ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পালমোনারি ফাংশন টেস্টে এ চিত্র উঠে এসেছে

বায়ু দূষণে ফুসফুসের সমস্যায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৬:২১, ১৯ নভেম্বর ২০১৬

বায়ু দূষণে ফুসফুসের সমস্যায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে

নিখিল মানখিন ॥ রাজধানীতে ফুসফুস সমস্যায় আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এই নগরীর প্রায় ২৫ শতাংশ মানুষ ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছে। বায়ুদূষণের কারণে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফুসফুসের সমস্যাও বাড়ছে। বায়ুদূষণ কমাতে রাজধানী ও এর আশপাশের ইটভাঁটি, যানবাহন ও ট্যানারিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বেসরকারী বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিতে স্থাপিত আরবান ল্যাব পরিচালিত এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। ‘নাগরিক স্বাস্থ্যের ওপর বায়ুদূষণের প্রভাব’ শীর্ষক ওই গবেষণার ফল বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি (বিইউ) এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) যৌথ উদ্যোগে প্রকাশ করা হয়েছে। গবেষকদের অন্যতম হলেন ঢাকা শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক রুহুল আমিন। তিনি জানান, গবেষণায় রাজধানীর ১১ এলাকার নানা বয়সী ৫শ’ জনের বেশি মানুষের ফুসফুসের সক্রিয়তার পরীক্ষা বা পালমোনারি ফাংশন টেস্ট (পিএফটি) করা হয়। পিএফটির ফলে দেখা যায়, গড়ে রাজধানীর ২৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ বাসিন্দা ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছে। এর মধ্যে ২২ দশমিক ১৮ শতাংশ পুরুষ। আর ২৪ দশমিক ৭২ শতাংশ নারী। ডিএনসিসির মেয়র আনিসুল হক বলেন, প্রতিদিন হাজার হাজার টন নির্মাণ বর্জ্য, মেডিক্যাল বর্জ্য, বাসাবাড়ির বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর বেশিরভাগই বাতাসের সঙ্গে মিশে যায়। বায়ুদূষণের কারণে শিশুরা নানা রোগ নিয়ে বড় হচ্ছে। দূষণ কমাতে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিককে এগিয়ে আসতে হবে। সবুজ ঢাকা গড়তে আগামী দুই বছরে ঢাকায় তিন লাখ ২৫ হাজার গাছ লাগানো হবে বলে জানান মেয়র। মানবদেহের ওপর বায়ুদূষণের প্রভাব বিষয়ে জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আবদুল মালিক বলেন, সালফার ডাই-অক্সাইড, কার্বন-মনোক্সাইড থেকে শুরু করে মার্কারি, লেডের মতো ভারি পদার্থ বাতাসে মিশে যাচ্ছে। এগুলো ফুসফুসের পাশাপাশি হৃদরোগ, যকৃতের সমস্যা ও গর্ভবতী মায়েদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিইউর বোর্ড অব ট্রাস্টিজ সদস্য ও পরিবেশবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, ঢাকায় বায়ুদূষণের পরিমাণ দিন দিনই বাড়ছে। এ দেশে আন্দোলনরত জনতাকে হটাতে জলকামানের ব্যবহার হলেও ধুলা সরাতে তার কোন ব্যবহার নেই। সুষ্ঠু পয়োঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষাকালে পয়োঃবর্জ্য ওপরে উঠে আসে, যা গ্রীষ্মকালে ধুলায় পরিণত হয়ে বাতাসের সঙ্গে মিশে নিঃশ্বাসের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে। গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বায়ু দূষণের কারণে ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া, এ্যাজমা ও শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রদাহজনিত (সিওপিডি) রোগ বেশি হচ্ছে। ফুসফুসের ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব চূড়ান্ত পর্যায়ে ধরা পড়লে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগীরা পাঁচ বছরের বেশি বাঁচে না। এখন অনেক নতুন কেমোথেরাপি, রিসিপটর বেজড কেমোথেরাপি চলে এসেছে। সেগুলো দিয়ে হয়ত একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চেষ্টা করে রোগীকে পাঁচ বছর পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। আসলে প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ার ওপর রোগীর সুস্থতা অনেকটা নির্ভর করে। তাই এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা দরকার। বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি থাকলেও এ রোগ থেকে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভের কোন চিকিৎসা পদ্ধতি অদ্যাবধি আবিষ্কৃৃত হয়নি। যদি একবারে প্রাথমিক অবস্থায় রোগটি ধরা পড়ে তবে তা থেকে মোটামুটি আরোগ্য লাভ করা যায়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নিরূপণ দুঃসাধ্যই বলা চলে। জীবাণুঘটিত রোগ না হওয়ায় এর বিরুদ্ধে উপযুক্ত প্রতিরোধক বা প্রতিষেধক আবিষ্কারে বিজ্ঞানীরা সাফল্য অর্জনে সক্ষম হয়নি। তাই জনসচেতনতা ব বৃদ্ধির মাধ্যমে যতটা সম্ভব প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় ও সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে মৃত্যুহার এবং এ রোগের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক বিপন্নতা কমানোর চেষ্টা সামাজিক আন্দোলনে রূপ নিচ্ছে। ধূমপায়ী ব্যক্তিই এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন বেশি। তবে অধূমপায়ীদের যে এ রোগ হতে পারে না তা কিন্তু নয়। নগরায়ণের এ বিশ্বে শিল্পকারখানা ও গাড়ির নির্গত কালো ধোঁয়াও ফুসফুসের ক্যান্সারের কারণ।
×