ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অধ্যাপক হাসান আবদুল কাইয়ূম

জীবন মৃত্যু সৃষ্টি রহস্য

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ১৮ নভেম্বর ২০১৬

জীবন মৃত্যু সৃষ্টি রহস্য

পৃথিবীতে আগমন আল্লাহর বিধান অনুযায়ীই হয় আর আল্লাহর বিধান অনুযায়ী পৃথিবী থেকে চলে যাওয়াটাও হয়। আসা-যাওয়ার এই দোলায়মানতায় মানবজীবন অহর্নিশ অনিশ্চিতকালের মধ্যে অতিবাহিত করে। সাধের এই আলো-হাওয়ার পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে এই অকাট্য সত্যটাকে আমরা বেমালুম ভুলে থাকি। অথচ যে কোন মুহূর্তে বিনা নোটিসে মৃত্যুর ফেরেশতা হযরত আজরাইল আলায়হিস্্ সালাম জান কবজ করতে এসে হাজির হবেন। কথায় আছে; মরণ যদি থাকে বায়/দূর্বা বনে বাঘে খায়। আবার কেউ কেউ তো ঘুমের ঘোরেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। অমর কবি হযরত জালালউদ্দীন রুমী এক মৃত্যুর ঘটনা তুলে ধরেছেন তার কাব্যকর্মে, তিনি লিখেছেন : হিন্দুস্তানের এক ব্যক্তি জেরুজালেমে বাদশাহ্্ নবী হযরত সুলায়মান আলায়হিস্্ সালামের শাহী দরবারের সভাসদ ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর সময় এসে গেলে মৃত্যুর ফেরেশতা তার জান কবজ করতে এসে দেখতে পেলেন এই ব্যক্তির মৃত্যুর স্থানটি তো জেরুজালেমের বাদশাহ সুলায়মানের শাহী দরবার নয়। তার মৃৃত্যুর স্থান তার ভাগ্যলিপিতে লেখা আছে হিন্দুস্তানে অবস্থিত তার জন্মভূমিতে। ফেরেশতা তার অন্তরে অস্থিরতা সঞ্চারিত করলেন। বাদশাহ্্ সুলায়মান (আ.) ওই ব্যক্তির মধ্যে অস্থিরতা লক্ষ্য করে বললেন, তোমার এই অস্থিরতার কারণ কি? লোকটি বললেন, আমার জন্মভূমি হিন্দুস্তানে যাবার জন্য মনটা অস্থির হয়ে পড়েছে। বাদশাহ্্ সুলায়মান (আ.) দ্রুতগামী কার্পেটে (তখতে সুলায়মান) চড়ে তাকে তার জন্মভূমি হিন্দুস্তানে যেতে বললেন। লোকটি কার্পেটে আরোহণ করার সঙ্গে সঙ্গে চক্ষের পলকে কয়েক হাজার মাইল দূরে অবস্থিত তার জন্মভূমিতে নিয়ে এলো। লোকটি কার্পেট থেকে জন্মভূমির মাটিতে অবতরণ করলে ফেরেশতা সঙ্গে সঙ্গে লোকটির জান কবজ করলেন। মৃত্যুর ফেরেশতা হযরত আজরাইল আলায়হিস্ সালাম তাঁর নেতৃত্বে ফেরেশতাদের দ্বারা জান কবজের কর্মের আশ্বাস দেন। কুরআন মজিদে ইরশাদ হয়েছে : তিনিই (আল্লাহ্্) স্বীয় বান্দাদের ওপরে পরাক্রমশালী এবং তিনিই তোমাদের রক্ষক প্রেরণ করেন। অবশেষে যখন তোমাদের কারও মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন আমার প্রেরিতরা তার মৃত্যু ঘটায় এবং তারা কোন ত্রুটি করে না। (সূরা আন আম : আয়াত ৬১)। কারও মৃত্যুর সময় হলে তার মৃত্যু সংঘটিত হবেই। কুরআন মজিদে ইরশাদ হয়েছে, তোমরা যেখানেই থাকো না কেন মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবেই, এমনকি সুউচ্চ সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান করলেও। (সূরা নিসা : আয়াত ৭৮)। বিশ্বচরাচর আল্লাহ্্র কুদরতের অপূর্ব নিদর্শন। এতে রয়েছে ১৮ হাজার মাখলুকাত। চাঁদ-সূর্য আল্লাহর মহান কুদরতের নিদর্শন। কুরআন মজিদে ইরশাদ হয়েছে : সূর্য ও চন্দ্র আবর্তন করে নির্ধারিত কক্ষপথে তৃণলতা ও বৃক্ষাদি তাঁরই (আল্লাহ্্র) সিজদায় রত রয়েছে, তিনি (আল্লাহ) আকাশকে করেছেন সমুন্নত এবং স্থাপন করেছেন মানদ-, যাতে তোমরা সীমা লঙ্ঘন না কর মানদ-ে। (সূরা রহমান : আয়াত ৫-৮) সূরা কামারের ৪৯ ও ৫০ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে (আমি আল্লাহ) সব কিছু সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাপে আমার আদেশ তো একটি কথায় নিষ্পন্ন। চক্ষুর পলকের মতো। গত ১৪ নবেম্বর ২০১৬ সোমবার রাতে পূর্ণিমার চাঁদ বিরাট আকার ধারণ করে, যা উৎসাহী মানুষ অবলোকন করেছে। ৬৮ বছর পূর্বে চাঁদের এই রূপ অবলোকন করেছিল তখনকার মানুষেরা। এবারকার এই বিরাট আকৃতির চাঁদের শোভা দেখতে আমার একমাত্র পুত্র আরিফ বিল্লাহ্্ মিঠু আমাদের দশ তলা ভবনের ছাদে রাত ১টা পর্যন্ত বসে ছিল। সে একটি ব্যাংকের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার এবং স্বনামধন্য ছড়াকার। সে ছাদে বসে একটি ছড়া রচনা করেছে, সে লিখেছে, বিরাট বড়ো চাঁদটা দেখে/ মন হয়ে যায় ভালো। আজকে যেন অন্যরকম। লাগছে চাঁদের আলো। ৬১৭ খ্রিস্টাব্দের ১২ জিলহজ মক্কার কাফির মুশরিক নেতা আবু জাহল তার সাঙ্গোপাঙ্গদের নিয়ে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামকে চাঁদ দ্বিখ-িত করে তাঁর নবুওয়তের সত্যতা প্রমাণ করতে বললে প্রিয় নবী (সা.) চাঁদের দিকে অঙ্গুলি মুবারক দিয়ে ইশারা করলে দ্বাদশীর সেই চাঁদ দুই ভাগ হয়ে দুই দিকে বহুদূর পর্যন্ত গিয়ে স্থির হয়ে যায়। বেশ খানিকক্ষণ ওইভাবে দুই দিকে স্থির থেকে আবার একত্রিত হয়ে যায়। অধুনা বিজ্ঞান প্রমাণ পেয়েছে যে, চাঁদের এক বিশাল ফাটল রয়েছে যা প্রিয় নবী (সা.)-এর সময় সৃষ্টি হয়েছিল। এই সত্য অনুধাবন করে চাঁদে প্রথম অবতরণকারী নীল আর্মস্ট্রং ইসলাম গ্রহণ করেন। আর এক নভোচারী জেম্্স আরউইনও ইসলাম গ্রহণ করেছেন। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে- আর চাঁদ বিদীর্ণ হয়েছে। (সূরা কামার : আয়াত ১) কামার শব্দের অর্থ চাঁদ। লেখক : পীর সাহেব দ্বারিয়াপুর শরীফ, উপদেষ্টা, ইনস্টিটিউট হযরত মুহম্মদ (স.) সাবেক পরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
×