ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জিতেন্দ্র কুমার সিংহ

সংখ্যালঘুরা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তি

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ১৭ নভেম্বর ২০১৬

সংখ্যালঘুরা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তি

আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে পরিচিত। আবহমান কালের ইতিহাসই সাক্ষী যে, বিভিন্ন ভাষার, ধর্মের, বর্ণের ও সংস্কৃতির মানুষ একত্রে বসবাস করে আসছে। এদেশে বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান সবারই পারস্পরিক সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ বহুল প্রচলিত। সকলের সম্প্রীতিমূলক পরিবেশই বাংলার সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে। ব্রিটিশরা শোষণ ও শাসনের কর্তৃত্ব পাওয়ার স্বার্থে এবং অতি সহজে তাদের আকাক্সক্ষা পূরণের জন্য এ সম্প্রীতি ভাবের মধ্যে ছেদ ঘটানোর চেষ্টা করে সফল হয়। কিন্তু তাদের এ ডিভাইড এ্যান্ড রুল পলিসির ফলে পারস্পরিক অবিশ্বাসের জন্ম হলেও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হবার ভূরি ভূরি প্রমাণ ইতিহাসে রক্ষিত আছে। ব্রিটিশদের সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক কুরাজনীতির ফলে ১৯৪৬ সালে অবিভক্ত বাংলায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রায় এক বছরের মধ্যেই বাংলা বিভক্ত হয়। কিন্তু সাম্প্রদায়িক পাকিস্তান সরকার প্রায় দুই যুগ চেষ্টা করেও লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে শতভাগ সফল হতে পারেনি। ১৯৭১ সালে তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। মুক্তিযুদ্ধে ভাষা-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে কতিপয় দালাল ব্যতীত সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অংশগ্রহণ করেছে। তারই ফলে স্বাধীনতার পর আবারও বাংলার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সুদৃঢ় হয়। ক্ষমতার বাইরে ও ভেতরে অবস্থানকারীদের মধ্যে কতিপয় কূচক্রীর দ্বারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা করা হয়েছে বার বার। কিন্তু তারা সফল হতে পারেনি। তারপরও স্বার্থান্বেষী মহল থেমে নেই। অপরিণামদর্শী এ মহল এমনভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের বীজ রোপণ করে রেখেছে যেন সমূলে উপড়ে ফেলা যায়নি। অথচ তা করা সম্ভব। সাম্প্রতিককালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরসহ বিচ্ছিন্নভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর প্রতিক্রিয়াশীল কুচক্রীমহল যেভাবে নির্যাতন করেছে, যাদের ইন্ধনে করেছে এবং মূল ঘটনাপ্রবাহের মোড় ঘুরানোর অপচেষ্টা হচ্ছে, তা কোন দেশের জন্য শুভ বার্তা বয়ে আনতে পারে না। একজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনাটা দেশের মানুষের জন্যে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনকই নয়, লজ্জাজনকও। মন্ত্রী এখনও নিজেকে পুরোপুরি নির্দোষ প্রমাণ করতে পারেননি। স্বার্থান্বেষী-কুচক্রী-অপরিণামদর্শী গডফাদার যারা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্টের সঙ্গে জড়িত, তাদের সংখ্যা অতি নগণ্য। এরাই আসলে সংখ্যালঘু। তারা নানা অপপ্রচারের মাধ্যমে সহজ-সরল সাধারণ মানুষের মনে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করে দেয়। আর ভাল মানুষ যাঁরা তাঁদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই নিজ নিজ মানসম্মান রক্ষার অজুহাতে সরব না হওয়া, প্রশাসনের এক উল্লেখযোগ্য অংশের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে শিথিলতা এবং নির্যাতিতদের মানসিক শক্তির ঘাটতির কারণে এসব ঘটনা ঘটে থাকে। এ দেশে ধর্মীয় সম্প্রদায়গত বিবেচনায় সংখ্যালঘুদের ভাবতে হবে যে- দেশান্তর ও নিরাপত্তা প্রদানকারীদের সাহায্য-সহযোগিতা সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায় নয়। কেবল প্রতিকার না চেয়ে প্রতিরোধের চিন্তাও মাথায় রাখা উচিত। দেশের সর্বস্তরের মানুষকে সচেতন করার দায়িত্ব যাঁদের, তাঁদেরও এগিয়ে আসা উচিত। শুধু বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে এবং মানববন্ধন করে সমস্যার স্থায়ী সমাধান কোনদিনই সম্ভব নয়। আমাদের সবার মনে রাখা উচিত সংখ্যালঘুদের প্রায় সবাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক।
×