ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দাবি পূরণ না হলে ত্রাণ নেবেন না সাঁওতালরা

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৫ নভেম্বর ২০১৬

দাবি পূরণ না হলে ত্রাণ নেবেন না সাঁওতালরা

নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা, ১৪ নবেম্বর ॥ গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের উচ্ছেদ অভিযানে ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতাল পরিবারদের জন্য জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পুনর্বাসন ও ত্রাণ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন সাঁওতালরা। সোমবার গোবিন্দগঞ্জের সাপমারা ইউনিয়নের মাদারপুর ও জয়পুর পল্লীর উচ্ছেদ অভিযানে ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতালদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করতে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল হান্নান। তার সঙ্গে ওই ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুর রউফসহ প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ত্রাণসামগ্রী নিয়ে মাদারপুর গ্রামে উপস্থিত হন। কিন্তু প্রাথমিক তালিকাভুক্ত ১৫০ জন সাঁওতাল পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা সরকারী ত্রাণ গ্রহণ করবেন না। এ ব্যাপারে গ্রামের সাঁওতালদের ম-ল (মাতব্বর) বারনাবাস টুডু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে ধর্মীয় নেতাসহ অন্য নেতৃবৃন্দ এবং সাঁওতাল পরিবারগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করার কথা বলে তিনি সরে পড়েন এবং তার মোবাইল ফোন ধরা থেকে বিরত থাকেন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ওই এলাকার মেম্বার সব সাঁওতালের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও কেউ ত্রাণ নিতে আসেননি। ইউপি মেম্বার আব্দুর রউফ জানান, সাঁওতালদের দাবি উচ্ছেদকৃত জমিতেই তাদের পুনর্বাসিত করতে হবে, ওই জমির চারপাশ থেকে অবিলম্বে চিনিকল কর্তৃপক্ষের কাঁটাতারের বেড়া অপসারণ এবং আখ চাষ বন্ধ, সাঁওতালদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। এছাড়া গোবিন্দগঞ্জের সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ এবং সাপমারা ইউপি চেয়ারম্যান শাকিল আহমেদ বুলবুল, ভূমি উদ্ধার কমিটির সম্পাদক শাহাজাহান আলীসহ তাদের উচ্ছেদ, হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটে সহযোগিতা করা এবং তাদের জমি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ আদায়ের বিচার ও ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানায় বলে ইউপি মেম্বার আব্দুর রউফ মোবাইল ফোনে সাংবাদিককে জানান। উল্লেখ্য, জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুস সামাদ সাঁওতালদের জন্য জরুরী ত্রাণ সহায়তা হিসেবে ৬ মেট্রিক টন চাল, ৫০ হাজার টাকা এবং ৩শ’ কম্বল বরাদ্দ করেন। ওই দুটি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত ১৫০টি পরিবারের জন্য ত্রাণ প্যাকেজ করা হয়। প্রতিটি পরিবারের জন্য ২০ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, ১ লিটার সয়াবিন তেল, লবণ, ১ কেজি আলু ও ২টি করে কম্বল বিতরণের জন্য নিয়ে আসা হয়। এছাড়াও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেয়া হয়, গৃহহীন ছিন্নমূল সাঁওতাল পরিবারগুলোকে পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে গোবিন্দগঞ্জের কাটাবাড়ি এলাকায় ১০ একর খাস জমি বরাদ্দ করা হয়েছে। যেখানে তাদের মাথাগোঁজার ঠাঁই করে দেয়া হবে। তদুপরি ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতাল পরিবারগুলোকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উপজাতীয় নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর বিশেষ উন্নয়ন পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে, যাতে তারা আর্থিক ও সামাজিকভাবে উন্নত জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। এদিকে ইক্ষু খামারে পুলিশ-আদিবাসী সংঘর্ষ ও আদিবাসীদের বাড়িঘরে আগুন দেয়াকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট ঘটনায় সোমবার দুপুরে রংপুর চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন গোবিন্দগঞ্জ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে। সংবাদ সম্মেলনে শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন প্রধান লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, ৬ নবেম্বর রবিবার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের কাটা মোড়ে রংপুর সুগার মিলের আখ কাটতে গেলে সাঁওতাল আদিবাসীদের সঙ্গে মিলের শ্রমিক-কর্মচারীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশের সাহায্য চাইলে পুলিশ এগিয়ে আসে। কিন্তু আধিবাসীরা পুলিশ ও শ্রমিক-কর্মচারীদের ওপর হামলা করে। এতে ১০ পুলিশ তীরবিদ্ধসহ ৩০ জন আহত হন। এরপর সন্ধ্যায় যৌথবাহিনী অভিযান শেষে ফিরে আসার পর স্থানীয় উচ্ছৃঙ্খল জনতা দখলকৃত জায়গার ঘরগুলোতে আগুন দেয়। এ সংবাদটি গণমাধ্যমে বিভিন্নভাবে প্রচারিত হয়, যা সত্য নয়। সঠিক ঘটনাটি তুলে ধরতে তিনি সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন। সাহেবগঞ্জে সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাবেশ ্॥ সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার সংলগ্ন কাটা মোড়ে সাপমারা ও কাটাবাড়ি ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে সোমবার বিকেলে স্থানীয় আদিবাসী-বাঙালী মুসলিমদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক শীর্ষক এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশে প্রধান অতিথি স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ বলেন, একটি কুচক্রী মহল গণমাধ্যমে সম্প্রীতি নষ্টে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার জন্য আদিবাসীদের নিয়ে রাজনীতি করছে। এ ব্যাপারে তিনি আদিবাসীসহ সর্বস্তরের জনগণকে সতর্ক করে দেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার চেষ্টায় যারা তৎপরতা চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সকলকে সোচ্চার হওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
×