ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কুড়িগ্রামের ১২০০ কৃষক প্রশিক্ষণ নিয়ে মিষ্টি আলু চাষ করছেন

মিষ্টি আলু চাষে ঝুঁকে পড়ছেন চরাঞ্চলের কৃষক

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ১৭ নভেম্বর ২০১৬

মিষ্টি আলু চাষে ঝুঁকে পড়ছেন চরাঞ্চলের কৃষক

রাজুমোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম থেকে ॥ কুড়িগ্রামে উচ্চ পুষ্টি সমৃদ্ধ কমলা রঙের মিষ্টি আলু চাষে ঝুঁকে পড়ছেন চরাঞ্চলের কৃষকরা। এবারই প্রথম সদর উপজেলার পৌরসভাসহ মোগলবাসা ও পাঁচগাছী ইউনিয়নের ৫০ একর চরের বালু জমিতে মিষ্টি আলুর চারা লাগানো হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল বারি আলু-৪ ও ৮ জাতের মিষ্টি আলু ৭৮টি নার্সারির মাধ্যমে লাগানো হয়েছে। সদর উপজেলার ১২০০ কৃষক প্রশিক্ষণ নিয়ে এ মিষ্টি আলু চাষ শুরু করেছেন। উদ্যোক্তারা জানান, জেলার ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার, ফুলকুমারসহ ১৬টি নদ-নদীর অববাহিকার ২ শতাধিক চরাঞ্চলের পড়ে থাকা হাজার হাজার হেক্টর বালু জমিতে উচ্চ পুষ্টি সমৃদ্ধ মিষ্টি আলুর চাষ ছড়িয়ে দিতে পারলে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবেন চরাঞ্চলের কৃষকরা। আর এ লক্ষ্যে মিষ্টি আলু উৎপাদন ও বাজারজাত নিশ্চিতকরণে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহযোগিতায় ইউনাইটেড কিংডম এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউকেআইডি) আর্থিক সহায়তায় কাজ করছে আন্তর্জাতিক আলু কেন্দ্র ও বেসরকারী সাহায্য সংস্থা ব্র্যাক বাংলাদেশ। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পলাশবাড়ী গ্রামের মিজানুর রহমান জানান, মিষ্টি আলু চাষের লক্ষ্যে আমরা ১৩ জন কৃষক প্রশিক্ষণ নিয়ে ১৫০ শতক জমিতে নার্সারি করে মিষ্টি আলুর চারা উৎপাদন করেছি। এখান থেকে নিজের দুই একর জমিতে চারা লাগানোর পর ২ লাখ চারা ৮৫ হাজার ২শ’ টাকায় বিক্রি করেছি। ফলন ভাল হলে আগামীতে বেশি পরিমাণ জমিতে মিষ্টি আলু নার্সারি করাসহ চাষ করবেন বলে জানান তিনি। সদরের মোগলবাসা ইউনিয়নের চর সিতাইঝাড় গ্রামের কৃষক নুর ইসলাম জানান, এবার প্রাথমিকভাবে আমার চরের ৬ শতক জমিতে মিষ্টি আলুর চাষ শুরু করেছি। কৃষি বিভাগের পরামর্শে ২০ দিন আগে মিষ্টি আলুর চারা লাগিয়েছি। এ অল্প সময়ে চারা থেকে প্রচুর ডালপালা গজিয়েছে। আশা করছি ফলন খুব ভাল হবে। আন্তর্জাতিক আলু কেন্দ্র কুড়িগ্রাম অফিসের মাঠ সমন্বয়কারী মোঃ মহিদুল হাসান বলেন, ভাতের ওপর চাপ কমিয়ে এ অঞ্চলের মানুষের পুষ্টি নিশ্চিত করতে ও স্বল্প খরচে কৃষকদের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে কুড়িগ্রাম জেলার চরাঞ্চলগুলোতে মিষ্টি আলু চাষের ওপর কাজ করছে আন্তর্জাতিক আলু কেন্দ্র। কমলা রঙের এ মিষ্টি আলুতে উচ্চ ভিটামিন ‘এ’সমৃদ্ধ পুষ্টিগুণ থাকায় মানুষের ক্যান্সার প্রতিরোধসহ ডায়াবেটিস ও ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণ হবে। পাশাপাশি পড়ে থাকা বালু জমিতে ফসল ফলিয়ে লাভবান হবেন কৃষকরা। কুড়িগ্রাম সদরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, উচ্চ পুষ্টিমান সমৃদ্ধ মিষ্টি আলু চাষে কৃষকদের পরামর্শসহ উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এ মৌসুমে সদর উপজেলায় ১২০০ কৃষক এ মিষ্টি আলু চাষ শুরু করেছে। ১২০ দিনের মধ্যে মিষ্টি আলু ঘরে তুলতে পারবে কৃষকরা। প্রতি শতকে ৩ থেকে ৪ মন আলু উৎপাদন হবে বলে আশা করছি। মিষ্টি আলুর বাজারদর ভাল হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হতে পারবেন। ইন্টিগ্রেটেড এগ্রিকালচারাল প্রডাক্টিভিটি প্রজেক্ট (আইএপিপি) কুড়িগ্রাম জেলা সমন্বয়কারী মোঃ সিরাজুল ইসলাম জানান, চরাঞ্চলে মিষ্টি আলু চাষ প্রকল্পের মাধ্যমে উৎপাদনের বীজ নিশ্চিতকরণ, প্রশিক্ষণ, প্রকল্প কর্তৃক উৎপাদন খরচ প্রদান ও বাজারজাতকরণের সহায়তা করলে কৃষক অবশ্যই এ প্রযুক্তি ভবিষ্যতে ধরে রাখবে। খাদ্য, পুষ্টি, আয় এবং নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে এ ধরনের প্রকল্প যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে। এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কামরুজ্জামান বলেন, বারি মিষ্টি আলু ৪ ও ৮ উচ্চ ভিটামিন ‘এ’সহ অন্যান্য সকল পুষ্টি বিদ্যমান থাকায় উক্ত কৃষক তার নিজ পরিবারের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ অতিরিক্ত উৎপাদিত মিষ্টি আলু অন্যান্য জেলার পুষ্টি চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে বলে আমি বিশ্বাস করছি। মিষ্টি আলু চাষে আমরা চরাঞ্চলের কৃষদের উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছি, যাতে আগামীতে চরাঞ্চলগুলোতে কৃষকরা মিষ্টি আলু চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারেন। ঢাকার আন্তর্জাতিক আলু কেন্দ্রের সেক্টর লিডার ড. শফিউর রহমান সোহাগ জানান, দেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে কুড়িগ্রামসহ দেশের ১২টি জেলায় উচ্চ পুষ্টিমানসমৃদ্ধ কমলা রঙের মিষ্টি আলু চাষে কাজ করা হচ্ছে। এতে কৃষকরা একদিকে যেমন লাভবান হবেন অন্যদিকে দেশের মানুষের পুষ্টি নিশ্চিত হলে শিশুদের মেধা বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।
×