ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংবাদ সম্মেলন

তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নিতে ভারতীয় নাগরিককে গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ১৯ নভেম্বর ২০১৬

তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নিতে ভারতীয় নাগরিককে গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার, বেনাপোল ॥ ভারতীয় নাগরিক খায়রুল ম-লকে রাজধানীর গাবতলী নয়, যশোরের শার্শা উপজেলার সীমান্তবর্তী পুটখালী এলাকা থেকে আটক করা হয়। আটকের সময় তার কাছে টাকা ছিল। কোন আগ্নেয়াস্ত্র ছিল না। অথচ তাকে দশটি আগ্নেয়াস্ত্রসহ আটক দেখানো হয়েছে। এসব অভিযোগ খায়রুলের স্ত্রী রোকেয়া বেগমের। তবে বাংলাদেশের ডিবি পুলিশ বলছে, আটক খায়রুল অস্ত্র ব্যবসায়ী এবং তাকে যশোর সীমান্ত নয়, ঢাকা থেকেই অস্ত্রসহ আটক করা হয়। খায়রুলের স্ত্রী রোকেয়া বেগম বলেছেন, তার স্বামী গরু ব্যবসায়ী। বাংলাদেশের বেনাপোলের কাছে পুটখালী এলাকার গরু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তার কারবার। ব্যবসা সূত্রে তিনি বাংলাদেশীদের কাছে ৩০ লাখ টাকা পাবেন। টাকা আদায় করতে তাকে মাঝেমধ্যেই চোরাপথে বাংলাদেশে আসতে হয়। তিনি বলেন, গত ২২ অক্টোবর পুটখালীতে ২৫ গরুর চালান নিয়ে আসেন খায়রুল। এর মধ্যে পাঁচটি গরু সাড়ে তিন লাখ টাকায় বিক্রি করেন। পুটখালীর মফিজুর রহমান ঘ্যানার বাড়ির সামনে বসে বকেয়া টাকা আদায়ের জন্য কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে তিনি কথা বলছিলেন। এ সময় কয়েক ব্যক্তি সেখানে হাজির হয়ে নিজেদের গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয় দিয়ে খায়রুলকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে ঢোকার দায়ে ধরে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নিয়ে যায়। এর নয় দিনের মাথায় ডিবি পুলিশ খায়রুলকে ঢাকার গাবতলী এলাকা থেকে দশটি অস্ত্রসহ গ্রেফতার দেখায়, যা পুরোপুরি মিথ্যা। বাংলাদেশে আটক খায়রুল ম-ল ভারতের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার গোপালনগর থানার সুন্দরপুর গ্রামের রমজান আলী ম-লের ছেলে। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা করেন গোয়েন্দা পুলিশের রাজধানীর বিমানবন্দর জোনাল টিমের জাহিদুল ইসলাম। এ মামলায় আরও আসামি করা হয়েছে বেনাপোলের বাদশাহ মল্লিক, আলাউদ্দিন আলা, ঢাকার জনি, জাভেদ লোকমান ও জসিমসহ অজ্ঞাত ৪-৫ জনকে। রোকেয়া বেগম বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বেনাপোলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, স্বামীকে বাংলাদেশের পুলিশ আটক করেছে জানতে পেরে আমি ভিসা করে এ দেশে আসি। এসে পুরো ঘটনা জানতে পারি। সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, পুটখালী এলাকার যেসব ব্যবসায়ীর কাছে আমার স্বামী টাকা পেতেন, তাদের কেউ কেউ পুলিশের সঙ্গে আঁতাত করে খায়রুলকে ধরিয়ে দিয়েছে। তিনি এ ‘মিথ্যা মামলা’ প্রত্যাহার এবং স্বামীর মুক্তি দাবি করেন। সংবাদ সম্মেলনে রোকেয়ার বাংলাদেশী আত্মীয় পুটখালী গ্রামের মহসিন সর্দারের স্ত্রী বানু বিবি ও একই গ্রামের ছলেমান হোসেনের ছেলে আলমগীর হোসেন উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত অভিযোগের সত্যতা নিরূপণে খোঁজখবর নিতে গেলে এ মামলার অন্য আসামি বাদশাহ মল্লিক ও আলাউদ্দীন আলা দাবি করেন, তারা বেনাপোল বাজারে ইলেক্ট্রিকের ব্যবসা করেন। গরু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। ষড়যন্ত্র করে তাদের এ মামলায় জড়ানো হয়েছে। নিরপেক্ষ তদন্ত করে তারা প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন ও দোষীদের বিচার দাবি করেন। পুটখালী গ্রামের ঘ্যানা বিশ্বাস, শাহাজান বিশ্বাস, রফিক, কাদের মোড়ল, মাজেদ মোড়ল, তুহিন, খায়রুল, আহাদ সরদারসহ অনেকে জানান, খায়রুলকে সাড়ে তিন লাখ টাকাসহ পুটখালী থেকে আটক করা হয়েছে। তাদের প্রশ্ন, খায়রুলকে পুটখালী থেকে ধরে নিয়ে ঢাকার গাবতলীতে অস্ত্রসহ আটক দেখানো হলো কিভাবে? পুটখালী এলাকার গরু ব্যবসায়ী নজরুল, মালেক, তোহিদ, রফিকসহ আরও অনেকে দাবি করেন, বিজিবির নির্দেশনা অনুযায়ী এখন আর বাংলাদেশীরা ভারতে গরু আনতে যায় না। ভারতীয় নাগরিকরা এখন বাংলাদেশ গরু দিয়ে যায়। সেসব গরু বেচে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের টাকা দেয়া হয়। অনেক সময়ে বকেয়া টাকা আদায় করতে ভারতীয় মহাজনরা পুটখালী হাটে আসে। তাদের প্রশ্ন, গোয়েন্দা পুলিশ খায়রুলকে যদি অস্ত্রসহ আটকই করবে তাহলে স্থানীয় থানায় সোপর্দ করল না কেন? তাদেরও দাবি, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। এ ব্যাপারে মামলার বাদী ডিএমপির (ডিবি উত্তর) এসআই বেনজির আহম্মেদ জানান, তারা কখনও বেনাপোলের পুটখালীতে যাননি। খায়রুলকে ঢাকার গাবতলী থেকেই অস্ত্রসহ আটক করা হয়েছে।
×