ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বেলাল মুনতাসির

স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হতে পারে তরুণ্যের ভাষা

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ১৫ নভেম্বর ২০১৬

স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হতে পারে তরুণ্যের ভাষা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাকি হাসান। ছোটবেলা থেকে জীবনের নানা অনুষঙ্গ দেখতে দেখতে সে বড় হয়েছে। জমা হয়েছে কত রকম ভাবনা তার। জগত সম্পর্কে টুকিটাকি চিন্তা-ভাবনাও কম নয়। নিত্যনতুন ভাবনা এসে দানা বাঁধে মনে। সেই সব মনের কথা প্রকাশ করতে টুকিটাকি লেখালেখিও করে সে। লিখে রাখে জীবনের নানা স্মৃতি, অভিজ্ঞতা। এখন তার ঝোঁক চলচ্চিত্রের দিকে। চলচ্চিত্রকে সে আবিষ্কার করেছে কার্যকর ভাষা হিসেবে। ইদানিং তার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কের চিন্তা-ভাবনা ফুটিয়ে তুলতে সে নির্মাণ করছে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। একবিংশ শতাব্দীর এই যুগে শুধু সাকি হাসান নয়, তরুণ প্রজন্মের অনেকেই চলচ্চিত্রকে দেখছে গণমানুষের সঙ্গে যোগাযোগের কার্যকর ভাষা হিসেবে। নির্মাণ করছে বিভিন্ন রকম স্বল্পদৈর্ঘ্যরে চলচ্চিত্র। একটি অন্ধকার চোরকোণা বাক্সের সামনের তলে একটি ছোট ছিদ্র থাকলে বাক্সের বিপরীত দিকের তলে উল্টোভাবে সামনের দৃশ্য ধরা পড়ে। খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০ অব্দে এই রকম একটি বর্ণনা দিয়েছেন গ্রীক দার্শনিক এ্যারিস্টটল। তারপর থেকে স্মৃতির খাতায় সেই দৃশ্য ধরে রাখতে চলে অবিরাম সাধনা। অবশেষে ১৮২৬ সালে ফরাসী আলোকচিত্রী জোসেফ নিসফোর নিপস্্ সফলভাবে একটি স্থিরচিত্র তুলতে সক্ষম হন। এর পরেই ঘটে এক যুগান্তকারী ঘটনা। ঘোড়-দৌড়ের সময় ঘোড়ার কয়টি পা একই সময়ে মাটি থেকে উপরে থাকে সেই দৃশ্য ধারণ করতে গিয়ে এ্যাডওয়ার্ড মাইব্রিজ তোলেন বেশকিছু ছবি। ১৮৭৯ সালে ছবিগুলো একসঙ্গে প্রদর্শন করতে গিয়ে আবিষ্কৃত হয় ঘোড়ার চলমান চিত্র বা চলচ্চিত্র। বিবর্তনের ধারায় চলচ্চিত্রে যুক্ত হয়েছে শব্দসহ আরও নতুন নতুন মাত্রা। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকেই একটি গণমাধ্যম হিসেবে চলচ্চিত্রের সূচনা। আর এখনকার চলচ্চিত্র কোন্ অবস্থায় আছে সেই খোঁজ-খবর তো সবারই জানা। যেদিন ক্যামেরার দাম কলমের মতো আর ফিল্মের (সেলুলয়েড ফিল্ম) দাম কালির মতো হবে সেই দিন চলচ্চিত্র হবে গণমানুষের কথা। চলচ্চিত্রের একজন বিজ্ঞ সমালোচক অনেক আগেই এই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। কথাটির বাস্তবায়ন পুরোপুরি না ঘটলেও আগের চাইতে সহজসাধ্য হয়েছে এখনকার চলচ্চিত্র নির্মাণ। একটা সময় ছিল যে কেউ চাইলেই চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে পারত না। ব্যয়বহুল এই শিল্প-রচনা ছিল গণমানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। কিন্তু প্রযুক্তির অগ্রগতি যেমন মুক্ত করেছে চলচ্চিত্রকে তেমনি কমেছে নির্মাণ ব্যয়। এখন তরুণ প্রজন্মের অনেকেই চলচ্চিত্র আঙ্গিনায় সোচ্চার। সে সব স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে ফুটে উঠছে তাদের চিন্তা-ভাবনা। চলচ্চিত্র নির্মাণ একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। প্রি-প্রোডাকশন, প্রোডাকশন, পোস্ট-প্রোডাকশনের মধ্য দিয়ে এই প্রক্রিয়ার আবর্তন। মাঝপথে রয়েছে আরও অনেক ধাপ। অনেকে শুরু করবেন করবেন বলে ভাবেন। কিন্তু কোথা থেকে শুরু করবেন, কি দিয়ে শুরু করবেন খুঁজে পায় না তার কোন কূল-কিনারা। নতুন নির্মাতাদের জন্য বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক ইমরান হোসেন। শেখা : সপ্তশিল্পের সমাহার চলচ্চিত্রের রয়েছে নিজস্ব ভাষা। এই ভাষা রপ্ত করতে শেখার কোন বিকল্প নেই। অভিনয়, আলোকচিত্র, সঙ্গীত, নৃত্যকলা, স্থাপত্যকলাসহ সপ্তশিল্পে থাকতে হবে গভীর পদচারণা। চলচ্চিত্র নির্মাণ বিষয়ে রয়েছে প্রচুর বই, ইন্টারনেটে আছে অসংখ্য টিউটোরিয়াল। পড়াশুনার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের এবং বিভিন্ন দৈর্ঘ্যরে চলচ্চিত্র দেখতে হবে। চাইলে করে নিতে পারেন কিছু এ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্স। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠানে রয়েছে স্বল্প সময়ের এ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্স। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে উচ্চশিক্ষার সুযোগ। চেতনা : মানুষের জীবনের নানা রং। জীবন সমুদ্রে কত জোয়ার-ভাটা, ঝড়-তুফান। সে সব জীবগাথা উঠে আসবে চলচ্চিত্রে। তাই জীবনকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। জীবনের প্রতিটি অনুষঙ্গকে নিখুঁতভাবে জোড়া দিতে হবে ফ্রেমে ফ্রেমে। সমাজ, জীবন, পারিপার্শ্বিকতা এসব নিয়ে নিজের মধ্যে তৈরি করতে হবে সুন্দর একটি চেতনার বলয়। টিম : চলচ্চিত্র ব্যক্তিগতভাবে নির্মাণের বিষয় নয়। এখানে অনেক রকম কাজ থাকে। অভিনয়, চিত্রগ্রহণ, শিল্প-নির্দেশনাসহ নানা রকম কাজের জন্য একটি টিম থাকলে সুবিধা হয়। উপকরণ : প্রথমদিকে ডিজিটাল ক্যামেরা কিংবা ভাল মোবাইল ক্যামেরা দিয়েও শুরু করা যেতে পারে। মোটামুটি মানের একটি সাউন্ড রেকর্ডার শব্দ সংযোজনের কাজে লাগবে। সম্পাদনার জন্য প্রয়োজন ভাল মানের একটি কম্পিউটার। ভাল নির্মাণের জন্য লাগবে আরও অনেক উপকরণ। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে সাধ্য অনুসারে নিজের মতো করে শুরু করুন। ধীরে ধীরে গড়ে উঠবে তিলোত্তম শিল্প। নির্মিত চলচ্চিত্র প্রকাশ করতে পারেন ইউটিউব, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বাছাই করা কয়েকটি দেখানো হয়। সম্প্রতি কিছু টেলিভিশন চ্যানেল স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র সম্প্রচারের উদ্যোগ নিচ্ছে। আপনার কল্পচিত্র ভাল চলচ্চিত্র হলে তা পর্দায়ও দেখা যেতে পারে ছড়িয়ে পড়তে পারে আপনার স্বপ্নীল ভাবনা।
×