ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হাইকোর্টের নির্দেশ

মোনায়েম খানের বাড়ির নামে দখলে রাখা জমি সিটি কর্পোরেশনের

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৭ নভেম্বর ২০১৬

মোনায়েম খানের বাড়ির নামে দখলে রাখা জমি সিটি কর্পোরেশনের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বাধীনতাবিরোধী মোনায়েম খানের বনানীর বাড়ির রাস্তার পাশে সবুজায়নের জন্য বরাদ্দকৃত জমি দখলে নিতে পারবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী এখন এই জমি নিজেদের দখলে রাখতে পারবে। ১৯৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৫০ ফুট প্রস্থের ওই জমির বিষয়ে যৌথ জরিপের প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর বুধবার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। সেই সঙ্গে ওই জায়গা থেকে মোনায়েম খানের পরিবারকে উচ্ছেদে নিষেধাজ্ঞাও খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী আহসানুল করিম, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী শাহজাদা আল আমিন কবির সোহেল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। গত রবিবার মোনায়েম খানের বনানীর বাড়ির বরাদ্দ নিয়ে প্রশ্ন তোলে হাই কোর্ট; ওই বাড়ি সংলগ্ন দখল করা জমি জরিপের মাধ্যমে চিহ্নিত করতে নির্দেশ দেয়া হয় কর্তৃপক্ষকে। মোনায়েম খানের উত্তরাধিকারীদের হাত থেকে ওই বাড়ি সংলগ্ন ১০ কাঠা জমি উদ্ধার এবং বাড়িটির বরাদ্দ বাতিলে সরকারী সিদ্ধান্তের পর হাই কোর্টের ওই আদেশ আসে। গত ১৩ তারিখ হাইকোর্ট এক আদেশে রাজউকের লে-আউট প্ল্যানে থাকা কতটুকু অংশ সবুজায়নের জন্য বরাদ্দ রয়েছে তা নির্ধারণ করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও রাজউককে নির্দেশ দেয়া হয়। নির্দেশ মোতাবেক উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও রাজউক যৌথ জরিপ প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজউকের লেআউট নক্সা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট প্লটের উত্তরের বাহু পূর্ব-পশ্চিমে ১৯৫ ফুট ও দক্ষিণের বাহু পূর্ব-পশ্চিমের ২০২ ফুট যার উভয় প্রান্তে প্রস্থে ৫০ ফুট ভূমি চিহ্নিত করা হয়। এই পরিমাণ ভূমি রাজউকের নক্সা অনুযায়ী সবুজ বেষ্টনী হিসেবে পরিচিত যা মোনায়েম খানের পরিবার অবৈধভাবে দখলে রেখেছিল। পাকিস্তান আমলে পূর্ব পাকিস্তানের গবর্নর মোনায়েম খানকে ১৯৬৬ সালে তৎকালীন ডিআইটি বনানী ২৭ নম্বর সড়কে পাঁচ বিঘার ওই প্লটটি বরাদ্দ দেয়া হয়। ১৯৬৭ সালে জমিটির লিজ দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রি করা হয় বলে রাজউক কর্মকর্তারা জানান। এরপর সেখানে বাড়ি নির্মাণ করেন পাকিস্তান মুসলিম লীগের শীর্ষ পর্যায়ের এই নেতা, নাম দেন ‘বাগ-ই মোনায়েম’। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করা মোনায়েম খান ১৯৭১ সালের ১৩ অক্টোবর ওই বাড়িতেই মুক্তিবাহিনীর গুলিতে আহত হন। এরপর হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। স্বাধীনতার পর মোনায়েম খানের উত্তরাধিকারীরা ওই বাড়ির দখল রেখে দেয়। সেই সঙ্গে বাড়ির সামনের ১০ কাঠা সরকারী জমিতেও স্থাপনা নির্মাণ করে দখল করেন বলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা জানান। গত ৩ নবেম্বর সিটি কর্পোরেশন ওই অবৈধ দখল উচ্ছেদ করলে তা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন মোনায়েম খানের ছেলে এএইচএম কামরুজ্জামান খান। তার আবেদনে বলা হয়, ২০০৯ সালে সিটি কর্পোরেশন দুটি নোটিস দিয়ে ৬০ ফুট জায়গার দখল ছাড়তে বলার পর তা চ্যালেঞ্জ করে তার আবেদনে ওই বছরের ২৬ জানুয়ারি হাইকোর্ট স্থিতাবস্থা জারি করে। কামরুজ্জামানের আবেদন শুনে আদালত স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ দেয় এবং নিষেধাজ্ঞার পরও উচ্ছেদ অভিযান কেন হয়েছে, সিটি কর্পোরেশনকে সাত দিনের মধ্যে তার ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। ওই আদেশে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) রবিবার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চে জবাব দাখিল করে। সেদিন শুনানির পর আদালত একটি রুল জারি করে। মোনায়েম খানকে কোন ক্ষমতাবলে বনানীর ওই বাড়ি বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে। দুই সপ্তাহের মধ্যে রাজউককে এর জবাব দিতে বলা হয়। সেই সঙ্গে রাস্তার পাশে সবুজায়নের জন্য বরাদ্দ করা ৫০ ফুট বাই ২০০ ফুট জায়গা যৌথ জরিপের মাধ্যমে চিহ্নিত করে দখলমুক্ত করতে রাজউক ও সিটি কর্পোরেশনকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। ১৬ নবেম্বরের মধ্যে আদালতে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। উল্লেখ্য, ৩ নবেম্বর মোনায়েম খানের বাড়ির অবৈধ অংশ ভেঙ্গে দেয়ার পর জানা গেছে, মোনায়েম খানের দখলে ছিল প্রায় দশ কাঠা জমি। উচ্ছেদ অভিযান পরিদর্শন করেন ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাঈদ আনোয়ারুল ইসলাম ও ৩ নম্বর অঞ্চলের নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুজ্জামান শরীফ প্রমুখ। রাজধানীর বনানী কবরস্থান সড়কে সরকারী প্রায় ৫ বিঘা জমি দখল করে একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় দেশবিরোধী অন্যতম কুচক্রী মোনায়েম খান গড়ে তোলেন ‘বাগ-ই-মোনায়েম’। কিন্তু ডিএনসিসির অভিযানের সময় পরিবারের পক্ষ থেকে কোন বৈধ নথি দেখাতে না পারায় মূল সড়ক থেকে ১৬ ফুট ভেতরে ভবনের সামনের অংশ ভেঙ্গে ফেলা হয়। বাড়ির ভেতরের দুই দিকের গেট লাগোয়া যে দুটি ঘর ছিল সে দুটিও ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। এদিকে ১২ নবেম্বর রাজধানীর বনানীতে স্বাধীনতা বিরোধী কুখ্যাত মোনায়েম খানের বরাদ্দকৃত বাড়িটির স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল তৈরির দাবি জানিয়েছেন দেশের খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিসহ ৯টি সংগঠন ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক। একইসঙ্গে তারা সকল স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী ও মৃত সকল রাজাকার আলবদরদের আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে মরণোত্তর বিচার দাবি করেন ও তাদের অর্জিত সকল সম্পত্তি বাজেয়াফত করে যুদ্ধাহতসহ সকল মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ব্যয় করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানান।
×