিয়ে রাজশাহীর অবস্থান এখন ছয়ে। এবার বিপিএল জয় দিয়ে শুরু করেছিল চিটাগাং। কিন্তু এরপর কাগজে-কলমে শক্তিশালী দল গড়লেও বেশ বাজে সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। সেটা অব্যাহত ছিল নিজেদের মাঠ বন্দরনগরীর জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামেও। সাগরিকায় বিপিএলের দ্বিতীয় পর্বের শুরুটা হয়েছিল ১৯ রানে ঢাকা ডায়নামাইটসের কাছে হার দিয়ে। ৫ ম্যাচে ৪ পরাজয় আর মাত্র এক জয়ে একেবারে বিপর্যস্ত অবস্থায় পড়েছিল চিটাগাং। শুক্রবার আরেকটি সুযোগ ছিল ঘুরে দাঁড়ানোর। তবে শুরুটাই ভাল হলো না। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামতে হলো এবং ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই অন্যতম ব্যাটিং স্তম্ভ তামিম ইকবাল মাত্র ৫ রান করে সাজঘরে ফিরলেন মেহেদি হাসান মিরাজের অফস্পিনে এলবিডব্লিউ’র শিকার হয়ে। শুরুর দিকটায় বড় কোন জুটি গড়ে ওঠেনি। রাজশাহীর বোলাররা চেপে ধরেছিলেন ভালভাবেই। এরপরও পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে ২ উইকেটে ৪৪ রান তুলে মোটামুটি ভাল একটা স্কোরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল তারা। কিন্তু সেটা ধরে রাখতে পারেনি তারা। রাজশাহী বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে বিপর্যয়ে পড়ে তারা ৬৮ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে। ততোক্ষণে ইনিংসের অর্ধেক পেরিয়ে গেছে। দুই ম্যাচ পর আবার ওপেনিংয়ে ফেরা ক্যারিবীয় অলরাউন্ডার ডোয়াইন স্মিথ এদিন ঝড়ো একটি ইনিংস খেলেছেন। তবে ১৯ বলে ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৩৪ রান করে তিনিও ফিরে যান। একপ্রান্তে এনামুল হক বিজয় বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাট চালিয়ে যাচ্ছিলেন। যদিও রানের গতি তিনি সেভাবে বাড়াতে পারেননি। চারজন সেরা ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে তখন আরেকটি লো স্কোরিং ম্যাচের ইঙ্গিতই দিচ্ছিল চিটাগাং। কিন্তু পরিস্থিতি পুরোপুরি পাল্টে গেল আফগান অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবি ৬ নম্বরে ব্যাট করতে নামার পর। যে কোন পর্যায়ের টি২০ ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংসটি খেললেন এদিন নবি। পঞ্চম উইকেটে এনামুলের সঙ্গে ১০৫ রানের দারুণ এক জুটি গড়ে দলকে বিশাল একটি সংগ্রহের পথ করে দিলেন। বিপিএল ইতিহাসে এটিই পঞ্চম উইকেটের সেরা রান। বিপিএলে এর আগে পঞ্চম উইকেটে কখনও শতরানের জুটি হয়নি। এনামুল চলতি আসরের প্রথম অর্ধশতক করেন। তিনি ৪০ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৫০ রান করে সাজঘরে ফেরেন। কিন্তু নবিকে থামানো যায়নি। রাজশাহীর বোলারদের ওপর তা-ব চালিয়েছেন তিনি। বিশেষ করে ইনিংসের ১৬তম ওভারে ১৫, ১৮তম ওভারে ১৯ ও শেষ ওভারে ১৭ রান নিয়ে চিটাগাংকে বিশাল সংগ্রহ পাইয়ে দেন তিনি। মাত্র ২৫ বলে অর্ধশতক পেয়ে যান। এটি চলতি আসরের দ্রুততম হাফসেঞ্চুরি। অর্ধশতক পাওয়ার পর আরও আগ্রাসন চালান তিনি। পরের ১২ বলে নিয়ে নেন আরও ৩৭ রান। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৩৭ বলে ৬ চার ও ৬ ছক্কায় ৮৭ রানে। যে কোন পর্যায়ের টি২০ ম্যাচে এটি তার সেরা ব্যক্তিগত ইনিংস এবং চতুর্থ অর্ধশতক। ইনিংসের পরবর্তী ১০ ওভারে ১২১ এবং শেষ ৫ ওভারে ৭৬ রান ওঠে নবির টর্নেডো ব্যাটিংয়ে। ৬ উইকেট হারিয়ে ১৯০ রানের বিশাল সংগহ পায় চিটাগাং। সামিত প্যাটেল ৪ ওভার বোলিং করে মাত্র ২১ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। লক্ষ্যটা বিশাল বড় হয়ে যায় রাজশাহী বোলাররা পরের দিকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলার কারণে। তবে সমুচিত জবাব দিতে থাকে রাজশাহী কিংস। লিটন দাসের ইনজুরির কারণে দলে জায়গা করে নেয়া অভিজ্ঞ জুনায়েদ সিদ্দিকী যেন মুখিয়ে ছিলেন নিজেকে প্রমাণের জন্য। সেই উত্তাপটা ছড়ালেন ব্যাট হাতে। মুমিনুল হকের সঙ্গে উদ্বোধনী জুটিতে ৪৪ রান আসল মাত্র ২৭ বলে। ১৪ বলে ৪ চারে ২২ রান করা মুমিনুলকে ফিরিয়ে দিয়ে প্রথম সাফল্য এনে দেন তাসকিন। জুনায়েদ দুর্দান্ত ব্যাটিং করছিলেন। তবে ২৮ বলে ১ চার ও ৩ ছক্কায় ৩৮ রান করার পর নিউজিল্যান্ড অলরাউন্ডার গ্র্যান্ট ইলিয়টের বলে সাজঘরে ফেরেন তিনি। দ্বিতীয় উইকেটে তিনি সাব্বির রহমানের সঙ্গে আরও ৩৪ রান যোগ করেছিলেন। প্রথম ১০ ওভারে ২ উইকেটে ৮৩ রান তুলে কক্ষপথেই ছিল রাজশাহী। তবে এরপর উমর আকমলের ১২ বলে ২ চার ও ১ ছয়ে ২১ রান ছাড়া আর কোন ব্যাটসম্যান সাব্বিরকে যোগ্য সমর্থন দিতে পারেননি। মূলত বল হাতে গতির ঝড় তোলা তাসকিনের কারণেই সেটা সম্ভব হয়নি। সাব্বিরও ৩০ বলে ১ চার ও ৪ ছক্কায় ৪৬ রান করার পর পাক পেসার ইমরান খান জুনিয়রের কাছে উইকেট দিয়ে ফিরেছেন। অধিনায়ক ড্যারেন সামি ৭ বলে ২ ছক্কায় ১৪ রান করলেও ততোক্ষণে জয় থেকে অনেক কঠিন এক দূরত্বে রাজশাহী। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা তাসকিনের কারণে আর সেই দূরত্ব পেরনো সম্ভব হয়নি রাজশাহীর। ১৮তম ওভারে দুটি উইকেট শিকার করে রাজশাহীর সব আশা শেষ করে দেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটে ১৭১ রানে শেষ হয় রাজশাহীর ইনিংস। জয়ের দেখা পায় চিটাগাং। ৩১ রানে ৫ উইকেট নিয়ে চলতি বিপিএলে দ্বিতীয় সেরা বোলিং নৈপুণ্য দেখান তাসকিন। রাজশাহীর পেসার আবুল হাসান ২৮ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন ৯ নবেম্বর খুলনা টাইটান্সের বিরুদ্ধে। স্কোর ॥ চিটাগাং ভাইকিংস-রাজশাহী কিংস ম্যাচ ॥ টস ॥ রাজশাহী কিংস (ফিল্ডিং) চিটাগাং ভাইকিংস ইনিংস- ১৯০/৫; ২০ ওভার (নবি ৮৭*, এনামুল ৫০, স্মিথ ৩৪; প্যাটেল ২/২১, মিরাজ ১/১৮)। রাজশাহী কিংস ইনিংস- ১৭১/৯; ২০ ওভার (সাব্বির ৪৬, জুনায়েদ ৩৮, মুমিনুল ২২, আকমল ২১, সামিত ১৪; তাসকিন ৫/৩১, ইমরান ২/২৮)। ফল ॥ চিটাগাং ভাইকিংস ১৯ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ মোহাম্মদ নবি (চিটাগাং ভাইকিংস)।
×