ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

২৪ নবেম্বর শেষ দিন

মাতারবাড়ি ১২শ’ মে.ও. কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র ॥ দরপত্র জমার সময় আর বাড়ছে না

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৫ নভেম্বর ২০১৬

মাতারবাড়ি ১২শ’ মে.ও. কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র ॥ দরপত্র জমার সময় আর বাড়ছে না

রশিদ মামুন ॥ মাতারবাড়ি এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট কয়লা চালিত বিদ্যুত কেন্দ্রে দরপত্র জমা দেয়ার সময় আর বৃদ্ধি করা হচ্ছে না। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে বাংলাদেশ কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণ করছে। বিদ্যুত কেন্দ্রর দরপত্র আহ্বানের পর গুলশান ট্রাজেডিতে দুই দফা দরপত্র জমা দেয়ার সময় বৃদ্ধি করা হয়। এরপরও জাপানের একটি কোম্পানি আরও এক মাস সময় বৃদ্ধির অনুরোধ করেছে। কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত রয়েছে আমরা আর সময় বৃদ্ধি করব না। তিনি বলেন অন্য কোম্পানিটি তাদের কোন সমস্যার কথা আমাদের জানায়নি। আমরা মনে করছি তারা দরপত্রে অংশ নেবে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, আগামী ২৪ নবেম্বর বিদ্যুত কেন্দ্রটির দরপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন নির্ধারণ করেছে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি। দরপত্রে প্রাকযোগ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জাপানের মারুবিনি কর্পোরেশন সম্প্রতি সরকারের কাছে আরও এক মাস সময় বৃদ্ধির অনুরোধ করেছে। কিন্তু সরকার তাতে সাড়া দিচ্ছে না। এতে একক দরদাতা হিসেবে জাপানেরই সুমিতোমো কর্পোরেশন আর্থিক দরপ্রস্তাব (আরএফপি) জমা দিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিদ্যুত বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, ২৪ নবেম্বর দরপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন। আমরা এর আগেই মারুবিনিকে জানিয়ে দিচ্ছি আর সময় বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়। এখন দরপত্র জমা দেয়া না দেয়ার বিষয়টি তাদের ওপর নির্ভর করবে। এখনও কয়েকদিন সময় রয়েছে তারা চাইলে সিদ্ধান্তের পরিবর্তন করতে পারে। অন্যদিকে সুমিতোমো কর্পোরেশন দরপত্র জমা দেয়ার বিষয়ে তাদের আপত্তির কথা জানায়নি। তাদের বাংলাদেশে এসে কাজ করতেও কোন সমস্যা নেই বলে জানিয়েছে। দরপত্রে প্রথম দফায় গত ২৬ জুলাই আরএফপি জমা দেয়ার শেষ দিন নির্ধারিত ছিল। এরমধ্যে ১ জুলাই গুলশানে হলি আর্টিজান ট্রাজেডির ঘটনা সকলকে নাড়া দেয়। এখানে জাইকার মেট্রোরেল প্রকল্পে কয়েকজন কর্মকর্তা নিহত হন। বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থান নেয়। বাংলাদেশ এবং জাপানের পক্ষ থেকে এই সন্ত্রাসী হামলার পরও দুই দেশের সম্পর্ক অটুট থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে সন্ত্রাস প্রতিরোধে বাংলাদেশকে সহায়তা দেয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন। পরিস্থিতি কিছুটা প্রতিকূল মনে করে মাতারবাড়ির দরপত্র জমা দেয়ার সময় আগামী ২৪ নবেম্বর পর্যন্ত দুই দফায় বৃদ্ধি করা হয়। এরমধ্যে বিদ্যুত বিভাগ একাধিকবার মাতারবাড়ি প্রকল্প নির্মাণে আগ্রহী জাপানী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক করেছে। প্রয়োজনে অনলাইনেও দরপত্র পাঠানো যাবে বলে তাদের জানানো হয়। জাপান থেকেই অনলাইনে দরপত্র জমা দেয়ারও আহ্বানও জানায় বিদ্যুত বিভাগ। গুলশান হামলার পর জাপানের মাতারবাড়ি প্রকল্পটি নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। দেশের সব থেকে বড় বিদ্যুত অবকাঠামো নির্মাণ করার পরিকল্পনাও খানিকটা পিছিয়ে যায়। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে অনিশ্চয়তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টায় জোর দেয়া হয়। জাইকার অর্থায়নে মেট্রোরেলের মতো এই বিদ্যুত কেন্দ্রও নির্মাণ করা হচ্ছে। সরকারের সন্ত্রাস দমনের মনোভাবে সন্তুষ্ট হওয়ার পর জাইকা মেট্রোরেল রুট নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে প্রকল্প এলাকা থেকে ইলেক্ট্রিক কেবল সরানো হচ্ছে। যদিও সন্ত্রাসবাদের কবলে পড়ার পরও জাইকা বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, জাইকার আর্থিক সহায়তায় টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি মাতারবাড়ি বিদ্যুত কেন্দ্রের সম্ভাব্যতা জরিপ পরিচালনা করে। সম্ভাব্যতা জরিপের ভিত্তিতে সরকার মাতারবাড়ি-মাহেশখালীতে একটি আধুনিক শহর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। একই সঙ্গে এখানে একটি ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য কোল হ্যান্ডেলিং টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে। কয়লা চালিত বিদ্যুত কেন্দ্রর সব থেকে বেশি ব্যয়বহুল প্রকল্পের ২৯ হাজার কোটি টাকা জাইকা ঋণ দিচ্ছে। কিন্তু সন্ত্রাসী হামলার পর অনেকটা এগিয়ে থাকা প্রকল্পটিই পিছিয়ে যায়। বিদ্যুত কেন্দ্রটির জন্য এক হাজার ৫০০ একর জমি অধিগ্রহণ করে উন্নয়ন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ঋণের প্রতিশ্রুতি পাওয়া তিনটি কয়লা চালিত বিদ্যুত কেন্দ্রের মধ্যে মাতারবাড়ি একটি। এছাড়া চীনা এক্সিম ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় পায়রাতে বিদ্যুত কেন্দ্রে নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। এর বাইরে রাপমাল বিদ্যুত প্রকল্পর ঋণ চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তবে এখন ভারতের এক্সিম ব্যাংক ঋণ চুক্তি সই করেনি।
×