ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আমার শাসনামলে ভয়ের কিছু নেই ॥ ট্রাম্প

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৫ নভেম্বর ২০১৬

আমার শাসনামলে ভয়ের কিছু নেই ॥ ট্রাম্প

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির কঠোর সমালোচনা এবং অবিলম্বে প্রকাশ্য বিবৃতির মাধ্যমে অভিবাসীদের সুরক্ষায় সম্ভাব্য সবকিছু করার ঘোষণা দাবিতে ১৩ নবেম্বর রবিবার দেশটির নিউইয়র্ক, লসএঞ্জেলেস, সানফ্রান্সিসকো, ফিলাডেলফিয়া, শিকাগো, নিউ হ্যাভেন, পোর্টল্যান্ডসহ বিভিন্ন সিটিতে তুমুল বিক্ষোভ হয়েছে। সবচেয়ে বড় সমাবেশ-র‌্যালি হয়েছে নিউইয়র্ক সিটিতে। ওদিকে নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত সংখ্যালঘু ও হিসপানিকদের ওপর দমনপীড়নের ঘটনায় ডোনাল্ড ট্রাম্প দুঃখ পেয়েছেন বলে এক সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন। আবার নির্বাচনের পর থেকে সুপ্রীমকোর্টের শূন্যপদ পূরণ, অবৈধ অভিবাসীদের বিতারণ করা, কর কমানোর মতো বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন মার্কিনদের আশ্বস্ত করেছেন ট্রাম্প। মার্কিন নাগরিকদের উদ্দেশে তিনে বলেছেন, তাঁর শাসনামল নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। মুসলিম ও হিস্পানিক জনগোষ্ঠীকে হয়রানি করার খবরে দুঃখিত হয়েছেন বলেও জানিয়েছেন ট্রাম্প। এ ধরনের হয়রানি তিনি থামাতে বলেছেন। খবর বিবিসি, এএফপি ও এনআরবি নিউজের। স্থানীয় সময় রবিবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সিবিএস টেলিভিশন চ্যানেলের ‘সিক্সটি মিনিটস’ অনুষ্ঠানে দেয়া সাক্ষাতকারে ট্রাম্প এসব কথা বলেন। স্থানীয় সময় গত শুক্রবার সাক্ষাতকারটি ধারণ করে সিবিএস টেলিভিশন চ্যানেল। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছে যুক্তরাষ্ট্রবাসী। তারা ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে মানতে নারাজ। এ নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে ৭০ বছর বয়সী ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি না তারা আমাকে ঠিকভাবে চেনে।’ ট্রাম্পের শাসনামল নিয়ে মার্কিনীদের মনে ভয় আছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ট্রাম্প মার্কিনীদের উদ্দেশে বলেন, ‘ভীত হবেন না। আমরা আমাদের দেশকে আগের অবস্থায় নিয়ে যেতে চাই।’ প্রেসিসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমে সাক্ষাতকার দিলেন ট্রাম্প। এই সাক্ষাতকার নিয়ে মার্কিন জনগণ আগ্রহী ছিল। ট্রাম্পের কথোপকথন থেকে তাঁর শাসনামল সম্পর্কে আভাস পেতে চেয়েছে তারা। অভিবাসীদের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে লড়াইরত বিভিন্ন সংগঠনের রবিবারের এই কর্মসূচী ছিল ট্রাম্পের ‘অ-আমেরিকান নীতি’র বিরুদ্ধে লাগাতার বিক্ষোভের পঞ্চম দিবস। হাজার হাজার নারী-পুরুষের কণ্ঠে স্লোগান ছিল ‘ঘৃণা কখনই আমাদের মহান করবে না’, ‘আমরা এখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্যেই এসেছি’, ‘অবৈধ অভিবাসীরা কখনোই অপরাধী নন’, ‘আমেরিকা গড়ে উঠেছে অভিবাসীদেরই রক্ত-ঘামে’, ‘অবৈধ অভিবাসীদের স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ চাই’, ‘ নো হেইট, নো র‌্যাসিজম, নো ফ্যাসিজম’, ‘ট্রাম্প ইজ নট মাই প্রেসিডেন্ট’, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সরে যেতেই হবে’, ‘এটাই হচ্ছে গণতন্ত্রের সৌন্দর্য’, ‘ট্রাম্পের ঘৃণাকেই ভালবাসী’ ইত্যাদি। এসব কর্মসূচীতে অংশগ্রহণকারীরা প্রচ- ক্ষোভের সঙ্গে ট্রাম্পের অভিবাসন বিরোধী মন্তব্য/মতামতের সমালোচনা করে বলেন, ‘এমন মানুষ আমাদের প্রেসিডেন্ট হতে পারেন না। এমন কথাবার্তা যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যবোধের সঙ্গে মানায় না।’ মেক্সিকো থেকে মা-বাবার সঙ্গে শিশু অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর বর্তমানে কলেজে অধ্যয়নরত ক্লাউডিয়া জামোরা বলেন, ‘আমার মা-বাবার বৈধ কাগজ না থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত ট্যাক্স প্রদান করছেন। অপরদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প বিলিয়নেয়ার হয়েও ১৬ বছর কোন ট্যাক্স দেননি। এমন মানুষের মুখে অভিবাসন বিরোধী মন্তব্য মানায় না। ট্যাক্স ফাঁকির জন্যে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা হওয়া উচিত।’ মিড টাউন ম্যানহাটানে ট্রাম্পের বাসা এবং ট্রাম্প হোটেলে হামলার আশংকায় আগে থেকেই পুলিশসহ নিরাপত্তা বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের শত শত অফিসার জড়ো হন। বালির বস্তা দিয়ে বেরিকেড রচনা করা হয় ট্রাম্প টাওয়ারের সামনে। যদিও কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। শান্তিপূর্ণভাবেই বিক্ষোভকারীরা তাদের কর্মসূচী পালন করেছেন। বিক্ষোভকারীদের অনেকেই উল্লেখ করেছেন যে, ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত বিজয়ের পর অনেক স্থানে মুসলমানের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। হিসপ্যানিক, কৃষ্ণাঙ্গ এবং সমকামীরাও আক্রান্ত হয়েছেন। এভাবেই রিপাবলিকানরা সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে, যার পরিণতি ভয়ংকর হতে পারে। সমাবেশ থেকে সকল নাগরিকের নিরাপত্তায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানানো হয়। পপুলার ভোট বেশি পেয়েছেন হিলারি ক্লিন্টন। এতদসত্ত্বেও ইলেক্টোরাল ভোটে ট্রাম্প বিজয়ী হওয়ার পর থেকেই লাগাতার বিক্ষোভ চলছে আমেরিকায়। বিক্ষোভকারীরা ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে মানতে চাচ্ছেন না-এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সিবিএস টিভির ‘সিক্সটি মিনিটস’ শো-তে প্রদত্ত সাক্ষাতকারে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি খুবই আশ্চর্য এসব শুনে। কারণ, আমি চেষ্টা করছি এদেশকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্যে।’ রবিবার রাতে প্রচারিত ঐ সাক্ষাতকাওে ট্রাম্প এহেন বর্ণ ও ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক হামলার সঙ্গে জড়িত সকলের উদ্দেশে বলেছেন, ‘এবং আমি বলছি, বন্ধ করুন এসব। ক্যামেরার সামনেই সকলকে বলছি, এক্ষুণি বন্ধ করুন।’
×