ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মোদির মূল্যায়ন ॥ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নাটকীয় পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই

ভারতের দিকেই ঝুঁকবেন ট্রাম্প

প্রকাশিত: ০৫:১২, ১৬ নভেম্বর ২০১৬

ভারতের দিকেই ঝুঁকবেন ট্রাম্প

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাতি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মিলিতভাবে কাজ করার অপেক্ষায় রয়েছেন, কারণ ট্রাম্পের সঙ্গে মোদির সুসম্পর্ক রয়েছে। আগামী রিপাবলিকান প্রশাসন ভারতের দিকে ভালভাবেই ঝুঁকবে বলে মোদি মনে করেন। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া অন লাইনের। মোদি সোমবার নয়াদিল্লীতে ভারতীয় পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভার স্পীকার সুমিত্রা মহাজনের আয়োজিত এক ভোজসভায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের বিজয় এবং এর তাৎপর্য সম্পর্কে তার অনানুষ্ঠানিক মূল্যায়ন তুলে ধরেন। সেখানে তিনি রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। ভোজসভা প্রায় ৭৫ মিনিট স্থায়ী হয়। তিনি কিভাবে ট্রাম্পের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে চান এ প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, মার্কিন নেতার সঙ্গে তার ভাল সম্পর্কে রয়েছে, তবে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি। তিনি বলেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নাটকীয় পরিবর্তন ঘটবে বলে আশঙ্কা করার কোন কারণ নেই। আলোচনা ডেমোক্র্যাটরা ও রিপাবলিকানরা ভারতের প্রতি কেমন আচরণ করেছেন সেই দিকে মোড় নেয় বলে জানা যায়। সামগ্রিকভাবে রিপাবলিকানরা ভারতের প্রতি বেশি বন্ধুসুলভ আচরণ করেছেন বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন বলে জানা যায়। প্রধানমন্ত্রী মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কার্যকরী সম্পর্ক গড়ে তোলেন। আলোচনায় ১৯৯০-এর দশকের ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ঝঞ্ঝাময় সময়ের ওপরও আলোকপাত করা হয়। তখন মার্কিন কূটনীতিক রবিন রাফেল জম্মু ও কাশ্মীরকে বিরোধপূর্ণ ভূখ- বলে অভিহিত করে এক উত্তপ্ত বিতর্ক উস্কে দেন এবং পাকিস্তানকে মার্কিন সামরিক সহায়তা দানে সমর্থন করেন। মোদি উল্লেখ করেন যে, রাফেলের সাবেক স্বামী পাকিস্তানে এক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন। এ দুর্ঘটনায় পাকিস্তানের সামরিক শাসক জিয়াউল হকও মারা যান। রাফেল দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক অন্যতম প্রথম মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। কারগিল যুদ্ধের পর ২০০০ সালে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের ভারত সফরের পরই কেবল যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের দিক থেকে ভারতের দিকে ঝুঁকতে শুরু করে। জানা যায়, মোদি মন্তব্য করেন যে, কোন কোন ডেমোক্র্যাটিক প্রশাসন অধিকতর আত্মকেন্দ্রিক হয়েছে, যদিও সাম্প্রতিক সরকারগুলো ভারতের দিকে সমতার ভিত্তিতে দৃষ্টি দিয়েছে। মেজাজমর্জির দিক দিয়ে দৃশ্যত পার্থক্য সত্ত্বেও ওবামার সঙ্গে একযোগে কাজ করতে সমর্থ হওয়াই মোদির অন্যতম উল্লেখযোগ্য সাফল্য। মার্কিন ভাষ্যকাররা মন্তব্য করেন যে, বিজেপির আমলে অসষ্ণিুতা বেড়েছে বলে মোদির সমালোচকদের দাবি এবং ওবামার মানবাধিকারের প্রতি সমর্থন সত্ত্বেও দু’নেতা ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নিয়ে প্রসারিত ধারণা নিতে সমর্থ হন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মোদি তার বিভিন্ন সাক্ষাতকারে বলেন, তিনি তার সম্পর্কে মিডিয়ার দেয়া ধারণা দূর করতে এবং নিজেকে এক বাস্তববাদী ও দায়িত্বশীল নেতা হিসেবে উপস্থাপন করতে ব্যাপকভাবে বিদেশী নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। মোদি ও ট্রাম্পের বন্ধুত্ব হবে তুলনাহীন ॥ এডিসন (নিউজার্সি) থেকে পিটিআই জানায়; প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনান্ড ট্রাম্পের বন্ধুত্ব হবে তুলনাহীন। তাদের নেতৃত্বে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যের পরিমাণ এক দশকেরও কম সময়ে বছরে বিশাল এক লাখ কোটি ডলারে পৌঁছতে পারে। এক বিশিষ্ট ভারতীয়-আমেরিকান শিল্পপতি ও ট্রাম্প সমর্থক এ কথা বলেন। রিপাবলিকান হিন্দু কোয়ালিশনের প্রতিষ্ঠাতা শালাভ কুমার ট্রাম্পের নির্বাচনী জয় উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবর্ধনা সভায় বলেন, ট্রাম্প সরকার ও মোদি সরকার যে সর্বোত্তম বন্ধু হবে এ নিয়ে আমার মনে কোন সন্দেহ নেই। বিশ্ব-নেতৃত্বের ইতিহাসে দু’নেতার বন্ধুত্ব হবে তুলনাবিহীন। কুমার আস্থা ব্যক্ত করেন যে, ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য প্রেসিডেন্ট হবেন এবং মোদি সরকারও দ্বিতীয় মেয়াদ পাবেন। এতে উভয় নেতা বিশ্ব মঞ্চে একযোগে কাজ করার অন্তত আট বছর সময় পারে। দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরালো বৃদ্ধির কথা উদ্ধৃত করে কুমার বলেন, ট্রাম্প সরকার ও মোদি সরকারের আমলে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যের পরিমাণ পরবর্তী আট বছরে প্রতি সালে এক লাখ কোটি ডলারে পৌঁছবে।
×