ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থ মন্ত্রণালয় ছাড় দিলেও রেল ভবনে চক্রান্ত;###;১০৭ কোটি টাকা বরাদ্দ ছাড়ের আবেদন সমিতির

সরবরাহকারীদের ৩০ কোটি টাকা আটকা

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ১৬ নভেম্বর ২০১৬

সরবরাহকারীদের ৩০ কোটি টাকা আটকা

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ নানা পাঁয়তারায় পূর্বাঞ্চলের সরবরাহকারীদের প্রায় ৩০ কোটি টাকা আটকে রেখেছে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অর্থ) এবং চট্টগ্রামের প্রধান অর্থ উপদেষ্টা ও হিসাব অধিকর্তার দফতর। অভিযোগ উঠেছে, অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেটের অর্থ ছাড় দিলেও সরবরাহকারীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে অর্থ হাতিয়ে নিতে চক্রান্ত চলছে রেল ভবনে। তবে সদ্য বিদায়ী অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অর্থ) নিশ্চিত করেছেন অর্থ ছাড়ের বিষয়টি। কিন্তু সরবরাহকারীদের ৩০ কোটি টাকার বিল পরিশোধে বাধা কোথায় বা কোন অশুভ শক্তি কাজ করছে তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। অথচ বর্তমানে সরবরাহকারীদের সঙ্গে প্রায় শত কোটি টাকার ক্রয় প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তবে রেলের মতো বৃহদায়তন সরকারী প্রতিষ্ঠানে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করার পেছনে যারা কাজ করছে তারা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতে এমন পাঁয়তারা করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এদিকে সরবরাহকারীদের চাপের মুখে পূর্বাঞ্চলীয় ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে স্পেয়ার্স এ্যান্ড এক্সেসোরিজ সাপ্লাইয়ার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির পক্ষ থেকে ১০৭ কোটি টাকা অর্থ ছাড়ের জন্য অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অর্থ) বরাবর আবেদন করা হলেও কোন পদক্ষেপ নেই অর্থ মন্ত্রণালয় কিংবা রেল মন্ত্রণালয়ের। ফলে সরবরাহকারীদের মাত্র ৪ মাসে আটকে পড়া বিলের ৩০ কোটি টাকা কিভাবে পরিশোধ হবে তা নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। এদিকে এ বিষয়ে জানতে রেলমন্ত্রী মজিবুল হকের মোবাইলে কর দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এ ব্যাপারে সদ্য বিদায়ী অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অর্থ) জনকণ্ঠকে জানান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ছাড় পাওয়া গেছে। কিন্তু কি কারণে সরবরাহকারীদের পাওনা পরিশোধ বন্ধ রয়েছে সে বিষয়টি তিনি এড়িয়ে গেছেন। অভিযোগ রয়েছে, পলোগ্রউন্ডের অতিরিক্ত অর্থ উপদেষ্টা ও হিসাব অধিকর্তার দফতরে (টিএ ব্রাঞ্চ) প্রায় প্রতিদিনই ধর্ণা দিচ্ছে দুই শতাধিক সরবরাহকারী। অর্থ মন্ত্রণালয় গত অর্থবছরে ৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও এই বছর দিয়েছে মাত্র ৪৩ কোটি টাকা। যা নিয়ে বেকায়দায় রয়েছে অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা। গত অর্থবছরে রেলের পূর্বাঞ্চলে সরবরাহকারীদের কাছ থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে প্রায় ৮২ কোটি ক্রয়াদেশ বা চুক্তিপত্র সম্পন্ন হয়েছে। গত বছরের বাকি প্রায় ১৫ কোটি টাকা চলতি অর্থবছরের বরাদ্দ থেকে পরিশোধ দেখানো হয়েছে। এমন তথ্যের কারণে অক্টোবরের শেষের দিকে অতিরিক্ত মহাপরিচালকের (অর্থ) দফতর থেকে প্রেরিত চিঠির কারণে সরবরাহকারীদের অর্থ পরিশোধ বন্ধ রয়েছে এমন অভিযোগ সরবরাহকারীদের। আরও অভিযোগ উঠেছে, গত মাসের শেষের দিকে অতিরিক্ত মহাপরিচালকের (অর্থ) এক নিষেধাজ্ঞা চিঠির কারণে সরবরাহকারীদের চেক প্রদান করছে না চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডের অতিরিক্ত অর্থ উপদেষ্টা ও হিসাব অধিকর্তার দফতর (টিএ ব্রাঞ্চ)। আবার অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বাজেট ছাড়ের অনুমতি পাওয়ার পরও কেন চেক দিচ্ছে না এমন প্রশ্নে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে ঋণের মাধ্যমে ব্যবসা করা কয়েক সরবরাহকারীরা। অথচ চুক্তি অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ না করলে বা চুক্তিকৃত পণ্য সরবরাহে দেরি হলে জরিমানা বা নিরাপত্তা জামানত কেটে রাখার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু অর্থ বিভাগ সরবরাহকারীদের ৩০ কোটি টাকার চেক প্রদান না করায় উল্টো ঋণকৃত অর্থের সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। এতে মুনাফার পরিবর্তে লোকসানের খেসারত দিতে হবে সরবরাহকারীদের। এ ব্যাপারে পূর্বাঞ্চলীয় বাংলাদেশ রেলওয়ে স্পেয়ার্স এ্যান্ড এক্সেসোরিজ সাপ্লাইয়ার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফেরদৌস হুদা চৌধুরী জনকণ্ঠকে জানান, গত ৪ মাসেও কর্তৃপক্ষ সরবরাহকারীদের প্রাপ্য বিল পরিশোধ না করায় অনেকে ঋণের মুখে পড়ে ব্যবসা বন্ধের উপক্রম। ব্যবসা স্বাভাবিক রাখতে ১০৭ কোটি টাকা ছাড়ের আবেদন করা হয়েছে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অর্থ) বরাবর। এ বিষয়ে আরও ৫টি দফতরে অনুলিপি প্রেরণ করা হয়েছে।
×