ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

নূপুরের নিক্বণে শুরু দ্বিতীয় জাতীয় নৃত্য নাট্যোৎসব

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৫ নভেম্বর ২০১৬

নূপুরের নিক্বণে শুরু দ্বিতীয় জাতীয় নৃত্য নাট্যোৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নূপুরের নিক্বণে সচকিত মঞ্চ। নৃত্যশিল্পীর নাচের মুদ্রায় দর্শক। সেই মুদ্রার সঙ্গে অভিব্যক্তির সম্মিলনে প্রকাশিত হলো বিষয়। এভাবেই অনবদ্য নাচের আশ্রয়ে সোমবার শুরু হলো দ্বিতীয় জাতীয় নৃত্যনাট্যোৎসব। ১৫টি নৃত্যনাট্যে সাজানো আট দিনের এ উৎসবের আয়োজক বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা। সহযোগিতায় রয়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। হেমন্ত সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে সূচনা হয় উৎসবের। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেনÑ সংস্কৃতি সচিব আকতারী মমতাজ, ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের বাংলাদেশ কেন্দ্রের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ ও প্রবীণ নৃত্যশিল্পী রাহিজা খানম ঝুনু। সভাপতিত্ব করেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী। উদ্বোধনী বক্তব্যে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে মানুষের যুদ্ধে নৃত্যনাট্য হতে পারে এক শক্ত যুদ্ধাস্ত্র। এ মুহূর্তে নৃত্যনাট্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও মূল্যবান ভূমিকা পালন করতে পারে। মানবিক গুণাবলী বিকাশে নৃত্যনাট্য চর্চার গুরুত্ব তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, সংস্কৃতির নানা মাধ্যমের মধ্যে নৃত্যনাট্য একটি শক্তিশালী মাধ্যম, যা নানান শিক্ষা প্রদান করে। এ মাধ্যমটি থেকে নানান রস আস্বাদন করে আমরা সমৃদ্ধ হতে পারি। নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, আমাদের দেশে সাংস্কৃতিক বিপর্যয় ঘটে গেছে। ঘুরে দাঁড়াতে হলে এখন সুচিন্তিতভাবে নতুন করে কর্মপ্রক্রিয়া শুরু করা উচিত। জাতীয় উৎসবগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে হওয়ার চেয়ে সারাদেশের স্কুল-কলেজে হওয়াই গুরুত্বপূর্ণ। সংস্কৃতি খাতে বাজেটের অপ্রতুলতার বিষয়টি তুলে ধরে রাহিজা খানম ঝুনু বলেন, বাজেটের জন্য আমরা অনেক ভাল কাজ করতে চেয়েও পারি না। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে মঞ্চস্থ হয় নৃত্যনাট্য নকশীকাঁথার মাঠ। উপস্থাপন করে বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টসের শিল্পী। নৃত্যনাট্যের পরিচালনায় ছিলেন ফারহানা চৌধুরী। আট দিন উৎসবের দ্বিতীয় দিনে আজ মঙ্গলবার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল হলে বগুড়ার আমরা কজন শিল্পীগোষ্ঠী মঞ্চস্থ করবে ‘বারামখানা’, একই ভেন্যুতে পরে নৃত্যনাট্য ‘শ্যামা’ পরিবেশন করবে ঢাকার নৃত্যালোক। ২২ নবেম্বর পর্যন্ত চলমান উৎসবে মঞ্চস্থ হবে ১৫টি নৃত্যনাট্য। নৃত্যনাট্যগুলো পরিবেশিত হবে প্রতিদিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা ও সাড়ে সাতটায়। উৎসবে পরিবেশিত কয়েকটি নৃত্যনাট্য হলোÑ কাল মৃগয়া, কবর, মহাজনের নাও, শাপমোচন, ইছামতির বাঁকে, ভানু সিংহের পদাবলী, সোনাই মাধব, আমার স্বদেশ আমার ভালোবাসা, চিত্রাঙ্গদা, মহুয়া, প্রসঙ্গ ৪৭ ও রক্ত লাল অহংকার। উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে ২২ নবেম্বর। এদিন অতিথি থাকবেন ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের সভাপতি রামেন্দু মজুমদার, নৃত্যব্যক্তিত্ব লায়লা হাসান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। সভাপতিত্ব করবেন নৃত্যশিল্পী সংস্থার সভাপতি মীনু হক। মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভের যাত্রা শুরু ॥ মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ হলো মুক্তিযুদ্ধের বই, দলিল, মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেট, ডকুমেন্টারি, ভিডিও ফুটেজ, চলচ্চিত্র, অডিও ও আলোকচিত্রের একটি ডিজিটাল লাইব্রেরি ও আর্কাইভ। এটি ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাঠক-গবেষক সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারবেন। এই আর্কাইভে আছে প্রায় চার হাজার বই, মুক্তিযুদ্ধ সময়কালীন বিভিন্ন দলিল, মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী সময়ের উল্লেখযোগ্য ঘটনার পেপার কাটিং, মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেট, শতাধিক ডকুমেন্টারি, সহস্রাধিক ভিডিও ফুটেজ ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রায় ৫ হাজার ছবি। এ ওয়েবসাইটে এসব বিষয়ে তথ্যাদি পাওয়া যাবে। আর এ কাজটি সম্পাদন করেছে মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ ট্রাস্ট। সোমবার অনুষ্ঠানিকভাবে যাত্র শুরু হলো এই আর্কাইভটির। এ উপলক্ষে প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে এদিন এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ আয়োজনে উপস্থিত ছিলেনÑ শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক মোস্তফা হোসেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীর সন্তান ডাঃ নুজহাত চৌধুরী, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডাঃ ইমরান এইচ সরকার, মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ ট্রাস্টের পরিচালক সাব্বির হোসেন ও ট্রাস্টের সভাপতি শান্তা আনোয়ার প্রমুখ। বক্তারা বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ইতিহাস বিকৃতি হয়েছে বারবার। জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টাও হয়েছে। কিন্তু সে চেষ্টা পুরোপুরি সফল হয়নি। সত্য সবার সামনে উন্মোচিত। আর এ সত্যকে ধারণ করেই তৈরি হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ই-আর্কাইভ, যা নতুন প্রজন্মসহ সকলের সঠিক ইতিহাস জানতে সাহায্য করবে। ই-আর্কাইভে মুক্তিযুদ্ধের এ দলিলগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে বিভিন্ন সংগ্রাহক, ব্রিটিশ লাইব্রেরি, আমেরিকান লাইব্রেরি অব কংগ্রেস, সুইডেন ও অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন লাইব্রেরিসহ দেশী-বিদেশী আর্কাইভস থেকে।
×