ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রুমেল খান

ঢাকা মাতিয়ে গেলেন ক্যাটি লাফ্রান্স

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ১৬ নভেম্বর ২০১৬

ঢাকা মাতিয়ে গেলেন ক্যাটি লাফ্রান্স

প্রতিভা থাকলে সেটা বিকশিত হবেই। তাকে শুধু সুযোগ করে দিতে হয়। ক্যাটি লাফ্রান্স তেমনই এক প্রতিভা। এই সুন্দর ধরণীর বিশাল জনসংখ্যার মধ্যে সাফল্যের আলোয় আলোকিত মানুষের সংখ্যা খুব নগণ্য। বাকিরা সবাই সাধারণ। এই ব্রহ্মা-ে তাদের কোন অবদান নেই। সাধারণের ভিড়ে একদল অসাধারণের অসামান্য কীর্তিতে ধরণী লাভবান হয়। খেলার ভুবনে একটি অতি পরিচিত খেলা টেনিস। সাম্প্রতিককালে যাকে গ্ল্যামারের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ বলে প্রচার করা হচ্ছে। পুরুষ ও মহিলা উভয় বিভাগেই গ্ল্যামারের রাজত্ব থাকলেও শেষ পর্যন্ত পরিশ্রম করে খেলে জয়লাভ করার মধ্য দিয়ে নিজের নামটিকে পরিচিত করতে হয়। যারা শুধু রূপসর্বস্ব- তারা হারিয়ে যান। যেমন আনা কুর্র্নিকোভা। কিন্তু যারা পরিশ্রম করে সাফল্য ছিনিয়ে আনেন তারা টেনিসের লিজেন্ড বলে বিবেচিত। সোনালী চুলের অধিকারী সপ্তদশী সুদর্শনা মার্কিন টেনিসকন্যা ক্যাটি লাফ্রান্সের মধ্যে রয়েছে ভবিষ্যতের কিংবদন্তি হওয়ার উপাদান। মজার ব্যাপার হচ্ছে- আনা কুর্নিকোভার মুখশ্রীর সঙ্গে অনেকটা মিল রয়েছে ক্যাটির! সম্প্রতি ওয়ালটন আন্তর্জাতিক জুনিয়র টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপে বালিকা এককের শিরোপা জিততে না পারলেও দ্বৈতে ট্রফি জিতে মান রেখেছেন আলোচিত ক্যাটি। বালিকা দ্বৈতের ফাইনালে ক্যাটি দক্ষিণ কোরিয়ার জি মিন পার্ককে সঙ্গে নিয়ে ১-৬, ৬-৪, ১০-২ গেমে চীনের ইয়াং জিং ও চে ইউ জিয়াও জুটিকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। এই আসরে মেয়েদের বিভাগে শীর্ষ বাছাই হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ক্যাটি। আসর শুরুর আগেই ভিন্ন কারণে সে লাইমলাইটে আসে। লস এ্যাঞ্জেলসে অবস্থিত টেনিস একাডেমিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ক্যাটি বাংলাদেশে প্রথমবার পা রাখে। শিরোপা জিততে ক্যাটি এতটাই মরিয়া ছিল যে, থাইল্যান্ড থেকে বিমান ভাড়া করে কম্বোডিয়ায় একটি টুর্নামেন্টে খেলে বাংলাদেশে আসে। লাল-সবুজের দেশে নির্বিঘেœ ও স্বল্পসময়ে আসার জন্য চার্টার্ড বিমান ভাড়া করে টুর্নামেন্ট শেষ হওয়া পর্যন্ত। তার সঙ্গে আসে বাবা স্টিভেন লি লাফ্রান্স, মা ওয়েনডি পারডিউ লাফ্রান্স ও কোচ সোফিয়া আলেক্সান্দা। শুধু তাই নয়, তার নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিল সশস্ত্র দেহরক্ষীও! বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা এবারই প্রথম। এতসব কা- করেও অবশ্য এককে শিরোপা জিততে পারেন নি। তবে দ্বৈতের ট্রফি জিতে কিছুটা হলেও সান্ত¡না নিয়ে মার্কিনমুল্লুকে ফিরেছে লাস্যময়ী ক্যাটি। ‘এ আসরের শীর্ষ বাছাই হিসেবে একটা স্বাভাবিক চাপ আছেই। কিন্ত এ নিয়ে আমি চিন্তিত নই। আমি ম্যাচ বাই ম্যাচ ধরে সামনে এগুতে চাই। আর অবশ্যই চাই এ আসরের শিরোপাটা একান্তই নিজের করে নিতে।’ কথাগুলো যার, তার নাম ক্যাথরিন পারডিউ লাফ্রান্স। সংক্ষেপে ক্যাটি লাফ্রান্স। আসর শুরুর আগে জনকণ্ঠের সঙ্গে একান্ত আলাপনে এমনটাই জানিয়েছিল ক্যাটি। নিজের উদ্বোধনী খেলায় (এককে) অংশ নিয়ে (প্রথম রাউন্ডে বাই পায়) প্রতিপক্ষ ভারতের ষোড়শী মুসকান রঞ্জনাকে ৬-০, ৬-৪ ব্যবধানে হারিয়ে শুভসূচনা করে ক্যাটি। দ্বিতীয় খেলায় ৪-৬, ৬-৪, ৬-২ গেমে হারায় ভারতের রমেশ ঋদ্ধিকে। উন্নীত হয় কোয়র্টার ফাইনালে। কোয়ার্টারে থেমে যায় তার অগ্রযাত্রা। যার কাছে সে হারে, সেও ভারতীয় এবং নাম মুসকান। তবে এ অন্য মুসকান। মুসকান গুপ্তা। ৬-৩, ৬-৪ গেমে হেরে যায় ক্যাটি। তবে এককের বিজয়-অভিযান থমকে গেলেও দ্বৈতে দাপটের সঙ্গেই খেলে শিরোপা কুড়িয়ে নেয় ক্যাটি। দক্ষিণ কোরিয়ার জি মিন পার্ককে সঙ্গে নিয়ে সে হারায় প্রি-কোয়ার্টারে ভারতের গৌরি ভাটিয়া-দিব্যা বাণী জুটিকে। কোয়ার্টারে হারায় ভারতের গৌরি আগারওয়াল-ঋদ্ধি রমেশ শর্মা জুটিকে। সেমিতে পরাভূত করে ভারতের মুসকান গুপ্তা-কাশইয়াপ তানিশা জুটিকে। ফাইনালের কথা তো আগেই বলা হয়েছে। এর আগে ক্যাটির সর্বশেষ দৈ¦ত শিরোপা ছিল এ বছরের ২২-২৬ আগস্ট মরিশাসে অনুষ্ঠিত ‘আইটিএফ অ-১৮ পেটিট ক্যাম্প ওপেন’-এ। ফাইনালে ভারতের শ্রীভাল্লি রাশমিকা ভামিদিপাতির সঙ্গে জুটি বেঁধে হারিয়েছিল মরিশাসের জারা লেনন এবং এমিলি বয় জুটিকে। নামের শেষ ‘ফ্রান্স’ শব্দটি থাকলেও দেশটির সঙ্গে ক্যাটির কোনো সম্পর্ক নেই। তার জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে। স্বর্ণকেশী ক্যাটির শখ হচ্ছে ভ্রমণ করা, পড়া (সাধারণ জ্ঞান সংক্রান্ত) এবং পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো। সর্বশেষ সে খেলেছে কম্বোডিয়ায় অনুষ্ঠিত ‘টেপ খুন্না মেমোরিয়াল কাপ আইটিএফ জুনিয়র’ আসরে। সেখানে সে এককে সেমিফাইনাল এবং দ্বৈতে প্রি-কোয়ার্টার পর্যন্ত খেলে। সেখানে তার পার্টনার ছিল ফিলিপিন্সের আর ভিলানুয়েভা। ক্যাটির বাবা-মা দু’জনই ছিলেন টেনিস খেলোয়াড়। বাবা শৌখিন খেলোয়াড় হলেও মা ছিলেন আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন। মাত্র তিন বছর বয়সেই তাদের অনুপ্রেরণাতেই টেনিসে হাতেখড়ি ক্যাটির। ক্যাটির আদর্শ খেলোয়াড় ড্যানিশ টেনিসকন্যা ক্যারোলিন ওজনিয়াকি। এখন দেখার বিষয়, আগামী দিনগুলোতে সে ওজনিয়াকির মতো সাফল্য পায়, নাকি কুর্নিকোভার মতো শুধু রূপের ঝলক দেখিয়েই হারিয়ে যায় টেনিস কোর্ট থেকে।
×