ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুল কাইয়ুম আর নেই

প্রকাশিত: ০৬:২০, ১৮ নভেম্বর ২০১৬

বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুল কাইয়ুম আর নেই

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ বীর মুক্তিযোদ্ধা, খুলনা নাগরিক ফোরামের চেয়ারপার্সন ও খুলনা শিশু ফাউন্ডেশনের সাবেক মহাসচিব এবং খুলনাবাসীর অতি পরিচিত, প্রিয় মুখ শেখ আব্দুল কাইয়ুম (৬৬) আর নেই। বুধবার রাত সাড়ে ১০টায় তিনি খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি...রাজিউন)। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েসহ বহু স্বজন-শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরীর শহীদ হাদিস পার্কে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসন, ডিআইজি রেঞ্জ, জেলা ও খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ, খুলনা সিটি কর্পোরেশন, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পুষ্পমাল্য দিয়ে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। সেখানে মরহুমের জানাজা শেষে তাঁর মরদেহ টুটপাড়া কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে সকালে তাঁর মরদেহ হাসপাতাল থেকে ২নং কাস্টমস ঘাটের বাসবভনে নেয়া হয়। সেখান থেকে তাঁর মরদেহ প্রথমে নাগরিক ফোরামের কার্যালয় ও পরে শিশু হাসপাতালে নেয়া হয়। আজ শুক্রবার বাদ আছর ২নং কাস্টমস ঘাট এলাকার নূর মসজিদ ও ওমর মসজিদে মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিল আয়োজন করা হয়েছে। শহীদ হাদিস পার্কে মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুল কাইয়ুমের মরদেহে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে জানাজায় অংশ নেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মোঃ আব্দুস সামাদ, তালুকদার আব্দুল খালেক এমপি, আলহাজ মিজানুর রহমান মিজান এমপি, কুয়েটের উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর, মুক্তিযুদ্ধকালীন খুলনা অঞ্চলের বিএলএফ বাহিনী প্রধান ও বাগেরহাট জেলা পরিষদ প্রশাসক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামরুজ্জামান টুকু, কেসিসি’র ভারপ্রাপ্ত মেয়র আনিছুর রহমান বিশ্বাস, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নগর শাখার সভাপতি অধ্যাপক আলমগীর কবির, বিভিন্ন পর্যায়ের মুক্তিযোদ্ধা, পুলিশ ও প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তা, বেসরকারী উন্নয়ন সংগঠনের নেতা, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকসহ সর্বস্তরের মানুষ। জানা গেছে, শেখ আব্দুল কাইয়ুম ১৯৫০ সালের ১৫ ডিসেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি খুলনা মহানগরীর ২নং কাস্টমঘাট রোডের বাসিন্দা। তার পিতা মৃত শেখ আব্দুল কাদের, মাতা মৃত আমিরা বানু বেগম। তিনি নগরীর সেন্ট যোসেফস হাইস্কুল থেকে ১৯৬৬ সালে এসএসসি পাস করেন। ১৯৭২ সালে আযম খান সরকারী কমার্স কলেজ থেকে বিকম পাস করেন। স্কুল জীবন থেকে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি ১৯৬২ সালের কুখ্যাত হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬৬ সালে ৬দফার আন্দোলন, ১৯৬৯সালে গণঅভ্যুত্থান অংশ গ্রহণ করেন। ‘৬৯ তিনি জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সদস্য ছিলেন তিনি। একই বছরে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তিনি খুলনার রেডিও সেন্টারে অভিযান এবং কপিলমুনি যুদ্ধসহ নানা স্থানের যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে ২৩ মার্চ তিনি খুলনার শহীদ হাদিস পার্কে প্রথম স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেন। ১৯৭৩ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলে (জাসদ) যোগদান করেন। প্রায় দুই যুগ জাসদের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার পর তিনি পুনরায় আওয়ামী লীগে ফিরে আসেন। মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুল কাইয়ুম ছাত্র জীবন শেষে রাজনীতির পাশাপাশি সাপ্তাহিক দেশের ডাক, দৈনিক গণকণ্ঠ ও সর্বশেষ স্থানীয় দৈনিক তথ্য পত্রিকায় কাজ করেছেন।
×