ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পাঁচ বছর রেহানার শিকলবন্দী জীবন

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ১৯ নভেম্বর ২০১৬

পাঁচ বছর রেহানার শিকলবন্দী জীবন

নিজস্ব সংবাদদাতা, পার্বতীপুর, ১৮ নবেম্বর ॥ বিশ্বাস না হলেও সত্য যে, মস্তিষ্কবিকৃতির অজুহাতে রেহানা (৪০) নামে এক হতভাগীকে স্যাঁতসেতে ও জরাজীর্ণ খোলামেলা ঘরে পায়ে শিকল বেঁধে দীর্ঘ ৫ বছর ধরে আটকে রাখা হয়েছে। দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার বেলাইচ-ি ইউনিয়নের অজপাড়াগাঁ সোনাপুকুর ভাটিপাড়ায়। মা মারা গেছেন তবে পিতা আলাবক্স (৬০) জীবিত। দুই ভাই আ. মজিদ (৪০) ও আ. রশীদ (৩৫) কর্মজীবী। মনমথপুরের দেগলাগঞ্জে জনৈক জমিরউদ্দিনের সাথে তার বিয়ে হয়েছিল পঁচিশ বছর আগে। রাফিকুল (২৪) ও সাদেকুল (১৮) নামে তার দুই ছেলে রয়েছে। ওরা ভ্যান চালায়। তবে ৭ বছর আগে স্বামী মারা গেলে সংসার ভেঙ্গে যায়। পারিবারিক অশান্তিতে মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়। নিরূপায় হয়ে রেহানা বাবার বাড়িতে ঠাঁই নেয়। স্বামী না থাকলেও ছেলে সন্তান ও অন্য স্বজনরা রয়েছেন। তারা একেবারেই অসচ্ছল নয় । অথচ এতদিনেও চিকিৎসা না করে গোয়াল ঘরের চেয়েও অস্বাস্থ্যকর স্থানে শিকলবন্দী করে রাখা হয়েছে তাকে। পিতা আলাবক্স বলেছেন, অর্থাভাবে মেয়ের চিকিৎসা করাতে পারি না। দুই ভাবি ও ভাইদের উক্তি অনর্গল কথা বলে, লোকদের উপর চড়াও হয় ও ভাংচুর করার কারণে তাকে এভাবে রাখা হয়েছে। কি নিদারুন নিষ্ঠুরতা। আপনজনের সানিধ্য, ভালবাসা ও নির্ভরশীলতা ভাগ্যবিড়ম্বিত এই নারীর জীবনে মিথ্যে হয়ে গেছে। প্রতিবেশী ও পার্শ্ববর্তী লোকজন তার সামনে গেলে দাপাদাপি ও পায়ের বেড়ি খুলে দেয়ার আকুতি ও কান্নাকাটি করে রেহানা। তবে চিড়িয়াখানার বন্দী জীব জানোয়ারের মতো মজা দেখে তারা সরে গেছে। ভাবতে অবাক লাগে এই অবস্থার পরেও এলাকার মানুষের বিবেক জাগ্রত হয়নি। তার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়নি।
×