ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কানাডা-ইইউ বাণিজ্য চুক্তিতে বাগড়া

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ১৬ নভেম্বর ২০১৬

কানাডা-ইইউ বাণিজ্য চুক্তিতে বাগড়া

বেলজিয়ামের ওয়ালোনিয়া আঞ্চলিক পার্লামেন্ট সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কানাডার মধ্যে প্রস্তাবিত সর্বাঙ্গীণ অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্য চুক্তি বা সংক্ষেপে সিটার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। এরই প্রেক্ষাপটে সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডিডিয়ার রেনন্ডার্স বলেছেন যে ওয়ালোনিয়া অঞ্চল যেসব কারণে আপত্তি জানিয়েছে তা মেটানো হলে ইইউ নেতারা এই ঐতিহাসিক বাণিজ্য চুক্তির ব্যাপারে মতৈক্যে পৌঁছাতে পারেন। প্রাচীন গল সাম্রাজ্যের এক প্রান্তে অবস্থিত ফরাসী ভাষাভাষী অঞ্চল ওয়ালোনিয়ার লোকসংখ্যা মাত্র ৩৬ লাল, যেখানে ইইউর মোট জনসংখ্যা ৫০ কোটি ৮০ লাখ। তথাপি বিশ্বায়নের নির্মম শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে এই ক্ষুদে সংখ্যালঘুর ভোটকে অগ্রাহ্য করার উপায় নেই। অনেকে ওয়ালোনিয়ার এই ভূমিকাকে প্রশংসার দৃষ্টিতে দেখেছেন। যদিও মুক্ত বাণিজ্যের প্রবক্তারা এতে রীতিমতো বিরক্ত ও নাখোশ। কারণ ৭ বছর ধরে অনেক আলোচনা ও দর কষাকষির পর প্রস্তাবিত চুক্তিটি আজকের এই অবস্থায় এসে দাঁড়ালেও একটি আঞ্চলিক পার্লামেন্টের বিরোধিতার কারণে তা ভেস্তে যেতে পারে। এতে ব্রিটেনও সমস্যায় পড়তে পারে। কারণ ব্রেক্সিটের পর ইইউর সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে এই দেশটির ক্ষেত্রেও নানা প্রশ্ন উঠতে পারে। ওয়ালোনিয়া একদা ছিল বেলজিয়ামের ইস্পাত ও কয়লা শিল্পের প্রাণকেন্দ্র। সেটাই আজ বিশ্বায়নের অভিশপ্ত ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। শিল্প-কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে পড়ছে। বেকারত্ব চরম আকার ধারণ করেছে। তার ওপর সিটা চুক্তির ফলে কানাডা থেকে যদি সস্তায় কৃষিজাত ও শিল্পজাত পণ্য সস্তায় আমদানি করা হয় তাহলে এই এলাকার শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়বে এমন আশঙ্কা থেকেই ওয়ালোনিয়ার পার্লামেন্ট সদস্যরা চুক্তির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। ঐতিহাসিক এই চুক্তিটি গত মাসেই স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা ছিল। এখন এই বিরুদ্ধ ভোটের ফলে তা বিলম্বিতই শুধু হলো না, অনিশ্চয়তার মধ্যেও পড়ে গেল। বেলজিয়ামের আইনে আছে যে কেন্দ্রীয় সরকারকে কোন চুক্তি অনুমোদন করতে গেলে সকল অঞ্চলের সমর্থন লাগবে। ওয়ালোনিয়ার রাজনীতিকরা ঘোষণা দিয়েছেন যে তারা সরকারকে সিটা স্বাক্ষর করতে দেবেন না। সিটা চুক্তি তখনই কার্যকর হবে যদি ইইউর ২৮টি সদস্য দেশের সবাই সর্বসম্মতিক্রমে ঐকমত্যে পৌঁছায়। একটি সদস্য বেঁকে বসলে তা কার্যকর হবে না। ওয়ালোনিয়ার বিরুদ্ধ ভোট তাই এই চুক্তির গায়ে টর্পেডোর মতো আঘাত হানল। ঘটনাটি ব্রিটেনের জন্যও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াল। কারণ ব্রেক্সিটের পর ব্রিটেনকে ইইউর সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে নতুন করে সংলাপে বসতে হবে। দুই পক্ষ বাণিজ্যের ব্যাপারে কোন চুক্তিতে উপনীত হলে কেউ যদি ইইউর গঠনতন্ত্রের ৫০ নং অনুচ্ছেদটি প্রয়োগ করে তা হলেই সব ভেস্তে যাবে। এদিকে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন যে, ইউরোপ যদি সিটা স্বাক্ষর না করে তাহলে বাকি বিশ্বের কাছে একটা সুস্পষ্ট বার্তা পৌঁছে যাবে। তিনি বলেন, যদি দেখা যায় সে ইউরোপ কানাডার মতো দেশের সঙ্গে প্রগতিশীল বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরে অসমর্থ তাহলে আগামীতে ইউরোপ কার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবে বলে মনে করে সেটাই দেখার বিষয়। সিটা নিয়ে ইউরোপজুড়েই আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। অনেক দেশের রাজপথে সিটার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে যে, সব সদস্য দেশের জাতীয় পার্লামেন্টে অনুমোদিত হওয়ার আগেও সিটার কিছু কিছু অংশ বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। ইইউর এমন বক্তব্যে সিটাবিরোধীরা আরও ক্ষেপে গেছে। তারা আশঙ্কা করছে যে ইইউর এমন তাড়াহুড়ো ভাবের পেছনে অন্য উদ্দেশ্যও হয়ত আছে। সিটাকে ইইউ-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বিতর্কিত বাণিজ্য চুক্তি টিটিআইপি অনুমোদনের মানদ- হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে। চলমান ডেস্ক সূত্র : টাইম
×