ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্ব হারাচ্ছে

জেলা পরিষদ ও না’গঞ্জ সিটি নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে না জাতীয় পার্টি

প্রকাশিত: ০৬:২১, ১৯ নভেম্বর ২০১৬

জেলা পরিষদ ও না’গঞ্জ সিটি নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে না জাতীয় পার্টি

রাজন ভট্টাচার্য ॥ বেহাল দশা বিরোধী দল জাতীয় পার্টির। সাংগঠনিক অবস্থা দিন দিন দুর্বল হওয়ায় এবার জেলা পরিষদের নির্বাচন এমনকি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে না দলটি। এদিকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবেও রাজনৈতিক গুরুত্ব হারাচ্ছে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাপা। সরকার ও বিরোধী দলে থাকায় এমন অবস্থার কথা বলছেন দলের শীর্ষনেতা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও। সংসদে বিরোধী দল হিসেবে জাপার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তেমনি সাধারণ মানুষের কাছে দলটির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন বরাবরের। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সফরে আসা গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় অতিথিরাও দলটিকে পাত্তা দিচ্ছেন না। বিরোধী দলের প্রধানের সঙ্গে বিদেশী অতিথিদের সাক্ষাতের আনুষ্ঠানিকতা পর্যন্তও রক্ষা হচ্ছে না, যা সাম্প্রতিক সময়ের রাজনীতিতে লক্ষ্য করা গেছে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ গত সপ্তাহে রংপুর সফরে গিয়ে জেলা পরিষদের নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, এ নির্বাচনে সাধারণ ভোটারদের ভোট দেয়ার সুযোগ থাকে না। তাদের প্রত্যাশার ভোটের মাধ্যমে প্রতিফলিত হওয়ার সুযোগ নেই। এ কারণে আমরা চলতি মাসের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদের নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছি না। আসন্ন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও মেয়র পদে প্রার্থী না দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন এরশাদ। দলের নেতারা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জাপার প্রার্থীরা সর্বোচ্চ দুই থেকে পাঁচ হাজার ভোট পেয়েছেন। অর্থাৎ কোনরকম প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকতে পারেনি জাপা প্রার্থীরা। নজির আছে জামানত বাজেয়াফত হওয়ারও। এমন বাস্তবতায় প্রার্থী না দেয়ার চিন্তা দলের পক্ষ থেকে। তবে একটি পক্ষ চায় প্রার্থী দেয়া হোক। মূলত দলের অবস্থান ধরে রাখতেই প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা বলছেন তারা। দলটির নেতাদের ধারণা- বর্তমান বিরোধী দলের অবস্থান দুর্বল হওয়ায় বিদেশী অতিথিরা জাতীয় পার্টিকে পাত্তা দিচ্ছে না। সফরের রীতি অনুযায়ী অতিথিরা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি বিরোধী দলের প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সাধারণত শক্তিশালী রাজনৈতিক দলই বিরোধী দল হয়। যাদের পরবর্তীতে ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা থাকে। এই প্রেক্ষাপটে কোন দেশের অতিথি বিরোধী দলের প্রধানের সঙ্গে সুসস্পর্ক ধরে রাখা বা পররাষ্ট্রনীতির স্বার্থে সাক্ষাত করে থাকেন। কিন্তু বাংলাদেশে বর্তমান বিরোধী দলের অবস্থান সার্বিকভাবে দুর্বল হওয়ায় বিদেশী কোন অতিথিই দলটিকে পাত্তা দিচ্ছেন না। সর্বশেষ বাংলাদেশ সফরে আসা চীনের প্রেসিডেন্টও বিরোধী দলের নেতার সঙ্গে কোন বৈঠক করেননি। যদিও বৈঠক নির্ধারিত ছিল বলে জানা গেছে। জাপার একাধিক নেতা জানান, সি জিনপিংয়ের সঙ্গে বিরোধীদলীয় নেতা বা জাপার বৈঠক না হওয়ায় দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদও ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তার সঙ্গে বৈঠকের ব্যবস্থা করতে না পারাকে জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদপন্থীদের ব্যর্থতা হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে রওশনবিরোধীরা দলের ভেতরে সরব রয়েছেন। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, এ ব্যাপারে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমামের দায়িত্ব থাকলেও তিনি বিদেশে ছিলেন। পরবর্তীতে বিরোধী দলের হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। বিরোধীদলীয় নেতা রওশনের সঙ্গে চীনের রাষ্ট্রপতির সাক্ষাত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ধারাবাহিক অবজ্ঞা ॥ গত বছরের মাঝামাঝি বাংলাদেশ সফরে আসেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সফরের আগে জানা যায়, সফরকালে মোদি বিরোধী দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। কিন্তু পরে দেখা গেল ভিন্নচিত্র। বৈঠক করা তো দূরের কথা, মোদি সাক্ষাত করতেও আগ্রহ দেখাননি। পরবর্তী সময় জাপার কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদের বিশেষ অনুরোধে নামেমাত্র সাক্ষাত করেন মোদি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সফরকালেও সাক্ষাত পায়নি এ দলটি। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি চীনের রাষ্ট্রপ্রধানের আগমনকে ঘিরেও জাপার প্রত্যাশা ছিল তারা চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বিরোধী দল হিসেবে বৈঠক করার সুযোগ পাবে।
×