ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাক্ষাতকারে ম্যান বুকার পুরস্কারজয়ী ডেবোরাহ স্মিথ

ইংল্যান্ডেও প্রচুর সাহিত্য উৎসব হয়- ঢাকার মতো মিলনমেলা নয়

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১৯ নভেম্বর ২০১৬

ইংল্যান্ডেও প্রচুর সাহিত্য উৎসব হয়- ঢাকার মতো মিলনমেলা নয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিশ্বখ্যাত ব্রিটিশ অনুবাদক ডেবোরাহ স্মিথ। বয়স যখন ২৮ তখন তিনি অর্জন করেন আন্তর্জাতিক সাহিত্যের অনন্য সম্মাননা ম্যান বুকার পুরস্কার। চলতি বছর দক্ষিণ কোরিয়ার লেখক হান কাংয়ের ‘দ্য ভেজিটেরিয়ান’ উপন্যাস অনুবাদের জন্য যৌথভাবে এ পুরস্কার অর্জন করেন এই তরুণ লেখিকা। বাংলা একাডেমি চত্বরে চলমান ঢাকা লিট ফেস্টের দ্বিতীয় দিনে শুক্রবার তিনি মুখোমুখি হয়েছিলেন জনকণ্ঠের এই প্রতিনিধির সঙ্গে। অনুবাদ সাহিত্য ও বাংলাদেশের সাহিত্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে জানান নিজের অভিমত। বাংলাদেশের সাহিত্য প্রসঙ্গে ডেবোরাহ স্মিথ বলেন, আমি এখন পর্যন্ত একটি ছোটগল্পের অনুবাদ বই হাতে পেয়েছি। বিমানে সেটিই ছিল আমার সঙ্গী। ওই বইয়ে থাকা আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘দ্য রেইনকোট’ ও মঈনুল আহসান সাবেরের ‘সার্কেল’ গল্প দু’টি আমার ভাল লেগেছে। আমি বাংলাদেশের আরও সাহিত্য পড়তে আগ্রহী। বাঙালী সাহিত্যিকদের মধ্যে আমি খুব ছোটবেলাতেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গীতাঞ্জলি’র ইংরেজি অনুবাদ পড়েছিলাম। যে কোন সাহিত্যকর্মের যথাযথ অনুবাদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনুবাদ গ্রন্থ মূল ভাষার জনগোষ্ঠী ও অনূদিত ভাষার জনগোষ্ঠীÑ উভয়পক্ষের জন্য প্রাসঙ্গিক হতে হবে। একইসঙ্গে পাঠককেও নতুন কিছু দিতে হবে। অন্যথায় পাঠক আকৃষ্ট হবে না। শুক্রবার সকালে বাংলাদেশের গ্রন্থাগার সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে অধিবেশনে অংশ নেয়ার পর কথা হয় ডেবোরাহ স্মিথের সঙ্গে। শুধু বাংলাদেশে নয়, দক্ষিণ এশিয়াতেই এটি তার প্রথম সফর। ঢাকার আবহাওয়াকে দারুণ উপভোগ করছেন জানিয়ে বলেন, খুবই ভাল লাগছে এখানে এসে। চমৎকার আবহাওয়ার মধ্যে ঘুরে বেড়াতে দারুণ মজা হচ্ছে। আড্ডারছলে আমাকে একজন বললেন, এখানে নাকি পাইরেট বইয়ের দোকান রয়েছে (নীলক্ষেত)। আমি অবশ্যই সেখানে যাব। আমি মনে করি, এটা আমার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা হবে। অনুবাদ সাহিত্যের প্রতি নিজের আগ্রহ সম্পর্কে বললেন, আমি একটি প্রান্তিক পরিবার থেকে উঠে এসেছি। কিন্তু অন্য ভাষা ও সংস্কৃতির বিষয়ে আমার ছিল দারুণ আগ্রহ। ২২ বছর বয়সে আমি শুধুমাত্র ইংরেজী জানি, সেটি আমার জন্য খুব লজ্জার ছিল। এসব বিষয়ই আমাকে অনুবাদ সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করে। অনুবাদ বইয়ের ক্ষেত্রে তিনি বলেন, এখানে অবশ্যই নতুন কিছু থাকতে হবে, যা পাঠকের আগ্রহের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। সে সঙ্গে বিষয়টি হতে হবে দ্বি-পাক্ষিক। ইংল্যান্ড বা যুক্তরাষ্ট্রে যে পাঠক আছেন, তাকে এমন কিছু দিতে হবে, যেটি তার ভাবনায় নতুন কিছু যোগ করবে। আবার একই সঙ্গে বাংলাদেশের পাঠকের জন্য এমন অনুবাদের বই দিতে হবে, যা তাকে আকৃষ্ট করে। নিজের অনুবাদ বইয়ের প্রকাশনা সংস্থা ‘টাইটেলড এক্সিস’ থেকে বাংলাদেশের লেখকদের বই অনুবাদ করে প্রকাশ করার আগ্রহের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গীতা বন্দোপাধ্যায়ের ‘দ্যা প্যান্টি’র অনুবাদের কাজ করছি। এখানে এসে আমি বাংলাদেশের সাহিত্যিকদের বিষয়ে জানার চেষ্টা করছি। যা পরবর্তীতে অনুবাদ করার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।’ ঢাকা লিট ফেস্টের বিষয়ে বেশ উচ্ছ্বাস ছিল তার কণ্ঠে। বললেন, বিশাল পরিসরের আয়োজনটিতে আমাকে সবচেয়ে মুগ্ধ করেছে যে বিষয়টি, সেটি হলো সবাই খুব আন্তরিকতার সঙ্গে অধিবেশনগুলো শুনছেন এবং তার সঙ্গে একাত্ম হয়ে যাচ্ছেন। এমনকি আমি খেয়াল করলাম পুলিশ সদস্যরাও আলাপগুলো শুনে বোঝার চেষ্টা করছেন। এছাড়া এই সাহিত্যি সম্মেলনে প্রচুর তরুণ ও শিক্ষার্থী এসেছে- এটাও আমার ভাল লেগেছে। ইংল্যান্ডেও প্রচুর সাহিত্য উৎসব হয়ে থাকে। কিন্তু সেখানে ঢাকার মতো এত মানুষের মিলনমেলা হয় না। ইংল্যান্ডের সাহিত্য উৎসবগুলোতে মূলত লেখক, প্রকাশক, সেলিব্রেটিরা আসেন। তার ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়া গ্রন্থ ‘দ্যা ভেজিটেরিয়ান’ সম্পর্কে বলেন, একজন অতি সাধারণ গৃহিণী নিজেকে ‘গাছগাছালির মতো’ অস্তিত্ব কামনা করে ভেজিটেরিয়ান হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তার গল্প নিয়েই উপন্যাসটি গড়ে উঠেছে। এ সিদ্ধান্তের জন্য তিনি বাবার বিরাগভাজন হয়, স্বামী তার প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করেন এবং তার বোনের স্বামী তার প্রতি অনুরক্ত হয়ে ওঠে। ইয়ং-হাই নামের মহিলাটি গাছ হয়ে যাওয়ার স্বপ্নে যত বিভোর হয়, কাহিনী ততই জমে উঠতে থাকে। ম্যান বুকার প্রাপ্তির বিষয়ে তিনি বলেন, মাত্র ২৮ বছর বয়সে এ পুরস্কারপ্রাপ্তি নিঃসন্দেহের গর্বের।’ এর পর তিনি রসিকতারছলে বলেন, এত অল্প বয়সেই এত বড় পুরস্কার পেলাম, আমার মনে হচ্ছে, আমার ক্যারিয়ারে নিচের দিকে ধাবিত হবে! ২৮ বছর বয়সী ডেবোরাহ স্মিথ ২১ বছর বয়সে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ডিগ্রী শেষ করার পর অনুবাদক হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ২০১৫ সালে তিনি লন্ডন ইউনিভার্সিটি থেকে সমসাময়িক কোরিয়ান সাহিত্যের ওপর পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। অনুবাদ সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৬ সালে পেয়েছেন ফাউন্ডেশন এ্যাওয়ার্ড।
×