ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুধ থেকে ডিজাইনার ড্রেস

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ১৮ নভেম্বর ২০১৬

দুধ থেকে ডিজাইনার ড্রেস

দুধ থেকে ছানা, সন্দেশ, চিজ- সব কিছু তৈরি হয়। কিন্তু কাপড়? ল্যাক্টোপ্রোটিন বা দুধের প্রোটিন থেকে ফাইবার, ফাইবার থেকে সুতো, সুতো থেকে কাপড়, কাপড় থেকে ড্রেস, তাও আবার হলিউড তারকাদের জন্য, এ সবই সম্ভব। নানা রঙের কাপড়, রেশমি কাপড়ের মতো নরম। সেই কাপড় কেটে ফ্যাশনেবল জামাকাপড় তৈরি করেন আঙ্কে ডোমাস্কে। যিনি একাধারে ডিজাইনার ও মাইক্রোবায়োলজিস্ট। আঙ্কে বলেন, ‘এই কাপড়ে দুধের গন্ধ পাবেন না। কিন্তু মজার কথা, আজ পর্যন্ত অনেকেই প্রথমে শুঁকে দেখেন, দুধের গন্ধ আছে কিনা। অবশ্যই কোন গন্ধ নেই। ওদিকে খুবই মসৃণ কাপড়। আমাদের ফাইবারটা পশম কিংবা রেশমের মতোই একটা প্রোটিন ফাইবার। কিন্তু যেহেতু তার উপরিভাগ খুব মসৃণ, সেহেতু তার হ্যাপটিক্স অর্থাৎ স্পর্শের অনুভূতিটা অনেকটা সিল্কের মতো।’ ডামাস্কে ‘মানুষের ব্যবহারের অযোগ্য’ দুধ থেকে টেক্সটাইল ফাইবার, অর্থাৎ কাপড় বোনার সুতো তৈরি করেন। এটা এমন একটা আইডিয়া, যা ভবিষ্যতে বস্ত্রশিল্পকে পুরোপুরি বদলে দেবার ক্ষমতা রাখে। বলতে কি, রান্নাঘরেই সব কিছুর শুরু। সদ্য মাইক্রোবায়োলজি পাস করা আঙ্কে সুপারমার্কেট থেকে একটা কিচেন মিক্সার, মার্মালেড বা মোরব্বা তৈরির থার্মোমিটার ও প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন পাউডার কিনে এনেছিলেন। লক্ষ্য ছিল, এমন একটা ফাইবার বা রোঁয়া তৈরি করা, যা থেকে সুতো ও শেষমেষ কাপড় তৈরি করা যায়। আঙ্কে শোনালেন, ‘আমরা ঐ কিচেনে প্রায় ন’মাস ধরে এক্সপেরিমেন্ট করে এমন একটা ফাইবার তৈরি করার ফর্মূলা বার করতে পেরেছি, যা জলে দিলে সঙ্গে সঙ্গে গলে না যায়। কাপড় তৈরির সুতোর ওইটাই বিশেষত্ব, কেননা কাপড় তো শেষমেষ কাচতেই হবে।’ ল্যাক্টোপ্রোটিন এক জগ দুধ হাতে নিয়ে আঙ্কে বোঝালেন, কীভাবে এই ফাইবার তৈরি হয়। কিউ-মিল্ক কোম্পানির সিইও আঙ্কে বললেন, ‘দুধ টক হয়ে গেলে নিচে ছানার পানি থাকে, ওপরে ভাসে সাদা সাদা ল্যাক্টোপ্রোটিন বা দুধের প্রোটিন। সেটা ছেঁকে নিলে যে দইয়ের মতো পদার্থটি পাওয়া যায়, তা শুকিয়ে প্রোটিন পাউডার তৈরি করা যায়। সেটাই আমাদের র-মেটিরিয়াল বা কাঁচামাল। সেটা মেখে আমরা একটা তাল তৈরি করি। সেই প্রোটিনের তাল একটা ‘নজল’ দিয়ে চেপে বার করলে এরকম একটা সূক্ষ্ম ফাইবার পাওয়া যায়, যা মিলিয়ে সুতো তৈরি হয়, সেই সুতো থেকে কাপড়, সেই কাপড় থেকে এরকম একটা সুন্দর ড্রেস। অথচ এটা প্রকৃতিদত্ত, এই ফাইবার খাওয়া পর্যন্ত যায়।’ আঙ্কে ডোমাস্কে এখন কারখানার মতো করে দুধের প্রোটিন থেকে ফাইবার তৈরি করছেন। কাঁচামাল হলো প্রোটিন পাউডার, তা-তে পানি ও অন্যান্য প্রকৃতিদত্ত সংযোজক পদার্থ মিশিয়ে এমন একটি তাল মাখা যায়, যা ‘নজল’ দিয়ে চেপে মানুষের মাথার চুলের মতো পাতলা ফাইবার বের করা যায়। নিজেদের ল্যাবরেটরিতে সেই ফাইবারের টেনসাইল শক্তি অর্থাৎ সেটা কতটা টান সহ্য করতে পারে, তা পরীক্ষা করে দেখা হয়। এই ফাইবার সিল্ক কিংবা পশমের ফাইবারের সঙ্গে তুলনা করা যায়। দুধের প্রোটিন থেকে তৈরি টেক্সটাইল ফাইবার থেকে এ্যালার্জি হয় না; তাতে কোন রাসায়নিক অবশিষ্ট নেই; এবং ফেলে দেয়ার পর তা স্বাভাবিকভাবে পচে যায়। আঙ্কে বলেন, ‘দুধের ফাইবার ‘ব্রিদেবল’, মানে তা-তে হাওয়া খেলতে পারে; এটা তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে; ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী; সহজে আগুন ধরে না। কাজেই তা শুধু বস্ত্রশিল্পের জন্যই নয়, প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও ব্যবহারযোগ্য। তা দিয়ে ফোম তৈরি করা যায়; স্প্রে করা যায়; ফোলিও তৈরি করা যায়; এমনকি ন্যানো পদার্থÑ অসংখ্য সম্ভাবনা, যা আমরা সবে আবিষ্কার করতে শুরু করেছি।’ ফ্যাশনের জগতে ‘দুধকাপড়ের’ ব্রেকথ্রু আসে, যখন কয়েকজন হলিউড তারকা এই কাপড়কে ফ্যাশনেবল বলে ঘোষণা করেন। ডোমাস্কে ঐ তারকাদের ঠিক তাদের সাইজে তৈরি করা জামাকাপড় পাঠিয়েছিলেন। তাতেই কাজ হয়। আঙ্কে জানালেন, ‘মিশা বার্টন প্রথম আমাদের পাঠানো ড্রেসটা পরেন। যেদিন তিনি ড্রেসটা পান, ঠিক সেদিন সন্ধ্যাতেইÑ মিডিয়াতে যা বড় করে দেখানো হয়। আমাদের পক্ষে একটা বিরাট ব্যাপার।’ আইডিয়াটা যদি সফল হয়, তাহলে ভবিষ্যতে বড় বড় ফ্যাশন লেবেলরাও হয়ত ‘দুধকাপড়ের’ অর্ডার দেবে। সূত্র : ডয়েচ ভেলে
×