ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চাই সামাজিক প্রতিরোধ

কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার থেকে

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ১৭ নভেম্বর ২০১৬

কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার থেকে

স্বাগত আদিত্য ‘অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ পৃথিবীতে আজ’। হতাশাগ্রস্ততা, অসহায়ত্বতা, ভয় ও অন্ধকারের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের জীবন। সাম্প্রদায়িকতা সংখ্যালঘু মানুষের মনে ভয়, আতঙ্ক ও দ্বিধার সৃষ্টি করছে। অথচ বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আবহমানকাল থেকেই এখানে হিন্দু, মুসলমান, খ্রীস্টান, বৌদ্ধ সম্প্রদায় পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব, মৈত্রী ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ। এ সম্প্রীতির বন্ধনে ফাটল ধরানোর জন্য নানা সময়ে কিছু অপরিণামদর্শী, ষড়যন্ত্রকারী, নির্বোধ, সাম্প্রদায়িক লোক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে কিন্তু শেষ পর্যন্ত সফল হতে পারেনি। সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরসহ সিরাজগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও, নেত্রকোনা, নওগাঁ এবং সর্বশেষ চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে যা সত্যি খুবই দুঃখজনক। ধর্মের কথিত অবমাননামূলক ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত যা এতদূর পর্যন্ত গড়িয়েছে। কিন্তু যে হিন্দু যুবককে ঘটনাটির জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, তার শিক্ষাগত যোগ্যতা মাত্র তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত যা ফটোশপের মাধ্যমে ব্যঙ্গচিত্র তৈরির মতো দক্ষতাকে সমর্থন করে না। তার পরও ঘটনা তদন্তের জন্য তাকে গ্রেফতার করা হয়। এখন প্রশ্ন হলো যুবক যদি ঘটনাটি ঘটিয়েও থাকে তবে তার দায়ভার কি তার সম্প্রদায়ের সবাই গ্রহণ করবে? যদি তা না হয় তবে কেন এই বর্বরতা? আবার গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে একটি ধর্মান্ধ গোষ্ঠী এই সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার পাঁয়তারা করছে যা খুবই উদ্বেগের বিষয়। সংখ্যালঘুদের মূর্তি ও মন্দির ভাংচুর, বাড়িঘর অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, সম্পত্তি দখল, ভীতির সঞ্চার করে দেশের অভ্যন্তরে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি, বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতেই অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে এ ধরনের ঘটনাগুলো ঘটানো হচ্ছে। তবে আশার কথা, চলমান নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা দমনে সরকারও কঠোর অবস্থান নিচ্ছে। ইতোমধ্যে আক্রান্ত এলাকাগুলোতে শুরু হয়েছে অপরাধবিরোধী অভিযান, যেখানে সমন্বয় করা হয়েছে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। সঙ্গে সঙ্গে সচেতন জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে, গড়ে তুলতে হবে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসবিরোধী সামাজিক প্রতিরোধ। সভ্যতার উৎকর্ষের এই যুগে সাম্প্রদায়িক হামলার মতো জঘন্য অপরাধ আমাদের বর্বর অসভ্য যুগের কথাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। তাই বিকশিত সভ্যতাকে ধরে রাখার জন্য সবাইকে পারিবারিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় অনুশাসনগুলো মেনে চলতে হবে। ‘ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করা’, ‘অহিংসা পরমধর্ম’, ‘জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর’, এ সকল নৈতিক বা ধর্মীয় অনুশাসনগুলো শুধু আমাদের জানলেই চলবে না, অন্তর দিয়ে ধারণও করতে হবে। তবেই সমাজে সকল নৈরাজ্যের অবসান ঘটবে এবং শান্তি বিকশিত হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর থেকে
×