ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জরিপের চূড়ান্ত প্রতিবেদন

জামালগঞ্জে সুড়ঙ্গ পদ্ধতিতে কয়লা তোলার সুপারিশ

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ১৭ নভেম্বর ২০১৬

জামালগঞ্জে সুড়ঙ্গ পদ্ধতিতে কয়লা তোলার সুপারিশ

রশিদ মামুন ॥ সুড়ঙ্গ (আন্ডারগ্রাউন্ড) পদ্ধতিতে জামালগঞ্জ থেকে কয়লা তোলার সুপারিশ করা হয়েছে। কয়লার বিভিন্ন স্তর থেকে গ্যাস তোলার সম্ভাব্যতা জরিপের ফলাফলে এই সুপারিশ করা হয়েছে। জরিপকারী ভারতীয় কোম্পানি মাইনিং এ্যাসোসিয়েটস প্রাইভেট লিমিটেড তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলছে জামালগঞ্জে উন্নতমানের কয়লার মজুদ রয়েছে। জয়পুরহাটের জামালগঞ্জে ১৯৬২ থেকে ১৯৬৫ সালের এক জরিপে কয়লার সন্ধান পাওয়া যায়। বেশি গভীরতার কারণে এতদিন জামালগঞ্জ থেকে সুড়ঙ্গ বা উন্মুক্ত কোন পদ্ধতিতে কয়লা তোলা সম্ভব নয় বলে মনে করা হতো। এর আগে হাইড্রোকার্বন ইউনিট পরিচালিত একটি জরিপে বলা হয় জামালগঞ্জ কয়লা খনিতে কোল বেড মিথেন (সিবিএম) অথবা আন্ডারগ্রাউন্ড কোল গ্যাসিফিকেশন (ইউসিজি) পদ্ধতিতে কয়লা তোলা সম্ভব। সিবিএম পদ্ধতিতে কয়লার বিভিন্ন স্তরে জমে থাকা গ্যাস তোলা হয়। অন্যদিকে ইউসিজি পদ্ধতিতে খনিতেই কয়লা পুড়িয়ে গ্যাস তৈরি করে তোলা হয়। ইউসিজি পৃথিবীর কোথাও এখনও যথাযথভাবে প্রমাণিত নয়। পরীক্ষামূলকভাবে বিভিন্ন দেশ ইউসিজি করছে। এর আগেও জামালগঞ্জে ভারতীয় পরামর্শক সংস্থা মেসার্স প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপার্স প্রাইভেট লিমিটেড জামালগঞ্জে সমীক্ষা করে। তবে এবার ভারতের অন্য একটি কোম্পানি জরিপ শেষ করে বলছে জামালগঞ্জে আন্ডারগ্রাইন্ড মাইনিং করা সম্ভব। যদিও ১৯৬৬ সালে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে জামালগঞ্জে গ্যাস থাকার ধারণা দেয়া হয়। জয়পুরহাট সদর উপজেলার দুর্গাদহ ইউনিয়নে কয়লা খনিটি অবস্থিত। জরিপের পর বলা হচ্ছে প্রায় ৬৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কয়লা খনিটির অবস্থান। এখানে ৭৩০ থেকে এক হাজার ৩০ মিটার গভীরতায় কয়লার মজুদ রয়েছে। নতুন জরিপ কোম্পানি মাইনিং এ্যাসোসিয়েটস বলছে জামালগঞ্জে কোল বেড মিথেন অর্থাৎ কয়লার স্তরে স্তরে জমে থাকা গ্যাস উত্তোলন সম্ভব নয়। এখানে গ্যাসের পরিমাণ (মিথেন) দশমিক ৩৬ ভাগ থেকে এক দশমিক ৭৪ ভাগের মধ্যে। গ্যাস উত্তোলন নিম্নমানের যা ১০ ভাগের নিচে। সামান্য কিছু নমুনায় ১০ ভাগের বেশি গ্যাসের মজুদ রয়েছে। এখান থেকে গ্যাস উত্তোলন অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক বিবেচিত হবে না। এর বিপরীতে জামালগঞ্জে ৪৩ মিটার থেকে ৬৪ মিটার পূরত্বের কয়লার স্তর রয়েছে। তবে বেশি গভীরতার কয়লা থাকায় জামালগঞ্জে উন্মুক্ত খনন সম্ভব নয়। এবার জামালগঞ্জে পেট্রোবাংলার নিজস্ব অর্থায়নে মাইনিং এ্যাসোসিয়েটস কূপ খনন করে। এতে ২৩ কোটি ৩৭ লাখ ৮৬ হাজার টাকা খরচ হয়। কূপ খনন করতে ১৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা এবং বাকি টাকা জমি ইজারা, ইজারা নেয়া জমির ফসলের ক্ষতিপূরণসহ অন্য কাজে ব্যয় হয়। চলতি বছর ৫ জানুয়ারি জামালগঞ্জ কয়লা খনি থেকে সিবিএম (কোল বেড মিথেন) পদ্ধতিতে গ্যাস আহরণের সম্ভাব্যতা যাচাই করার কাজ শুরু হয়। এক হাজার মিটারের বেশি গভীরতায় কূপগুলো খনন করা হয়। কিন্তু তিনটি কূপের কোনটিতেই উত্তোলনযোগ্য গ্যাস মেলেনি। সরকারের কাছে গত মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে জামালগঞ্জ খনির অবস্থা তুলে ধরে ভারতীয় কোম্পানিটি। এতে বলা হয় খনিতে মোট মজুদের পরিমাণ পাঁচ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন টন। এখানের বেশিরভাগ কয়লাই ৮০০ মিটারের চেয়ে বেশি গভীরে রয়েছে। দেশের সব থেকে গভীর কয়লা খনি জামালগঞ্জ। তবে এখানের কয়লার মান ভাল এখানে উন্নতমানের বিটুমিনাস কয়লা মজুদ রয়েছে। যাতে ছাই এর পরিমাণ কম। জরিপের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে খনিটি বড়পুকুরিয়ার মতো একই ধরনের নয়। এখানে ১৫০ থেকে ২০০ মিটার পুরুত্বর হার্ড রক বা কঠিন শিলা স্তর রয়েছে।
×