ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সব্যসাচী দাশ

প্যাটেল ও কিডম্যানের লায়ন

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ১৭ নভেম্বর ২০১৬

প্যাটেল ও কিডম্যানের লায়ন

পিতৃহীন দরিদ্র্য পরিবারের ছেলে সারো ব্রেয়ারলি। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে এক ভয়ঙ্কর ঘটনায় ট্রেনস্টেশনে হারিয়ে ফেলেন মা ও পরিবারকে। মা ও ভাইকে খুঁজতে নিজের অজান্তে ভারতের মধ্যপ্রদেশ থেকে ট্রেনে চড়ে কলকাতায় চলে আসে সারো। ঠিক ঠাক নাম ঠিকানা বলতে না পারায় শেষে লস্ট বয় হিসেবে ঠাঁই হয় তার অনাথ আলয়ে। পরবর্তীতে এক অস্ট্রেলিয়ান ভারতীয় দম্পতি দত্তক নেন সারোকে। সারো কলকাতার অনাথ আশ্রম থেকে চলে যায় অস্ট্রেলিয়ায়। নতুন অভিভাবকের সঙ্গে। এবং বড় হতে থাকে ওই দম্পতির সংসারে, অস্ট্রেলীয় সমাজ সামাজিকতা ও সংস্কৃতির বলয়ে। কিন্তু সারোর বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে মনের ভেতর তৈরি হতে থাকে শূন্যতা। দিন দিন এই শূন্যতা তাকে গ্রাস করতে থাকে। শীতল ভূমি অস্ট্রেলিয়ায় নিজেকে ভীষণভাবে নিঃসঙ্গ অনুভব করে। প্রায়ই বুকের ভেতর ছিঁড়ে আসা নারির টান অনুভব করে। কখন কখন আবছা ছায়া তার স্মৃতির ধুলো পরিষ্কার করে। স্মৃতিতে ভেসে আসে মাতৃভূমি ও মায়ের মুখ। দীর্ঘ নিঃশ্বাস দিন দিন দীর্ঘ হতে থাকে তার। অন্যদিকে মহাসমুদ্রের এই পাড়ে হারিয়ে যাওয়া ছোট্ট সন্তানকে অনবরত খুঁজে ফেরে ছেলেহারা এক দুখি মা। কোথায় আছে, কেমন আছে, বেঁচে আছে না মরে গেছে? এমন সব প্রশ্ন মায়ের মনকে সবসময় তাড়িত করে। সারো যখন পঁচিশ বছরের লেখাপড়া জানা টগবগে যুবক। তখন সে আর তার আজন্ম দুঃখ বইতে পাড়ে না। খুঁজতে শুরু করে গর্ভধারিণীকে। কিন্তু কীভাবে? জ্ঞান-বিজ্ঞানের বদৌলতে ইন্টারনেট ও সার্চইঞ্জিন গুগলের আর্থের মাধ্যমে।উপগ্রহের সাহায্যে তচনচ করে ফেলেন জন্মভূমির জনপদ। এসব কোন কাল্পনিক গল্প নয়। এটা সত্য। জীবনের মতোই সত্য। এমনি সত্য ঘটনার উপন্যাস অবলম্বনে হলিউডে নির্মিত হয়েছে, ‘লায়ন’ এ লঙ ওয়ে হোম চলচ্চিত্র। অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা ও ব্রিটেনে আলাদা আলাদা তারিখে মুক্তি পেতে যাচ্ছে এই চলচ্চিত্র। ছবিটির মূল চরিত্র সারো ব্রেয়ারলির নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্র সøামডগ মিলিনিয়রের অভিনেতা দেব প্যাটেল ও একাডেমি এওয়ার্ড জয়ী অভিনেত্রী নিকোল কিডম্যান। দীর্ঘ সময় নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন এই ব্রিটিশ অভিনেতা। লম্বা চুল, শরীরের ওজন, অস্ট্রেলিয়ান একসেন্টে ইংরেজী বলা। সবমিলে বেশ হাড় ভাঙ্গা শ্রম দিতে হয়েছে তাকে। ছবির শূটিং হয়েছে অস্ট্রেলিয়া ও কলকাতায়। কলকাতার অংশে কিডম্যান ছিলেন না। ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান অংশে। ছবিটি পরিচালনা করেছেন গ্রেথ ডেভিস। প্রযোজনা করেছে ‘দ্য কিংস স্পিচখ্যাত অস্ট্রেলিয়ান সি-স ফিল্ম। স্বামী পরিত্যক্ত, সন্তান বিছিন্ন এক দুখি মায়ের অনাবরত জীবন সংগ্রাম। আর দরিদ্র পরিবারে জন্ম উন্নত দেশে সুশিক্ষায় বেড়ে উঠেও মায়ের মুখ ভুলতে না পারার মর্মস্পর্শী বিষণœতা এই চলচ্চিত্রের উপজীব্য।
×