ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সাক্ষাতকারে বিজয় শেষাদ্রী

রাজনৈতিক দলগুলো সাম্প্রদায়িকতাকে জিইয়ে রাখে

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১৮ নভেম্বর ২০১৬

রাজনৈতিক দলগুলো সাম্প্রদায়িকতাকে জিইয়ে রাখে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হলো আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন ঢাকা লিট ফেস্ট ২০১৬। এ সাহিত্য সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন ২০১৪ সালে সাহিত্যে পুলিৎজার পুরস্কারজয়ী ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন কবি বিজয় শেষাদ্রী। বৃহস্পতিবার লিট ফেস্টের উদ্বোধনী দিনে কথা হয় এই কবির সঙ্গে। বিশ্বব্যাপী জেগে ওঠা সাম্প্রদায়িকতা, বাংলাদেশের সাহিত্যের ইংরেজী অনুবাদসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন তিনি। কবিতায় শান্তির বাণী ছড়ানো এ কবি বাংলাদেশ ও ভারতের চলমান সাম্প্রদায়িকতা প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশে হিন্দু ও বৌদ্ধরা ধর্মীয় সংখ্যালঘু; ভারতে হিন্দুরা সংখ্যাগুরু। দু’দেশেই সাম্প্রদায়িকতা মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। বাংলাদেশের এ সাম্প্রদায়িক হামলার বিষয়টি একটি লেখা পড়ে জেনেছি। আমি মনে করি, দুই দেশের মানুষের ধর্মীয় সচেতনতা রয়েছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের স্বার্থেই জিইয়ে রাখে সাম্প্রদায়িকতাকে। ঢাকায় আগমন প্রসঙ্গে বিজয় শেষাদ্রী বলেন, বাংলাদেশ সম্পর্কে অনেক শুনেছি। তবে এদেশের সাহিত্য সম্পর্কে খুব জানা হয়নি। নিজেদের সাহিত্য সম্পর্কে জানাতে বাংলাদেশের লেখক ও প্রকাশকদের ইংরেজীসহ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি বাংলা পড়তে পারি না। তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছাড়া আর কোন বাঙালী লেখক বা কবির লেখা আমার পড়া হয়ে উঠেনি। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাহিত্য সম্পর্কে জানারও তেমন সুযোগ নেই। তবে বাংলাদেশের সাহিত্য ইংরেজীসহ অন্যান্য ভাষায় অনূদিত হওয়া প্রয়োজন। তাহলে অন্য দেশের সাহিত্যানুরাগীরাও এ দেশের সাহিত্য সম্পর্কে জানতে পারব। সম্প্রতি শেষ হওয়া মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়েও নিজের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে বলেন, এটা মার্কিনীদের জন্য একটি ‘শকিং’ নির্বাচন। কেউই আশা করেননি, রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনে জয়লাভ করবেন। রসিকতার সুরে তিনি বললেন, আমি তো মনে করি, ট্রাম্প নিজেই মনে করেননি এবারের নির্বাচনে তিনি জিততে পারবেন! তবে যেহেতু তিনি নির্বাচিত হয়েছেন, দেখা যাক শেষ পর্যন্ত তিনি কেমন দেশ চালান। প্রথমবারের মতো এই কবি এসেছেন বাংলাদেশে। অবস্থান করছেন রাজধানীতে। ইতোমধ্যে ঢাকা শহরে খানিকটা সময় ঘুরেও বেড়িয়েছেন। এ প্রসঙ্গে বলেন, দারুণ এক শহর ঢাকা। মানুষগুলো প্রাণপ্রাচুর্য্যে ভরা। সব সময়ই ছুটছেন তারা, তবে নেই ক্লান্তি। মঙ্গলবার দিন এসেছি। বুধবার দিন নৌকায় চড়ে ঘুরেছি তুরাগ নদী। দারুণ লাগছে এখানে এসে। ঢাকা লিট ফেস্ট প্রসঙ্গেÑ খুব সুন্দর পরিবেশ। চারপাশে সাহিত্য নিয়ে বিপুল আয়োজন! এ ধরনের আয়োজন বাংলাদেশের সাহিত্যকে বহির্বিশ্বে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে। সে সঙ্গে এদেশের পাঠকরাও অন্যান্য দেশের সাহিত্য সম্পর্কে ভালভাবে জানতে পারবে। বিজয় শেষাদ্রী ‘থ্রি সেকশন’ কাব্যগ্রন্থের জন্য ২০১৪ সালে সাহিত্যে পুলিৎজার পুরস্কার অর্জন করেন। তাঁর জন্ম ১৯৫৪ সালে ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে। পাঁচ বছর বয়সে মা-বাবার সঙ্গে পাড়ি জমান আমেরিকায়। সেখানকার ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটিতে রসায়নের অধ্যাপক ছিলেন তাঁর বাবা। বিজয় শেষাদ্রী বেড়ে উঠেছেন ওহাইওর কলম্বাস এলাকায়। গ্র্যাজুয়েশন এবং ভাষা ও সাহিত্যে পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে। বর্তমানে নিউইয়র্কের সারা লরেন্স কলেজ অব লিবারাল আর্টসে তিনি কবিতা এবং ননফিকশন বিভাগে শিক্ষাকতা করেন। বিজয় শেষাদ্রী কবিতা, প্রবন্ধ, সাহিত্য সমালোচনা প্রকাশ করেছে অগ্নি, বুলেভার্ড, এপিফেনি, দ্য নেশন, দ্য নিউইয়র্কার, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, দ্য প্যারিস রিভিউ, শেনানডোয়াহ, সাউথওয়েস্ট রিভিউ, দ্য থ্রিপেনি রিভিউ, ভার্স, ওয়েস্টার্ন হিউম্যানিটিস রিভিউসহ আরও অনেক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পত্রিকা।
×