ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রবিবার থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৮ নভেম্বর ২০১৬

রবিবার থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী রবিবার থেকে সারাদেশে শুরু হচ্ছে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা। পঞ্চম শ্রেণীর এ সমাপনী পরীক্ষায় গত কয়েক বছর ধারাবাহিকভাবে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও এবার গতবারের থেকে পরীক্ষার্থী কমেছে ২৪ হাজার ২২৬। এবার ৩২ লাখ ৩০ হাজার ২৮৮ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেবে। এদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, মন্ত্রিসভায় পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা চলবে। তবে তা কবে নাগাদ সিদ্ধান্ত হতে পারে তা তিনি নিশ্চিত নন। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান এসব কথা বলেন। এ সময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ আসিফ-উজ-জামান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ আলমগীর এবং মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রী জানান, গত বছর ৩২ লাখ ৫৪ হাজার ৫১৪ শিক্ষার্থী এ পরীক্ষার জন্য নিবন্ধন করেছিল। সেই হিসাবে এবার পরীক্ষার্থী কমেছে ২৪ হাজার ২২৬। হঠাৎ করে পরীক্ষার্থী কমে যাওয়ার কোন কারণ জানাতে পারেননি মন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে প্রথমে তিনি পরীক্ষার্থী বাড়ার কথা বললেও পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে তথ্য সংশোধন করেন। আগামী রবিবার থেকে ২৭ নবেম্বর দেশের ৭ হাজার ১৯৪ এবং বিদেশের ১১ কেন্দ্রে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। জানা গেছে, এর আগে ২০১৪ সালে পরীক্ষার্থী ছিল ৩০ লাখ ৯৪ হাজার ২৬৫, ২০১৩ সালে ছিল ২৯ লাখ ৫০ হাজার ১৯৩, ২০১২ সালে ছিল ২৯ লাখ ৬৯ হাজার ৪০২, ২০১১ সালে ২৬ লাখ ৩৭ হাজার ২৩৫, ২০১০ সালে ২২ লাখ ৫ হাজার ১৯৭ এবং ২০০৯ সালে ছিল ১৯ লাখ ৭৯ হাজার ৮৯৫। মন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক সমাপনীতে এবার ১৩ লাখ ৪৬ হাজার ৩২ ছাত্র এবং ১৫ লাখ ৮৪ হাজার ৫৪১ ছাত্রী পরীক্ষা দেবে। আর ইবতেদায়ীর দুই লাখ ৯৯ হাজার ৭১৫ পরীক্ষার্থীর মধ্যে এক লাখ ৫৭ হাজার ৩১৯ ছাত্র এবং এক লাখ ৪২ হাজার ৩৯৬ ছাত্রী। প্রাথমিক সমাপনীতে দুই হাজার ৮৫৭ এবং ইবতেদায়ীতে ৯০ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন (অটিস্টিক) পরীক্ষার্থী অংশ নেবে। এবার পরীক্ষার্থী কেন কমল? এ প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, কমবে বা বাড়বে সেটা ছাত্রসংখ্যার ওপর নির্ভর করবে। কোন কারণে যদি কোন জায়গায় কম হয়, অন্য কোন কারণ এর মধ্যে নেই। কোন কারণে জন্মহার কমে যায়, এমনও হতে পারে হিসাব-নিকাশের ক্ষেত্রে। আসলে লোকসংখ্যা বাড়ছে, দৈনন্দিন চাহিদা বাড়ছে, তাহলে এখানে (পরীক্ষার্থী) কমল কেন? ধরে নিতে হবে ব্যবস্থাপনার মধ্যে এখন স্বচ্ছতার মাত্রা বোধ হয় বাড়ছে, এ কারণে কোন জায়গায় কোন ভুলত্রুটি থাকলে সংশোধনীর আওতায় চলে আসছে, আমার মনে হয় সে রকমও হতে পারে। এরপরও সাংবাদিকরা সুনির্দিষ্ট কারণ জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, গবেষণামূলক কোন বিষয় দরকার নেই। আমার মনে হয় হিসাব-নিকাশের ব্যাপার হতে পারে, এর মধ্যে অন্য কোন কিছু নেই। বিভিন্ন জায়গা থেকে তথ্য নিয়ে সে তথ্য দিয়েছি। কমবেশির কারণ আমাদের কাছে আসেনি। আমরা যা তথ্য চেয়েছি সে তথ্য পেয়েছি, এখানে তাই দিলাম। প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে ৬৪ জেলাকে বিশেষ আটটি অঞ্চলে ভাগ করে আট সেট প্রশ্নে গত বছর থেকে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা নিচ্ছে সরকার। সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, দুর্গম এলাকার ২১০ কেন্দ্রেও বিশেষ ব্যবস্থায় প্রশ্ন পাঠানো হয়েছে। এছাড়া প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা থাকবে। যার নম্বর ০২৯৫১৫৯৭৭ এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের নম্বর ০২৫৫০৭৪৯৩৯, ০১৯৭৯০৮৮৭১৯, ০১৭১২৪১৩১০০ এবং ই-মেইল : (ফফবংঃধনফঢ়ব@মসধরষ.পড়স)। মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত পরীক্ষা চলবে ॥ মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা চলবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান। সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রাথমিক ও অষ্টম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা হচ্ছে। যতক্ষণ পর্যন্ত ওখান থেকে সিদ্ধান্ত না হয় ততদিন এটা চলবে। প্রাথমিক শিক্ষা এখন পঞ্চম না অষ্টম শ্রেণী পর্যন্তÑ এ প্রসঙ্গ তোলা হলে মন্ত্রী বলেন, ২০১০ সালের শিক্ষানীতিতে পরিষ্কার করে বলা আছে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা বলে গণ্য হবে। এটার বিষয়ে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু বাস্তবায়নটা এখনও হয়নি। আমরা টার্গেট নিয়েছি ২০১৮ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে কিছু কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও হয়নি। অর্থাৎ মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে, সেখানে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে। আশা করছি শীঘ্রই এ বিষয়ে জানাতে পারব, কখন এটা হচ্ছে। মন্ত্রী আরও বলেন, এখনকার প্রাথমিকের বিজনেসটা পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত, আবার আমাদের ৬-৭শ’ স্কুলের মধ্যে ষষ্ঠ, সপ্তম এবং অষ্টম আমরা খুলেছি। সেটাও আমরা চালাচ্ছি। আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সমর্পণ করলে আমরা সেটা পাব। এখনও কেউ সমর্পণ করেনি। প্রক্রিয়া চলছে, কারিকুলাম তৈরি হচ্ছে, এ্যাসেসমেন্ট তৈরি হচ্ছে। আমাদের আওতায় এলে কী পরিমাণ আর্থিক সংশ্লিষ্টতা ও অবকাঠামোর ব্যাপার আছেÑ এগুলো চুলচেরা আলোচনা হয়ে মন্ত্রিসভায় আসবে। জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণীতে উন্নীতকরণের জন্য গত জুলাইয়ে দুই মন্ত্রণালয় একসঙ্গে বসে প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তরের কথা জানানো হয়। এর বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, উনারা (শিক্ষা মন্ত্রণালয়) পাঠাবেন, ওখান (মন্ত্রিসভা) থেকে অনুমোদন হলে হবে, এখনও আসেনি। এখানে এমন নয় যে, শিক্ষানীতি বাস্তবায়িত হলে প্রাথমিকের কোন অঙ্গ উনার কাছে (শিক্ষামন্ত্রী) চলে যাবে। প্রাথমিকের কলেবর বৃদ্ধি পাবে। উনাদের কিছু অংশ ছেড়ে দেবেন, আমরা পাব। উনি আলাপ-আলোচনা শুরু করেছেন। আশা করছি ২০১৮ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন হবে। সময়সূচী ॥ প্রাথমিক সমাপনীতে ২০ নবেম্বর রবিবার ইংরেজী, ২১ নবেম্বর বাংলা, ২২ নবেম্বর বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, ২৩ নবেম্বর প্রাথমিক বিজ্ঞান, ২৪ নবেম্বর ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা ও ২৭ নবেম্বর গণিত। ইবতেদায়ী সমাপনীতে ২০ নবেম্বর ইংরেজী, ২১ নবেম্বর বাংলা, ২২ নবেম্বর বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, ২৩ নবেম্বর আরবি, ২৪ নবেম্বর কোরান ও তাজবীদ এবং আকাঈদ ও ফিকহ, ২৭ নবেম্বর গণিত।
×