ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নিয়ামত হোসেন

চক্ষু মেলিয়া

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ১৮ নভেম্বর ২০১৬

চক্ষু মেলিয়া

জগতজুড়ে কৌতূহল ! মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে মার্কিন মুল্লুকে যতখানি উৎসাহ-উদ্দীপনা, মার্কিন দেশের বাইরে তার চেয়ে কম নয়। এবারের নির্বাচনে এই ব্যাপারটা লক্ষ্য করা যায়। এবারের নির্বাচনে দেখা গেছে, বিশ্বব্যাপী উৎসাহ-উদ্দীপনা অনেকখানি বেশি। কে জিতবেন- সেটা নিয়ে হয়েছে অনেক জরিপ, অনেকের অভিমত মন্তব্যও দেখা গেছে। এসবই অবশ্য অনুমান। বলুন তো কে জিতবে- একজন অন্যজনের কাছে এমন প্রশ্ন যেমন করেছে, তেমনি অতিউৎসহী অনেকেই গিয়েছে জ্যোতিষী বা গণকের কাছে। আবার কোথাও কোথাও সাহায্য নেয়া হয়েছে মানবেতর প্রাণীদের কাছ থেকেও। চীনে এক বাঁদরও নাকি পূর্বাভাস দিয়েছে এ ব্যাপারে। ওদিকে রাশিয়াতেও এ ধরনের এক ঘটনা ঘটে। সেখানে ক্রাসনোই আরস্ক নগরীর কাছের এক চিড়িয়াখানায় এ ব্যাপারে ভবিষ্যত পূর্বাভাস দেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয় এক বাঘকে। লোকজন দুটো কুমড়ো রাখে কাছাকাছি। এক কুমড়োতে একজন প্রার্থীর নাম লেখা, অন্যটায় লেখা অপর প্রার্থীর নাম। তারপর ছাড়া হয় চিড়িয়াখানার ওই বাঘকে। যে কুমড়োটা সে বেছে নেবে সেই প্রার্থীই জয় হবেন- এ ধারণায় সেই আয়োজন করা হয়। যাই হোক, কুমড়ো যথাস্থানে- বাঘটাকে ছাড়া হলো। তারপর বাঘটা গিয়ে যে কুমড়োটা বেছে নিল- আমেরিকার নির্বাচনের ফল ঘোষণায় দেখা গেল সেই প্রার্থীই বিজয়ী হয়েছেন। অর্থাৎ ওই কুমড়োতে নামটি ছিল ট্রাম্পের। এ যুগে বিশ্ব রাজনীতি এবং একই সঙ্গে অর্থনীতির যে অবস্থা তাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট কে হবেন, তা নিয়ে বিশ্বব্যাপী আগ্রহ ও কৌতূহল থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু এবারের নির্বাচনে ছিল আরও বাড়তি কৌতূহল। বাঁদর বা বাঘকে পূর্বাভাস দেয়ার কাজে লাগানোর ব্যাপারটা সাধারণের কৌতূহল বা আগ্রহেরই অভিপ্রকাশ মাত্র। তবে এ ধরনের কাজ এই যে প্রথম হলো তা অবশ্য নয়। কিছুকাল আগে একবার বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনালে কে জিতবে তাই নিয়ে এক দেশে কাজে লাগানো হয়েছিল একটি অক্টোপাসকে। এ সবই মানুষের কৌতূহল মেটানোর জন্য। আমাদের এখানে কিছুকাল আগেও দেখা যেত ফুটপাথে টিয়াপাখি নিয়ে বসে আছে এক ব্যক্তি। টাকা দিলে ওই পাখি ভাগ্য গণনা করে দেবে- এমন কথা বলা হতো। তবে কেউ কেউ আগ্রহ নিয়ে দেখত। ইদানীং এ ধরনের দৃশ্য তেমন বেশি দেখা যায় না। ট্রাম্পের নির্বাচনে দাঁড়ানো, তার নানান ভাষণ-বক্তৃতা বিশ্ববাসীর মধ্যে যেমন কৌতূহল সৃষ্টি করেছে, তেমনি আগ্রহ ও কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে তার বিজয়েও। এই কৌতূহল বা আগ্রহের এটাই শেষ নয়। তিনি আগামীতে কি করবেন তা নিয়েও নানান আগ্রহ, অভিমত এবং জল্পনা রয়েছে। তবে কোন বাঘ-সিংহকে এ ব্যাপারে পূর্বাভাস দানের দায়িত্ব দেয়ার কোন খবর জানা যায়নি। দেখা যাক কী হয়! নালায় কুমির! দিন কয়েক আগের ঘটনা। প্রবল বৃষ্টিপাত এবং সেজন্য বন্যার পানিতে অনেক এলাকা তলিয়েছে শ্রীলঙ্কার এক এলাকায়। নদীর পানি রাস্তার পানিতে মিশে সয়লাব হয়ে গেছে পুরো এলাকা। তারপর একদিন বৃষ্টি থামল। আস্তে আস্তে নামতে শুরু করল বন্যার পানি। জেগে উঠল রাস্তাঘাট। রাস্তার পাশে ডুবে যাওয়া নালার পানিও কমে গেল আস্তে আস্তে। কিন্তু এ কী! পানি কমতেই দেখা গেল নালার ভেতর পড়ে আছে ইয়া মস্ত এক কুমির। সাত ফুট লম্বা। কুমিরটি বিরাট। ছোট নালা। নড়তেও পারছে না। কৌতূহলী লোক জুটল সেখানে। মহা বিপদ! এটি এলো কোত্থেকে! একে তো ডেকে আনা হয়নিÑ এই খালটি কেটে কেউ কুমিরটি এখানে আনেনি। লোকজন অবাক। শেষে উদ্যোগ নেয়া হলো প্রাণীটাকে সাবধানে সেখান থেকে সরানোর। নানান কায়দায় চেষ্টাও করা হলো; কিন্তু অসম্ভব। টনখানেক ওজনের ওই প্রাণীটিকে ওখান থেকে নড়ানোও কারও পক্ষে সম্ভব হলো না। ছুটে এলো কর্তৃপক্ষের লোকজন। সব দেখে আনা হলো বিশাল ক্রেন। তারপর ক্রেনে বেঁধে কুমিরটাকে তুলে নিয়ে ছাড়া হলো তার বাসস্থান নদীতে। সম্ভবত হাঁফ ছেড়ে বাঁচল কুমিরটি। সেই সঙ্গে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল সেখানকার লোকজনও। এদেশে নদীতে এককালে অনেক কুমির ছিল। বিশেষ করে খুলনা বাগেরহাট এলাকার সুন্দরবনের নদীগুলোতে। সেগুলোর সংখ্যা অনেক কমে গেছে। কুমির যেমন মানুষকে কামড়ায়, তেমনি অনেক দেশের মানুষ কুমিরের মাংসও খায়। সেজন্য এখন অনেক দেশে কুমিরের খামার গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশেও চাষ হচ্ছে কুমিরের। এ দেশে যত বন্যপ্রাণী ছিল এক সময়, জলজ প্রাণী কুমির, শুশুক যত ছিল, মানুষেরই অত্যাচারে সে সবের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। অবশিষ্ট যা আছে তা যদি রাখতে না পারা যায়, যদি এদের সংখ্যা দ্রুত বাড়ানো না যায়, তাহলে শুধু কুমিরের জন্যই নয়, বিলুপ্ত প্রায় সকল প্রাণীর জন্য আফসোস করতে হবে, যা হবে কুম্ভীরাশ্রু বর্ষণেরই শামিল।
×