ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সুষ্ঠু সমাধান কাম্য

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ১৮ নভেম্বর ২০১৬

সুষ্ঠু সমাধান কাম্য

৬ নবেম্বর ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর ১০ দিন অতিবাহিত হলেও গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের সাঁওতালদের আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা কাটছে না। পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলা এবং স্থানীয় প্রভাবশালীদের হামলা ও লুটপাটের ভয়ে কয়েক শ’ সাঁওতাল কার্যত অবরুদ্ধ জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। জীবন-জীবিকার অনিবার্য প্রয়োজনে তাদের আয়-রোজগারের পথও প্রায় বন্ধ। বর্তমানে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। ত্রাণ দিতে এগিয়ে এসেছে বেসরকারী কয়েকটি সংস্থাও। তবে ভুক্তভোগী সাঁওতালদের দাবি, জীবনের সার্বিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা। উল্লেখ্য, রংপুর চিনিকলের ১ হাজার ৮৪২ একরের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের জমি অধিগ্রহণ করা হয় ১৯৬২ সালে। সেখানে সিংহভাগ জমি ছিল সাঁওতালদের। অল্প বিস্তর মুসলিম এবং হিন্দুদের জমিও ছিল। ক্রমাগত লোকসানের মুখে পড়ে চিনিকলটি ২০০৪ সালে কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। জমিতে আখচাষের পরিমাণও কমতে থাকে। অতঃপর এই জমির দিকে নজর পড়ে স্থানীয় প্রভাবশালী প্রতাপশালী, যাদের অধিকাংশ রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় লালিত পালিত। এই গোষ্ঠীটি বাপ-দাদার জমি ফেরত দেয়ার কথা বলে বিপুল অর্থের বিনিময়ে সাঁওতালদের বসতি স্থাপন করতে দেয় ইক্ষু খামারের জমিতে। সেখানে তারা বিক্ষিপ্তভাবে চাষাবাদও করছে। ৬ নবেম্বর শনিবার সন্ধ্যায় চিনিকল কর্তৃপক্ষ জমি পুনরুদ্ধারে চালায় উচ্ছেদ অভিযান। এতে পুলিশ ও প্রশাসনসহ চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী, সর্বোপরি রাজনৈতিক প্রভাব পরিপুষ্ট পূর্বে উল্লেখিত মহলটি একযোগে অংশগ্রহণ করে। অনেক সাঁওতালের ঘরবাড়ি লুটপাট ও জ্বালিয়ে দেয়া হয়। সাঁওতালদের পক্ষ থেকেও তীর-ধনুক দিয়ে পাল্টা আক্রমণের অভিযোগও আছে। তিনজন সাঁওতাল মারা যান পুলিশের গুলিতে। কয়েকজন পুলিশ আহত হন। হাতকড়া পরিহিত অবস্থায় কয়েকজন সাঁওতালকে চিকিৎসা দেয়ার খবরও আছে। এ নিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে সাঁওতালদের আসামি করে মামলা করা হলেও সাঁওতালদের কোন মামলা করতে দেয়া হয়নি। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ আছে। সাঁওতালদের অভিযোগ, যারা ওই জমিতে নিয়ে বসাল, তারাই আগুন দিল, গুলি করল, এ কেমন বিচার? সার্বিক বিবেচনায় প্রতীয়মান হয় যে, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে উচ্ছেদ অভিযানে কিছু বাড়াবাড়ি হয়ে থাকতে পারে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের ঘটনাটির সঙ্গে গোবিন্দগঞ্জের ঘটনাটির সবিশেষ মিল লক্ষণীয়। দুটোতেই ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সংসদ সদস্যসহ স্থানীয় নেতাদের প্রত্যক্ষ মদদ ও ইন্ধন রয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। আছে প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের বাড়াবাড়ির অভিযোগ। দুটো ঘটনাতেই হামলার শিকার অসহায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। বিশেষ করে জমি-জিরাত, ঘরবাড়ি, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি দখল ও লুটপাট। এতে করে যে দেশে-বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তির সমূহ ক্ষতি হচ্ছে, সে কথা বলাইবাহুল্য। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। শিল্পমন্ত্রী বলেছেন, ভূমিদস্যুরা সাঁওতালদের ব্যবহার করেছে। এতে স্বার্থান্বেষী মহলের যোগসাজশ থাকতে পারে। ঢাকায় সাঁওতাল নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে যোগাযোগমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতালদের বসতবাড়ি ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবেন। একই সঙ্গে তাদের আবাদকৃত ধান-পাট-কলাইয়ের ন্যায্য হিস্যাও দিতে হবে। সাহেবগঞ্জ সাঁওতালপল্লীতে যত তাড়াতাড়ি শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্থিতাবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়, ততই মঙ্গল। এজন্য সংক্ষুব্ধ সকল পক্ষকে আলোচনায় বসারও বিকল্প নেই।
×