ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে, শীতের আমেজ হাল্কা কুয়াশা পড়ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৭ নভেম্বর ২০১৬

তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে, শীতের আমেজ হাল্কা কুয়াশা পড়ছে

নিখিল মানখিন ॥ দেশে শীতের আমেজ শুরু হয়ে গেছে। সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত রাজধানীতেও অনুভূত হচ্ছে হালকা শীত। উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং দক্ষিণাঞ্চলের গ্রাম এলাকায় শীতের তীব্রতা যেন একটু বেশি। রাতের তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় দেশের সর্বত্র ভোরের দিকে হালকা কুয়াশা পড়ছে। গ্রামাঞ্চলের নদীর কিনারায়, বিস্তীর্ণ বিল ও বনের ধারে কুয়াশার মাত্রা বেড়েই চলেছে। গত এক সপ্তাহে দেশের সর্বোচ্চ ও নিম্ন তাপমাত্রা অনেক হ্রাস পেয়েছে। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে এসেছে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আর কয়েক ডিগ্রী সেলসিয়াস হ্রাস পেলেই দেশে শুরু হবে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। ডিসেম্বরে বয়ে যাবে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, নবেম্বর মাসে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে ২ থেকে ৩টি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে অন্তত ২টি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাবে। দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে এবং নদ-নদী অববাহিকায় ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত হালকা ও মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। এ মাসে দেশের দৈনিক গড় বাষ্পীভবন ২.৫ থেকে ৩.৫ মিলিমিটার এবং দৈনিক গড় সূর্য কিরণকাল ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা থাকতে পারে। সূত্রটি আরও জানায়, ডিসেম্বর মাসে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে। ওই মাসের শেষার্ধে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ১ থেকে দুটি মৃদু-মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, দেশের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ইতোমধ্যে হ্রাস পেতে শুরু করেছে। বুধবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা টেকনাফে ৩১.৯ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড হয়। আর ঢাকার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল যথাক্রমে ২৯.৯ ও ২০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। বিকেল না গড়াতেই রাজধানীর পাড়া-মহল্লা ও ফুটপাতে শীতের পিঠার পসরা সাজিয়ে বসছেন দোকানিরা। বেলা গড়ালেই মলিন আবছা অন্ধকার ঘনিয়ে আসে এখন। খুব তাড়াতাড়ি নেমে আসে সন্ধ্যা। আকাশে জমে ওঠে হালকা কুয়াশার স্তর। গা শিরশির করা হিমেল স্পর্শ বুলিয়ে দেয় মৃদু হাওয়া। এসবই জানিয়ে দিচ্ছে শীতের আগমনী। আগমন ঘটেছে অগ্রহায়ণ মাসের। দেশের প্রান্তিক এলাকাগুলোতে, বিশেষত উত্তরাঞ্চলে এখন বেশ শীত। বরাবরই রাজধানীতে শীত আসে একটু দেরিতে। তবে এবার সন্ধ্যার পর হালকা শীত অনুভূত হচ্ছে। এই হালকা শীতে এখনও গরম কাপড়চোপড় দেখা যাচ্ছে না নগরবাসীর গায়ে। কোট-জাম্পার-চাদরের বাক্সবন্দী দশা ঘুচতে শুরু করেছে, তবে লেপ-কম্বল আরও অন্তত সপ্তাহ দুয়েক আটক থাকতে পারে। সাধারণত ডিসেম্বরের আধাআধি না যাওয়া পর্যন্ত ঢাকার শীত লোকজনকে লেপ মুড়ি দিতে বাধ্য করার মতো শক্তিমান হয়ে ওঠে না। আবার ফেব্রুয়ারি শুরু হতে না হতেই হাওয়া বদলের রেশ। দাপুটে হোক বা দুর্বল, রাজধানীতে কিন্তু শীত নিয়ে রকমারি আয়োজনের কোন ঘাটতি থাকে না। হেমন্তের শুরু থেকেই পাড়া-মহল্লা, বাজার, অফিস এলাকার ফুটপাত দিয়ে বসে গেছে পিঠা তৈরির দোকান। বিকেল থেকে ভাপা, চিতই, তেলের পিঠা বিক্রি হচ্ছে দেদার। কাঁচাবাজারে শিম, মুলা, কপি, বরবটি, টমেটোসহ শীতের সবজিগুলো এসেছে শীত আসার আগেই। খেজুরের রস দুর্লভ, তবে চলে এসেছে নতুন পাটালি। রসনায় শীতের স্বাদ পাওয়া যাচ্ছে পুরোপুরি। সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও পড়েছে শীতের সাড়া। নানা ধরনের আয়োজনে উৎসবমুখর হয়ে উঠছে ঢাকার মঞ্চ-মিলনায়তনগুলো। অগ্রহায়ণের পাকা ফসল কৃষিনির্ভর আমাদের জনজীবনে নিয়ে আসে সচ্ছলতা। শীতকালটি তাই আমাদের দেশে আনন্দময়, উৎসবমুখর হয়ে আছে আবহমানকাল থেকে। আবহাওয়াবিদরা জানান, আগামী ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ধীরে ধীরে শীতের তীব্রতা বাড়তে পারে। তবে এবার শীতের তীব্রতা কেমন হতে পারে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। হিমালয় অঞ্চল থেকে আগত শীতল বায়ু উত্তর-পূর্ব দিক থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এ বায়ু সর্বপ্রথম উত্তরাঞ্চল দিয়ে প্রবেশ করে বলে দেশের উত্তর দিকে সবার আগে শীতের তীব্রতা দেখা দেয় এবং পরবর্তীতে ধীরে ধীরে তা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের দেশে মূলত ডিসেম্বর মাসে শীত বেশি অনুভূত হয়। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতের আমেজ থাকে। এর আগে অক্টোবর ও নবেম্বর মাসে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমতে থাকে বলে শীত অনুভূত হয়। মৌসুম পরিবর্তনের সময় সাগর অস্থিতিশীল থাকে। আর এ সময়ে সাগরে বিভিন্ন সময়ে লঘুচাপ ও নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। বছরের এ সময়ের নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। আমাদের দেশে বছরের এপ্রিল-মে ও অক্টোবর-নবেম্বর-ডিসেম্বর মাসে সাধারণত বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়ে থাকে। এ বছর নবেম্বর মাসে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ, ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস থাকলেও তা এখন পর্যন্ত সৃষ্টি হয়নি।
×