ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে বাড়তে পারে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার

আগামী বাজেট হবে ৩ লাখ ৯০ হাজার কোটির

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১৫ নভেম্বর ২০১৬

আগামী বাজেট হবে ৩ লাখ ৯০ হাজার কোটির

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাজেটের আকার ৩ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, এখনও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়নি। তবে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের পুনর্মূল্যায়নের সময় আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার ঠিক করা হবে। সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে মুদ্রা ও মুদ্রানীতি সংক্রান্ত সমন্বয় কমিটি এবং বাজেট পর্যালোচনা কমিটির বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে করিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী অর্থবছরে বাজেটের আকার নির্ধারণ নিয়ে এটিই ছিল প্রথম বৈঠক। এছাড়া এ বৈঠকে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের আয়-ব্যয় পর্যালোচনা হয়েছে। এ সংক্রান্ত আরও বেশ কয়েকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সবদিক বিবেচনায় নিয়ে আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য বাজেটের আকার চূড়ান্ত হবে। এরই ধারাবহিকতায় এনবিআরের পক্ষ থেকে আগামী অর্থবছরের জন্য সাম্ভাব্য আকার প্রস্তাব করা হয়েছে ৩ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। তবে এর পরিমাণ কমবে না বরং বাড়তে পারে। প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবছরে (২০১৬-১৭) ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে। আর গত অর্থবছরের (২০১৫-১৬) বাজেটের আকার ছিল ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। মুহিত বলেন, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন অত্যন্ত সন্তোষজনক। তবে দু’ একটি ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যা কাটিয়ে ওঠার পদক্ষেপ নিচ্ছি আমরা। রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে। গত বছরের এই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের এই সময়ে ২২ শতাংশ বেশি রাজস্ব আহরিত হয়েছে। তবে কম্পট্রোলার অডিটর জেনারেল (সিএজি) ও এনবিআরের হিসাবের মধ্যে ১০ হাজার কোটি টাকার গরমিল আছে। সেটি সমাধানে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা এই বছরের মধ্যে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দিবে। সঞ্চয়পত্র নিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এবার সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেশি হয়েছে। এ কারণে ব্যাংক থেকে আমাদের কোন টাকা ধার করতে হয়নি। সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নিচ্ছে। এর ফলে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বেড়ে যাচ্ছে। এখন সঞ্চয়পত্রের এ সুদের হার সমন্বয় করার চিন্তা করছি আমরা। যা আগামী বাজেটে সমন্বয় করা হবে। চলমান বৃহৎ প্রকল্পগুলোর মধ্যে পদ্মা সেতু প্রকল্পের অগ্রগতি খুবই ভাল বলে জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পের ৩৯ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। তবে প্রকল্পের অর্থ শেষ হয়ে গেছে। তাদের টাকার প্রয়োজন। এজন্য আগামী বাজেটেও পদ্মা সেতুর জন্য বরাদ্দ রাখা হবে। এ সময় ভর্তুকির বিষয়ে তিনি বলেন, অচিরেই বিদ্যুতে ভতুর্কির জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। পাশাপাশি বিদ্যুতের দাম নির্ধারণের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এছাড়া ২০২১ সালের মধ্যে সরকার বিদ্যুতে স্বয়ং সম্পূর্ণ হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তবে ২০১৮ থেকে ১৯ সালের মধ্যেই আমরা এটা অর্জন করতে পারব। এ জন্য কৃষিতে যেভাবে প্রণোদনা দেয়া হয়, ঠিক সে রকম বিদ্যুতে দেয়া হবে। এর ফলে সাধারণ মানুষ কম দামে বিদ্যুত পাবে। এখনও প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। তবে আরও নতুন করে একটু-আধটু সমন্বয়ের কথা ভাবা হচ্ছে। রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, দুই কারণে রেমিটেন্স কমে যাচ্ছে। এক অবৈধ পথে অর্থ আসা বা হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানোর প্রবণতা বেড়েছে। এছাড়া, বিদেশে কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের বেতনও কিছুটা কমেছে। তাই দেখা যাচ্ছে, রেমিটেন্স কম, তবে এটা তেমন কম না। এ সমস্যা কীভাবে সমাধান করা যায়, সে বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে। আমিও মনে করি, ডলারের মূল্যমান ৮০ টাকা হয়ে যাওয়ায় এ সমস্যা মিটে যাবে এবং প্রবাসী আয় বাড়বে। আমাদের রেমিটেন্স প্রবাহের গতি কিছুটা মন্থর হলেও দেশে রেমিটেন্স আসায় তেমন প্রভাব পড়েনি। এদিকে, ৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে চলতি অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তবে এ বিশাল বাজেট বাস্তবায়নে একদিকে টাকা জোগাড় করা যেমন চ্যালেঞ্জ, অন্যদিকে খরচ করাও বড় চ্যালেঞ্জ। বাজেট পর্যালোচনার বৈঠকেও এসব বিষয় তুলে ধরেছেন সংশ্লিষ্টরা। চলতি বাজেট বাস্তবায়নে সরকার দেশের মানুষের কাছ থেকে ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করবে। এর মধ্যে এনবিআরকে ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকার লক্ষ্য দেয়া হয়েছে। এতে গত অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বেশি আদায় করতে হবে এনবিআরকে।
×