ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সুমন্ত গুপ্ত

এহসান হকের এগিয়ে চলা

প্রকাশিত: ০৬:২২, ১৫ নভেম্বর ২০১৬

এহসান হকের এগিয়ে চলা

বাংলাদেশের তরুণ এহসান হক। বাবা এনামুল হক পেশায় একজন ব্যবসায়ী, মা প্রয়াত সৈয়দা লুৎফে সাবার তিন সন্তানের একজন এহসান হক! পড়াশোনা করেছেন ঢাকার উদয়ন স্কুল এবং পরে ঢাকা কলেজে। এরপরই যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক। ইউনিভার্সিটি অব মেমফিস থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর। ২০০৮ সাল থেকে এমআইটির বিখ্যাত মিডিয়া ল্যাবে কাজ করেন মানুষের মুখাবয়ব ও কণ্ঠ বিশ্লেষণ করে যন্ত্রকে মানুষের আবেগ শনাক্ত করতে সাহায্য করা নিয়ে। ২০০৯ সালে ওয়াল্ট ডিজনির গবেষণাগারে প্রথম স্বয়ংক্রিয় রোবট (যা দেখতে, শুনতে এবং নিজের সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম) তৈরিতে সাহায্য করেছেন তরুণ এহসান। ২০১০ সালে আইবিএম ওয়াটসন গবেষণাগারে তৈরি করেন বুদ্ধিমান বিজ্ঞাপন যন্ত্র, যা পথে চলতে থাকা মানুষের গতিবিধি, লিঙ্গ, বয়স, পরনের কাপড়ের রং ও ধরন বুঝে মানানসই বিজ্ঞাপন প্রচার করে! এরপর ২০১৩ সালে তৈরি করেন ‘মুড মিটার’, যা মানুষের চেহারা দেখে বলে দেয় রাগ না খুশি। এহসান হকের আরেক কাজ হলো মানুষের কথা ও শারীরিক ভাষার গাণিতিক মডেল বের করে সেটাকে কাজে লাগানো। এর মাধ্যমে তৈরি হবে এমন যন্ত্র, যা অটিজম বা ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্তদের আলাপচারিতায়, চাকরিপ্রার্থীদের সাক্ষাতকারের প্রস্তুতিতে, এমনকি বিতার্কিক বা বক্তাদের তাঁদের বক্তৃতার ভুলগুলো সংশোধন করতে সহায়তা করবে। এরই মধ্যে বানানো হয়েছে একটি বিশেষ চশমা, যা বক্তৃতা দেয়ার সময় বক্তাকে আরও সাবলীল হতে সাহায্য করে। ২০১৩ সালে এমআইটি থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন এহসান হক। তার পিএইচডি গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল কিভাবে কম্পিউটার ব্যবহার করে মানুষের যোগাযোগ দক্ষতার উন্নয়ন ঘটানো যায়। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব রচেস্টারের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। আর এর পাশাপাশি নিয়োজিত আছেন বিভিন্ন গবেষণায়। তিনি উদ্ভাবন করেছেন দুটি কম্পিউটার সিস্টেম যেগুলো মানুষের যোগাযোগ সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। তার উদ্ভাবিত এ কম্পিউটার সিস্টেম দুটি হলো মাক (গু অঁঃড়সধঃবফ ঈড়হাবৎংধঃরড়হ ঈড়ধপয) এবং লিসা (খরাব ওহঃবৎধপঃরাব ঝড়পরধষ ঝশরষষং অংংরংঃধহঃ)। এমআইটি টেকনোলজি রিভিউ জার্নালে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, মাক এমন একটি প্রযুক্তি যা আপনার যোগাযোগ দক্ষতা যাচাই করবে এবং সে অনুসারে কিভাবে এ দক্ষতার উন্নয়ন ঘটানো যায়, সে ব্যাপারে পরামর্শ দেবে। এতে থাকছে ভার্চুয়াল বিজনেস উইমেন যে আপনার সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবে। ভার্চুয়াল বিজনেস উইমেন মূলত একটি থ্রিডি অ্যানিমেটেড ক্যারাক্টার যে কথা শোনার পাশাপাশি আপনার বিভিন্ন অভিব্যক্তি, কথা বলার ধরন এসব বিষয়ও তদারকি করবে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশ্ন করে কনভারসেশনটিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে এ ভার্চুয়াল এ্যাসিসটেন্ট। পুরো আলোচনা শেষে সে এর ওপর ভিত্তি করে একটি মতামত দেবে যাতে থাকবে আপনার যোগাযোগ দক্ষতার ওপর একটি প্রতিবেদন। যার মধ্যে আছে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, আই কন্টাক্ট, কথা বলার দ্রুততা, গলার স্বর প্রভৃতি বিষয়ও। অর্থাৎ এ পুরো প্রক্রিয়ায় একজন সাক্ষাতকারগ্রহীতা হিসেবে কাজ করবে মাকের এই ভার্চুয়াল চরিত্রটি। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) জার্নাল টেকনোলজি রিভিউ ঘোষিত ২০১৬ সালে ৩৫ বছরের কম বয়সী সেরা ৩৫ জন উদ্ভাবকের সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন বাংলাদেশের তরুণ এহসান হক। জনহিতকর উদ্ভাবনের জন্য এ তালিকায় জায়গা পেয়েছেন এহসান। এর আগে এই সম্মাননা যাঁরা পেয়েছেন তাঁদের মধ্যে আছেন গুগলের দুই প্রতিষ্ঠাতা সের্গেইনি ও ল্যারি পেজ এবং ফেসবুকের মার্ক জাকারবার্গ।
×