ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চিটাগাং ভাইকিংসের টানা তৃতীয় হার

বরিশাল বুলসের টানা তিন জয়

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৫ নভেম্বর ২০১৬

বরিশাল বুলসের টানা তিন জয়

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ প্রতিশোধ নিয়ে নিলেন মুশফিকুর রহীম। গত আসরে তামিম ইকবালের দল চিটাগাং ভাইকিংসের কাছে মাত্র ১ রানে পরাজয়ের আক্ষেপ সঙ্গী হয়েছিল সিলেট সুপারস্টারস অধিনায়ক মুশফিকের। এবার তার দল বরিশাল বুলস ৭ উইকেটে বিধ্বস্ত করল চিটাগাং ভাইকিংসকে। টানা তিন ম্যাচ জিতল বরিশাল আর টানা তিন ম্যাচে পরাজয় লেখা হলো চিটাগাং ভাইকিংসের। এই ম্যাচে দারুণ এক মাইলফলকও ছুঁয়েছেন মুশফিকুর রহীম। প্রথম ও একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে বিপিএলে ১০০০ রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন তিনি। মাত্র ৫ রান প্রয়োজন ছিল তার সেটা ছুঁতে। মুশফিক ১০ রানে অপরাজিত থেকে দলকে বিজয়ী করেই মাঠ ছাড়েন। টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে তামিম ইকবালের ৭৫ রানের ঝড়ো ইনিংস ভর দিয়ে চিটাগাং তুলেছিল ৩ উইকেটে ১৬৩ রান। জবাবে ডেভিড মালান ও শাহরিয়ার নাফীসের জোড়া অর্ধশতকে ১৯.৪ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ১৬৭ রান তুলেই জয় ছিনিয়ে নেয় বরিশাল। ম্যাচসেরা মালান ৭৮ রানে অপরাজিত ছিলেন। ব্যাটিং নিয়ে আগের ম্যাচেই আক্ষেপ ঝরেছিল তামিমের কণ্ঠে। দলের ব্যাটসম্যানদের মাথায় সমস্যা আছে এমন কথাও বলেছিলেন ক্ষিপ্ত হয়ে। তামিম নিজেও প্রথম ম্যাচে ফিফটি হাঁকানোর পর আর তেমন কিছুই করতে পারেননি। ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণেই টানা দুই ম্যাচ হারতে হয়েছে। এবার অধিনায়ক ও দলের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান তামিম নিজেই দলের সংগ্রহকে ভাল একটি অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব কাঁধে নিলেন। তামিমের উদ্বোধন সঙ্গী এবার পাল্টে জহুরুল ইসলামকে নামানো হয়। এই পরিবর্তনটা বেশ ফলপ্রসূ হয়েছে। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ৪৬ রান তোলেন দু’জনে। শেষ পর্যন্ত উদ্বোধনী জুটিতেই ১১৬ রান তোলে চিটাগাং। এবারের আসরে প্রতি দলের ওপেনিং জুটিই মোটামুটি ব্যর্থ। সেটা কেটে গেছে তামিম-জহুরুলের এ জুটির কল্যাণে। চলতি আসরে প্রথম উইকেটে এটিই একমাত্র সেঞ্চুরি পার্টনারশিপ। তবে এটি ছাড়াও দুটি সেঞ্চুরি (একই ম্যাচে বরিশাল বুলস ইনিংসের দ্বিতীয় উইকেটে ১১০* ও আরেকটি তৃতীয় উইকেটে ১১২) পার্টনারশিপ দেখা গেছে এবার। তামিম বেশ আক্রমণাত্মক ও স্ট্রাইক নেয়ার ক্ষেত্রে দুর্বার থাকলেও জহুরুল ছিলেন অনেকটাই ধীরস্থির। তবে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন তিনি তামিমকে। চলতি আসরে নিজের দ্বিতীয় অর্ধশতক আদায় করে নেন মাত্র ৩৮ বলে। এরপর আরও আক্রমণাত্মক হয়েছেন। বাকি ১৩ বলে আরও ২৫ রান করেন। শেষ পর্যন্ত তামিম ঝড় থামিয়েছেন পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বি। ৫১ বলে ১০ চার ও ২ ছক্কায় ৭৫ রান করার পর রাব্বির নিচু হয়ে আসা বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন তামিম। চলতি আসরে এটিই জাতীয় দলের হয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট খেলা রাব্বির প্রথম ম্যাচ। তামিম ফিরে গেলেও ওই সময় মনে হচ্ছিল ১৭০/৮০ রানের বড় সংগ্রহ পাবে চিটাগাং। কিন্তু পরের ওভারেই ৩৪ বলে ৪ চারে ৩৬ রান করা জহুরুল ফিরে যান। শেষ ৫ ওভারে আর মাত্র ৪১ রান করতে পেরেছে চিটাগাং আরেকটি উইকেট হারিয়ে। এনামুল হক বিজয় ১৯ বলে ২ চার ও ১ ছয়ে ২৭ রানে অপরাজিত থাকেন। আগের তিন ম্যাচে ওপেনিংয়ে নামা ডোয়াইন স্মিথ চার নম্বরে নেমে ১৭ বলে ১ ছয়ে ১৭ রান করেন। তিনি ইনিংসের শেষ বলে আউট হয়ে যান। ৩ উইকেটে ১৬৩ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ পায় চিটাগাং ভাইকিংস। জবাব দিতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারায় বরিশাল বুলস। প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন ইংলিশ ওপেনার জশুয়া কব। তাকে দ্বিতীয় ওভারেই শিকার করেন পেসার শুভাশিষ রায় সরাসরি বোল্ড করে দিয়ে। শুরুতেই ধাক্কাটা লাগলেও সেটাকে তোয়াক্কা করেননি দারুণ ফর্মে থাকা শাহরিয়ার নাফীস ও ইংলিশ ক্রিকেটার ডেভিড মালান। দ্বিতীয় উইকেটে তাদের জুটি ঘাম ঝরিয়ে ছাড়ে চিটাগাং বোলারদের। আগের তিন ম্যাচে তেমন সুবিধা করতে পারেননি মালান। কিন্তু এদিন দ্বিতীয় উইকেটে ১৫০ রানের জুটি গড়লেন নাফীসকে সঙ্গে নিয়ে। বিপিএল ইতিহাসে যেকোন উইকেটে সর্বোচ্চ জুটির ক্ষেত্রে এটি তৃতীয় সেরা পার্টনারশিপ। আর দ্বিতীয় উইকেটে সেরা জুটির রেকর্ড। দু’জনই অর্ধশতক পেয়ে যান। নাফীস আগের তিন ম্যাচের দুটিতেই অর্ধশতক হাঁকিয়ে ছিলেন। এবার তিনি অর্ধশতক হাঁকানোর পর ৫৯ বলে ৭ চার ও ১ ছক্কায় ৬৫ রানে ফিরে গেলে জুটি ভাঙ্গে। পরের বলেই পাকিস্তানী পেসার ইমরান খান জুনিয়র শিকার করেন থিসারা পেরেরা। তবে তখন জয় থেকে মাত্র ৭ রান দূরে বরিশাল। তাদের এমন ব্যাটিংয়েও ম্যাচ থেকে ছিটকে যায়নি চিটাগাং। কারণ ৩ ওভারে তখনও বরিশালের প্রয়োজন ছিল ৩৪ রানের! ইনিংসের ১৮তম ওভারেই নিয়ন্ত্রণ চলে যায় বরিশাল বুলসের অধীনে। মালান টানা তিন ছক্কাসহ ডোয়াইন স্মিথের করা ওই ওভারে ২০ রান তুলে নেন তিনি। নাফীস ফিরে গেলেও মালান থেকেছেন শেষ পর্যন্ত অপরাজিত। তিনি ৪৮ বলে ৩ চার ও ৭ ছক্কায় ৭৮ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে দলের জয়কে সহজ করে দেন। অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমও দারুণ ফর্মে আছেন। শেষ ওভারে তিনি মাত্র ৪ বল থেকেই দুটি চার হাঁকিয়ে এবং একটি দুই রান নিয়ে দলকে জয়ী করে মাঠ ছাড়েন। শুভাশিষকে দ্বিতীয় বলে চার হাঁকানোর সঙ্গে সঙ্গেই নতুন এক মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলেন মুশফিক যা বিপিএলে আর কেউ ছুঁতে পারেননি। প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে বিপিএলে ১০০০ রানের মাইলফল পেরিয়ে যান তিনি। এই ম্যাচ শেষে ৩৮ ম্যাচে তার রান ৪১.৮৭ গড়ে ১০০৫! দুই বল বাকি থাকতেই ৩ উইকেট হারিয়ে ১৬৭ রান তুলে জয় নিশ্চিত করে বরিশাল বুলস। ৭ উইকেটে জিতল তারা।
×