ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ রফিকুল ইসলাম

সম্প্রীতি বনাম অপরাজনীতি

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ১৭ নভেম্বর ২০১৬

সম্প্রীতি বনাম অপরাজনীতি

সাম্প্রদায়িকতাকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়, প্রথমত, ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা এবং দ্বিতীয়ত, জাতিগত সাম্প্রদায়িকতা। ঘটনাবলী পর্যবেক্ষণ করলে দু’ধরনের সাম্প্রদায়িকতাই এদেশে খুঁজে পাওয়া যাবে। সাম্প্রদায়িকতা বা সাম্প্রদায়িক হামলা এদেশে নতুন ঘটনা নয়। উপমহাদেশের আবহমানকালের সমাজ ব্যবস্থা এবং ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে তা খুবই পুরনো বিষয়। কখনও শাসক গোষ্ঠী বা সমাজপতিদের উগ্র ধর্মীয় চেতনার আগ্রাসন বা কখনও বিভিন্ন অঞ্চলে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় দ্বারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে অত্যাচার এবং নিষ্পেষণ। এ বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে ১৯৪৭ সালে, যখন ভারতবর্ষে সংঘটিত হয় ভয়াবহতম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, যখন শুধু ধর্মীয় দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্র আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৬৫ সালে এ অঞ্চলে আবারও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হয়, ফলে ভারত এবং পাকিস্তানের বহু হিন্দু ও মুসলমান তাদের জন্মভূমি ছেড়ে এ দুটি দেশে আশ্রয় নেয়। কিন্তু সাম্প্রদায়িকতা বন্ধ হয়নি; ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিকামী সর্বসাধারণের পাশাপাশি, বাংলাদেশে কেবল হিন্দু হওয়ার কারণে পাকিস্তানী বর্বর বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা নির্বিচারে হত্যা, লুণ্ঠন ও হামলা বেশি চালিয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশেও বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের শুরুতে এবং সময়ে সময়ে সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার হচ্ছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। মানবতার বিবেচনায় যা আমাদেরকে বার বার লজ্জিত করছে; যেখানে সমাজের সর্বাধিক সংখ্যক মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত। তাহলে, অত্যন্ত নগণ্য সংখ্যক মানুষ কেন এবং কীভাবে এ সাম্প্রদায়িক হামলা সংঘটিত করে তাই ভাবনার বিষয়। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক হামলায় লক্ষণীয় একটি বিষয় এই যে, প্রকৃত ধর্মপরায়ণ কোন ব্যক্তি অন্য সংখ্যালঘু কোন সম্প্রদায়ের উপাসনালয় বা বাড়িঘরে হামলা করেছে এমন প্রমাণ পাওয়া দুষ্কর। তাই, যারা এ ধরনের কাজ করছে তারা আর যাই হোক নিজ ধর্মের স্বার্থ রক্ষা ও অন্য ধর্মের বিনাশ সাধনের উদ্দেশ্যে সর্বদা একাজ করছে না। তারা এ কাজ করছে অবৈধ স্বার্থ হাসিল ও অপরাজনৈতিক কৌশল হিসেবে। অনেক ধর্মই আজ বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিকভাবে বিস্তৃৃত। তাই, কোন দেশে কোন সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষ সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় বা শাসকগোষ্ঠী দ্বারা অন্যায়ভাবে আক্রান্ত হলে অন্য কোন দেশে এর পালটা প্রতিশোধ নিতেও দেখা যায়। তাই সাম্প্রদায়িকতার বিষয়টির সমাধান শুধু জাতীয়ভাবে না দেখে আন্তর্জাতিকভাবেও দেখতে হবে। সাধারণত, রাজনীতিতে ধর্মের নোংরা ব্যবহার, অপরাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং অন্যের সম্পদ ও জমিজমা দখল করার পাঁয়তারায় সাম্প্রদায়িক হামলা এদেশে হয়ে আসছে। কিন্তু সত্যিকারের দেশপ্রেমিক ও ধর্মপ্রাণ মানুষ কখনও এ পথে পা মাড়ায় না। এটা স্বার্থান্বেষী মহলের কা- বলেই এ ধরনের ঘটনাকে সাদামাটা চোখে দেখে বিচার করা ঠিক নয়। প্রয়োজন, সুষ্ঠু তদন্তে প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করে এর মূলোৎপাটন করা। দুর্গাপুর, নেত্রকোনা থেকে
×