দেশে গত কয়েক মাস ধরে প্রবাসী আয় কমার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ধারাবাহিকভাবেই কমছে প্রবাসী আয়। চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে ব্যবসায়ীরা পাঠিয়েছেন ৪২৫ কোটি ৫৭ লাখ মার্কিন ডলার। অথচ গত অর্থবছরের একই সময়ে এই আয় ছিল ৫০৩ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার। সেই হিসেবে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে প্রবাসী আয় কমেছে ৭৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার বা ১৫ দশমিক ৪২ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষণে বিষয়টি উঠে আসার পর তারা এর কারণ অনুসন্ধানে সোমবার আনুষ্ঠানিক বৈঠক করে প্রবাসী আয় আহরণকারী ৩০টি ব্যাংকের সঙ্গে। প্রবাসী আয় কেন কমছে, সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনার প্রেক্ষিতেই এহেন পর্যালোচনা বৈঠকের আয়োজন। সেখানে অন্যান্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষও প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছে। এর কারণ অনুসন্ধানসহ প্রতিকার নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
সত্য বটে, বাংলাদেশ এখন চলছে উন্নয়নের গতিধারায়। পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে চলছে দৃশ্যমান গতিতে। নতুন নতুন বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনসহ বিদ্যুত উৎপাদনেও দেখা যাচ্ছে আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি। রাজধানীতে মেট্রোরেলের কাজও এগিয়ে চলেছে। পোশাক শিল্পের রফতানি আয়ও সন্তোষজনক। এ অবস্থায় দ্বিতীয় বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার বিষয়টি কিছুটা হলেও উদ্বেগজনক বৈকি। দেশের বাইরে এর অবশ্য নানা আন্তর্জাতিক কারণও আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে একটা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তো ছিলই। বিতর্কিত এক ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে এবং শেয়ার মার্কেটেও ডলারের আকস্মিক দরপতন ঘটেছে। বাংলাদেশেও ব্যাংকিং চ্যানেল ও খোলা বাজারে মার্কিন ডলারের দামের পার্থক্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ টাকার বেশি। ব্যাংকে প্রতি ডলারের মূল্য গড়ে ৭৮ টাকা। খোলা বাজারে তা ৮২ টাকার কাছাকাছি। ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠানোয় নানা ঝক্কি-ঝামেলা। অর্থের পরিমাণও কম। সময়ও বেশি লাগে। তদুপরি অধিকাংশ ব্যবসায়ী কর্মজীবী সাধারণ শ্রেণীভুক্ত, শ্র্রমিক। সময় কমসহ দু’চার টাকা বেশি পাওয়া যায় বিধায় প্রবাসীরা হুন্ডির মাধ্যমটিই বেশি পছন্দ করে থাকেন। এমনকি বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর খবরও আছে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষের উচিত হবে, ডলারের দামের সঙ্গে সঙ্গতি বিধান করে প্রবাসীদের অর্থ প্রেরণের পদ্ধতিটি যথাসম্ভব সহজসাধ্য করা। এর জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে ডলার আমদানির জন্য কর অবকাশ সুবিধাও দেয়া যেতে পারে।
ডলারের বিপরীতে পাউন্ড, ইউরো, রিঙ্গিত, সিঙ্গাপুর ডলারে মুদার মূল্যমানও কমে যাওয়ার খবর আছে। ফলে এসব দেশে কর্মরত শ্রমিকদের আয়ও কমেছে। মধ্যপ্রাচ্যে তেলের দাম পড়ে যাওয়ায়ও কমেছে শ্রমিকদের মজুরি। অনেকের বেতন হয়ে পড়েছে অনিয়মিত। অনেক স্থানে প্রবাসীদের অর্থ পাঠাতে নানা হয়রানিতে পড়তে হচ্ছে। সমস্যা হলো, প্রবাসীদের এত সমস্যা ও ভোগান্তি নিয়ে ভাবা অথবা দেখভাল করার মতো কোন সংস্থা বা সংগঠন নেই। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থাকলেও তাদের কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ও এ নিয়ে আদৌ ভাবছে বলে মনে হয় না। দেরিতে হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক একটি উদ্যোগ নিয়েছে। অতঃপর ব্যাংকগুলোকে প্রবাসী গ্রাহকদের সঙ্গে উপযুক্ত আলোচনাসহ বিদেশ থেকে অর্থ প্রেরণের পদ্ধতি আরও সহজ করতে হবে। প্রবাসী আয়-উপার্জনকারীদের কিছু সুযোগ-সুবিধা দেয়ার বিষয়টিও ভাবা যেতে পারে।
শীর্ষ সংবাদ: