ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গৃহহীন সাঁওতাল পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা সরকারই করবে ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৭ নভেম্বর ২০১৬

গৃহহীন সাঁওতাল পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা সরকারই করবে ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে চিনিকলের জমি থেকে উচ্ছেদ হওয়ার পর খোলা আকাশের নিচে থাকা সাঁওতাল পরিবারগুলোর জন্য সরকারীভাবে ঘর বানিয়ে দেয়ার নির্দেশের কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি আরও বলেন, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান নির্বিঘেœ উদযাপনের ক্ষেত্রে কোন হুমকি নেই। বুধবার দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন। এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কোন সাঁওতাল পরিবার যদি গৃহহীন থাকে, তাহলে তিনি আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের থাকার ব্যবস্থা করে দেবেন। নির্দিষ্ট ডিপার্টমেন্ট এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। উচ্ছেদ হওয়া সাঁওতাল পল্লীর বাসিন্দারা তাদের ‘বাপ-দাদার জমিতে’ থাকার অধিকার চান। খাবারের অভাবে এক বেলা খেয়ে দিন কাটাতে হলেও সরকারী সহায়তা নিতে রাজি নন তারা। দেড় শতাধিক পরিবার দশ দিন ধরে মাদারপুর চার্চের খোলা প্রাঙ্গণ ও চার্চের পরিত্যক্ত স্কুলভবনে বসবাস করছে। পল্লীর ছয়শ’ পরিবারেই দেখা দিয়েছে খাদ্য সঙ্কট। অর্থ যোগানের ব্যবস্থা না থাকায় নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারছেন না তারা। কাজের সুযোগও নেই। অধিকাংশ পরিবারের লোকজনই শুধু রাতে খেয়ে দিন পার করছেন। তাদের জন্য সরকার কোথায় আশ্রয়ণ প্রকল্প করবে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সংশ্লিষ্ট বিভাগই সে ঘোষণা দেবে। তবে সাঁওতালদের দাবি অনুযায়ী চিনিকলের জমিতে তাদের থাকতে দেয়া সম্ভব নয় বলে দুদিন আগে জানিয়ে দিয়েছেন শিল্পসচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। মিলের জমির বাইরে ১০ একর খাসজমিতে ভূমিহীন সাঁওতালদের পুনর্বাসনের প্রস্তাব দেয়া হলেও তাতে সাড়া মিলছে না জানিয়ে সোমবার এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, এখনও তারা বলছে, মিলের জমিতে তাদের জায়গা দিতে হবে। এটা সরকার দিতে পারে না। সাঁওতাল ও বাঙালীদের ১৮টি গ্রামের ১ হাজার ৮৪০ দশমিক ৩০ একর জমি ১৯৬২ সালে অধিগ্রহণ করে রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ আখ চাষের জন্য সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার গড়ে তুলেছিল। সেই জমি ইজারা দিয়ে ধান ও তামাক চাষ করে অধিগ্রহণের চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ তুলে তার দখল ফিরে পেতে আন্দোলনে নামে সাঁওতালরা। এরপর সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মে বিরোধপূর্ণ চিনিকলের জন্য অধিগ্রহণ করা ওই জমিতে কয়েকশ’ ঘর তুলে সাঁওতালরা বসবাস শুরু করেন। গত ৬ নবেম্বর চিনিকল কর্তৃপক্ষ জমি উদ্ধার করতে গেলে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষের সময় সাঁওতালদের বাড়িঘরে লুটপাট হয়। পুলিশের ভাষ্য, তারা সংঘর্ষ থামাতে গুলি চালায়। ওই ঘটনায় নিহত হন তিন সাঁওতাল, আহত হন অনেকে। শিল্প সচিবের মতো শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুও মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, এটা সাঁওতালদের জায়গা ছিল না। ভূমিদস্যুরা সাঁওতালদের ব্যবহার করেছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল সাঁওতালদের দিয়ে দখল করিয়ে পরে নিজেদের দখলে নেয়া। বিজয় দিবস সামনে রেখে বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালও সাঁওতাল পল্লীর ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন। আমুর বক্তব্যের সূত্র ধরে তিনি বলেন, মঙ্গলবার শিল্পমন্ত্রী বলেছেন, এটা সুগার মিলের জায়গা, এই জায়গায় পর্যায়ক্রমে আখ চাষ করা হতো। সেখানে কিছু আদিবাসী এসে ঘর তুলেছিল, তারা আবার চলেও গিয়েছেন। কালকে পর্যন্ত জানি সেখানে কেউ নাই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সহজ সুরে পরিস্থিতির বিবরণ দিলেও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ওপর গুলির ঘটনার পর থেকে সমালোচনা চলছে দেশজুড়ে। ঢাকাসহ দেশে বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ কর্মসূচীও পালিত হচ্ছে। এদিকে ওই জমি এখন কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরাও করছে চিনিকল কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, দুই গজ পর পর সিমেন্টের পিলার দিয়ে তাতে বাঁধা হচ্ছে কাঁটাতার। গত ৯ দিনে এক কিলোমিটার কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করা হয়েছে। বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান নির্বিঘেœ উদযাপনের ক্ষেত্রে কোন হুমকি নেই বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান সারাদেশে নির্বিঘেœ উদযাপনের ব্যাপারে বৈঠকে আলোচনা করা হয়েছে। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোন দুর্বলতা আছে কি-না তা বৈঠকে খতিয়ে দেখা হয়েছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে কোন হুমকি নেই। এখন পর্যন্ত গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কোন হুমকির কোন তথ্য জানায়নি। ওইদিন অনুষ্ঠান যাতে নির্বিঘেœ হয় সেজন্য পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্য সজাগ থাকবে। জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাওয়া আসার সড়কে কোন তোরণ-নির্মাণ করা যাবে না। তিনি আরও বলেন, বিজয় দিবস উদযাপনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে পুলিশকে জানাতে হবে। যারা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করবেন তাদের সাতদিন আগে থেকে মেট্রোপলিটন পুলিশ ও জেলা পুলিশকে জানাতে হবে। বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান শেষ করার ক্ষেত্রে কোন সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়নি। তবে রাতের আগেই অনুষ্ঠান শেষ করার জন্য সবাইকে আহ্বান জানান তিনি।
×