ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নাসিরনগর হামলায় ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে আঁখির সংশ্লিষ্টতা

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৫ নভেম্বর ২০১৬

নাসিরনগর হামলায় ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে আঁখির সংশ্লিষ্টতা

রাজন ভট্টাচার্য ॥ নাসিরনগরের কাশিপাড়া গ্রামে মতিলাল দাসের বাড়ি। ছোট্ট বাড়ি হলেও ছিল গোছালো। এখন যা দেখে আর চেনার উপায় নেই। রামদা দিয়ে কুপিয়ে ছোট্ট ঘরের টিনের বেড়া তছনছ করে দেয়া হয়েছে। কাটা টিনগুলো মৌলবাদীদের চরম আক্রোশের প্রতীক হয়ে আছে। এ পরিবারের উপার্জনের একমাত্র উৎস ছিল জাল। হামলাকারীরা তাও লুটে নিয়েছে। রান্না করার হাঁড়ি-পাতিলসহ থালা-বাসন সবই নিয়ে গেছে। এখন পরিবারটির খাবারেরও কোন ব্যবস্থা নেই। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বাড়ির আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। আক্রান্ত হওয়া গ্রামের লোকজন বলছেন, জীবন থেমে থাকবে না। কোন না কোনভাবে ফের সচল হবে সংসারের চাকা। হয়ত সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণও মিলেবে। কিন্তু শত-শত বছরের সম্প্রীতির জনপদে মৌলবাদী হামলার ঘটনায় হৃদয়ে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে, তা কোন কিছু দিয়ে কি পূরণ সম্ভব? এক কথায় উত্তরÑ না। হয়ত তা আর কোন দিনই হবে না। এ ক্ষত থেকে যাবে চিরকাল। ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নাসিরনগরে মৌলবাদী হামলার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হতদরিদ্র পরিবারের সংখ্যা ৫৮টি। ভাংচুর হয়েছে ১৭টি মন্দির। মোট আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৭১ লাখ টাকা। এর মধ্যে মন্দির ভাংচুরের ঘটনায় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ৪৬ লাখ টাকা। হতদরিদ্র পরিবারের আর্থিক ক্ষতি ধরা হয়েছে ২৫ লাখ টাকা। তবে সাধারণ মানুষ বলছেন, সব মিলিয়ে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ হবে কয়েক কোটি টাকার বেশি। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা তালিকায় এ চিত্র ওঠে এসেছে। তবে ৫২টি বাড়ি ভাংচুরের কথা তাদের তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে। প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, হামলাকারীদের তিন ধরনের উদ্দেশ্য ছিল। একটি হলো ধর্মের দোহাই দিয়ে আক্রমণ। অপরটি হলো লুটপাট ও মন্দির ভাঙ্গা। এছাড়াও হিন্দু সম্প্রদায়কে আর্থিকভাবে পঙ্গু করে দেয়া। যে কারণে তাদের সম্পদ লুটপাটের পাশাপাশি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, যেন তারা সহজেই ঘুরে না দাঁড়াতে পারে। অন্যদিকে হামলার পাশাপাশি অনেকেই আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে। অর্থাত হামলার সঙ্গে লুটপাট করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ও হতদরিদ্র পরিবারের তালিকা ॥ ৩০ অক্টোবর দুপুরে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হামলার ঘটনা ঘটে। ২৮ অক্টোবর সকালে ওই উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় বাজারের দাসপাড়ার যুবক রসরাজ দাসের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ তোলা হয়। ২৯ অক্টোবর শনিবার রসরাজের ফেসবুকের বিষয় জানাজানি হয় বেলা ১১টার দিকে। এরপর একদল উগ্রবাদী যুবক এসে তাকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। বিকেলের দিকে তাকে নাসিরনগর পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়। এদিন হরিণবেড় বাজারে মিছিল-সমাবেশ হয় সন্ধ্যার দিকে। হরিপুর এলাকায় মাইকিং শুরু হয় বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে। হিন্দুদের ওপর হামলার সকল পরিকল্পনা ও আয়োজন হয় বাজারের আল-আমিন সাইবার পয়েন্ট থেকে। এখানে বৈঠক শেষে লিফলেট তৈরি ও ফটোকপি করে বাজারে স্থানীয়দের মধ্যে বিতরণ করা হয়। সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিতে বাজারের দুই ব্যবসায়ী উগ্রবাদীদের হাতে মাইক তুলে দেয়। তারা পুরো এলাকায় মাইকিং করে। এরপর নাসিরনগরে মিছিল হয় সন্ধ্যা পৌনে ৬টায়। পরদিন রবিবার সকাল থেকে শুরু হয় দফায় দফায় হামলা। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৩০ অক্টোবর হরিণবেড় বাজারে জমায়েত শুরু হয় সকাল সাড়ে ৮টা থেকেই। সকাল ১০টার মধ্যেই রসরাজের গ্রামে প্রথম ভাংচুর হয়। এরপর হামলাকারীরা ট্রাকে চড়ে নাসিরনগরের উদ্দেশে যাত্রা করে প্রায় ১১টার দিকে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত নাসিরনগর কলেজ মোড়ে ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত সমাবেশ করে। হেফাজতে ইসলাম আশুতোষ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় খেলার মাঠে সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত পৃথক সমাবেশ করে। হিন্দু বাড়িতে হামলার শুরু দুই সমাবেশস্থল থেকেই, বেলা ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার মধ্যে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা তালিকায় হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হতদরিদ্র ৫৮টি পরিবারের নাম ওঠে এসেছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে রয়েছেন নাসিরনগরের নমশূদ্রপাড়ার বাাসিন্দা সুজিত সরকার। তাঁর বাড়ির প্রতিমাসহ আসবাবপত্র মিলিয়ে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। একই পাড়ার বাসিন্দা সুমন সরকারের ১০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। একই গ্রামের বাসিন্দা সুশীল সরকারের প্রতীমা ভাংচুরসহ অন্যান্য মিলিয়ে ১০ হাজার টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। একই পাড়ার বাসিন্দা সজল সরকারের ২০ হাজার টাকা, অঞ্জু সরকারের ১০ হাজার, ঘোষপাড়ার মন্টু ঘোষের ১০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। একই গ্রামের জয় কিশোর সূত্রধরের টিভি, স্বর্ণসহ ৫০ হাজার টাকার মালামাল লুটপাট হয়েছে। একই গ্রামের বিমল চৌধুরীর বাড়ি থেকে আসবাবপত্র, নগদ দুই লাখ টাকা, আট ভরি স্বর্ণসহ সব মিলিয়ে অন্তত পাঁচ লাখ টাকার মালামাল খোয়া গেছে। নিরঞ্জন চন্দ্র গোপের ২০ হাজার টাকা, নিবু চন্দ্র গোপের ১০ হাজার টাকা, কাশিপাড়ার ভানু দাসের বাড়ির ২০ হাজার টাকার মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও একই গ্রামের বাসিন্দা মতিলাল দাসের ১৫ হাজার টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হরলাল দাসের ঘরের বেড়া পুড়িয়ে দিয়েছে মৌলবাদী গোষ্ঠী। এতে ৫ হাজার টাকা ক্ষয়ক্ষতি ধরা হয়েছে। অমূল্য দাসের টিনের বেড়া, শোকেস, আসবাবপত্র ভাংচুর, দুই ভরি স্বর্ণ লুটসহ লক্ষীর আসন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছে এক লাখ ২০ হাজার টাকা। টিনের বেড়া, বাউন্ডারি, নগদ ১০ হাজার টাকাসহ গোপাল দাসের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১৫ হাজার টাকা। নগদ ৪০ হাজার টাকা, টিনের বেড়া, স্বর্ণ, টেলিভিশনসহ রবি মালাকারের আর্থিক ক্ষতি ধরা হয়েছে ৭০ হাজার টাকা। টিনের বেড়া, নগদ ২০ হাজার টাকাসহ হিরালাল মালাকারের আর্থিক ক্ষতি ধরা হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। স্বর্ণ, নগদ অর্থ, লক্ষীর আসন ও অন্যান্য মিলিয়ে সুনীল সূত্রধরের আর্থিক ক্ষতি ধরা হয়েছে ৭৫ হাজার টাকা। গোপাল সূত্রধরের ৫ হাজার টাকা, শ্রীবাস সূত্রধরের ১০ হাজার টাকা, ক্ষিরমোহন সূত্রধরের ১০ হাজার টাকা, মনমোহন সূত্রধরের ১০ হাজার টাকা, ফালান সূত্রধরের ৫০ হাজার টাকা, অতুল সূত্রধরের ৩০ হাজার টাকা, শংকর সূত্রধরের ১০ হাজার টাকা আর্থিক ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কাশিপাড়ার হরিদাস সূত্রধরের ঘরের বেড়া কেটেছে হামলাকারীরা। ভাংচুর করা হয়েছে শোকেস। তিন ভরি স্বর্ণ, নগদ ৫০ হাজার টাকা লুটপাটসহ আর্থিক ক্ষতি ধরা হয়েছে ২ লাখ টাকা। ঘরের বেড়া কেটে ফেলা, নগদ ১৫ হাজার টাকা, কানের দুল ও গলার চেন লুটে নেয়ায় মানিক দাসের আর্থিক ক্ষতি ধরা হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। গাংকুলপাড়ার মোহনলাল দাসের সুটকেসসহ লক্ষীর আসন ভাংচুর করা হয়েছে। লুটে নিয়েছে ৩১ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে তার আর্থিক ক্ষতি ধরা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা, সমপরিমাণ ক্ষতি মন্টু দাসের। ঝন্টু দাসের ১০ হাজার টাকা, কুমোদ দাসের আট হাজার, শিপন দাসের আট হাজার, বিমল দাসের পাঁচ হাজার, লিটন দাসের ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া মহাখালপাড়ার রামকৃষ্ণদাসের মুদির দোকান থেকে ১৫ হাজার টাকার মালামাল লুটে নিয়েছে হামলাকারীরা। হরিণবেড় পশ্চিমপাড়ার রসরাজ দাসের আসবাবপত্র, মালামালসহ ৪০ হাজার টাকা আর্থিক ক্ষতির কথা তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে। হরিণবেড় গ্রামের পশ্চিমপাড়ার জয়দেব দাসের ৪০ হাজার টাকা, ননী গোপাল দাসের ৩০ হাজার টাকা, গণেশ দাসের পাঁচ হাজার টাকা, সুশীল দাসের পাঁচ হাজার টাকা, অতীন্দ্র দাসের ২০ হাজার টাকা, হেমেন্দ্র দাসের পাঁচ হাজার টাকা, শ্যামল দাসের ১০ হাজার টাকা, জগদীশ দাসের পাঁচ হাজার টাকা, অনুকুল চন্দ্র দাসের ২০ হাজার টাকা, গোপাল চন্দ্র দাসের ১০ হাজার টাকা, দেবেন্দ্র দাসের পাঁচ হাজার টাকা, অনিল দাসের পাঁচ হাজার টাকা, সুধীর দাসের পাঁচ হাজার টাকা, সুনীল দাসের পাঁচ হাজার টাকা, নীলমোহন দাসের পাঁচ হাজার টাকা, ভুবন দাসের পাঁচ হাজার টাকা। এছাড়াও নাসিরনগরের গৌড় মন্দিরের ব্রহ্মচারী সন্তোষ সূত্রধর হামলাকারীদের প্রতিমা না ভাঙতে হাতে পায়ে ধরেছিলেন। কিন্তু কোন কিছুতেই তারা বারণ মানেনি। পুরোহিতকে নির্মমভাবে আক্রমণ করা হয়েছে। যিনি এখন রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তালিকায় তাকে গুরুতর আহত দেখানো হয়েছে। এছাড়া আহত ও গুরুতর ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেনÑ ঘোষপাড়ার সুব্রত চৌধুরী, একই পাড়ার লিটন সূত্রধর ও বিনোদ বিহারী। কালিপাড়ার প্রতিবন্ধী মেয়ে ফালান সূত্রধরের ওপর হামলা চালিয়েছে মৌলবাদী গোষ্ঠী। হরিণবেড় গ্রামের ঠাকুরপাড়ার মলিনা চক্রবর্তীর নামও আহতদের তালিকায় এসেছে; যার চোখের সামনেই দুটি মন্দিরসহ ঘরবাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে। তিনি জানান, হামলার সময় সবাই বাড়ি থেকে চলে গেলেও তিনি যাননি। ছিলেন মন্দিরের সামনে। হামলাকারীরা তার কাছে দুই হাজার টাকা চায়। না থাকার কথা বললে মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে। পরে তার মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুরসহ প্রতিমার গলায় থাকা স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যায় মৌলবাদীরা। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, হামলার জন্য মাধবপুর থেকে ট্রাক ভাড়া করে সেখান থেকেই লোকজন সংগ্রহ করা হয়েছে। সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে বিভিন্ন মাদ্রাসা থেকে এসব লোক জড়ো করা হয়। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই হেফাজত ও জামায়াতে ইসলামীর অনুসারী। মাধবপুর ট্রাক স্ট্যান্ড থেকে ভাড়ায় দুটি ট্রাক সরবরাহকারী নুরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, অন্তত ১৫টি ট্রাক মাধবপুর থেকে যায়। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে টাকা দেয়া হয়েছিল। ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তো আঁখি সাহেব। আঁখির ইউনিয়ন হরিপুরের বাসিন্দা এই ট্রাক মালিক বলেন, তার দুটি ট্রাকের ভাড়া দেয়া হয়েছিল দুই হাজার টাকা করে। আঁখির কর্মী দোকানদার জাহাঙ্গীর ও সুজন পাঠান মোটরসাইকেলে গিয়ে ট্রাকগুলো নিয়ে আসেন বলে জানান হরিপুরের স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক কর্মী। হরিণবেড় বাজারে ‘আল-আমিন সাইবার ল্যাব ও স্টুডিওর সামনের দোকানি অমৃত বিশ্বাস বলেন, দোকান মালিক জাহাঙ্গীর বিএনপির রাজনীতি করেন। তবে ইউপি নির্বাচনের সময় আঁখির সঙ্গেই ছিলেন। এখন চেয়ারম্যান আঁখির সঙ্গে তার সখ্য। রসরাজের বিরুদ্ধে মামলার এজাহারে ‘আসামিকে আটককারী’ হিসেবে যে পাঁচজনের নাম এসেছে তাদের মধ্যে শঙ্করাদহ এলাকার ইসমাইলও আঁখির অনুগত বলে জানান তিনি। চেয়ারম্যান আঁখি ট্রাক ভাড়ায় নিজের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করলেও জাহাঙ্গীর ও সুজন যে তার কর্মী তা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, কারা ট্রাক ধরাইছে আমি জানি না। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কোন টাকা দেয়া হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত মন্দিরের তালিকা ॥ নাসিরনগরে হামলার অন্যতম লক্ষ্য ছিল মন্দির। ঘরের ভেতরে বাইরে যেখানেই মন্দির ছিল সেখানেই চলেছে ধ্বংসযজ্ঞ। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রতিমা মাটিতে ফেলে দিয়ে ভাংচুর ও কোপানো হয়েছে। কেটে টুকরো টুকরো করা হয়েছে বিভিন্ন মন্দিরের প্রতিমা। ভাংচুর করা হয়েছে মন্দিরের বেড়াও। নাসিরনগরে এরকম ক্ষতচিহ্ন এখন অহরহ। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন জানিয়েছেন, ঘরের ভেতরে থাতা প্রতিমা ও আসন ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবিও ভাংচুর করা হয়েছে। নাসিরনগরের মহাখালপাড়ার গৌড় মন্দিরের চারপাশজুড়ে ধ্বংসের চিহ্ন। হামলায় ৭টি প্রতিমা ভাংচুর, ১৫ ভরি ওজনের কৃষ্ণমূর্তি, রুপার মুকুট ২০ ভরি, নগদ ৫০ হাজার টাকা, পূজার সামগ্রীসহ ২০ লাখ টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। একই পাড়ার শিব মন্দিরের ছয় লাখ টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রতিমা, পূজার সামগ্রী, বাদ্যযন্ত্রসহ নাসিরনগরের শ্মশানখোলা কালীমন্দিরের ২ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। পশ্চিমপাড়ার নাসিরনগর জগন্নাথ মন্দিরের ক্ষতি হয়েছে ১০ হাজার টাকা। পূর্বপাড়ার অঞ্জু সরকারের বাড়ির মন্দিরের ক্ষতি হয়েছে দেড় লাখ টাকা, মোহনলাল দাসের বাড়ির দুর্গা মন্দিরের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৫০ হাজার টাকা, দত্তপাড়ার দত্তবাড়ির দুর্গা মন্দিরের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। গাংকুলপাড়ার রবীন্দ্রদাসের বাড়ির দুর্গা মন্দিরের আর্থিক ক্ষতি ৫০ হাজার টাকা, ঘোষপাড়ার মন্টু ঘোষের বাড়ির দুর্গা মন্দিরের আর্থিক ক্ষতি ২০ হাজার টাকা। একই গ্রামের বিনোদ বিহারী চৌধুরীর দুর্গা মন্দির ভাংচুরে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে ১৭টি মন্দিরের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৪৬ লাখ টাকা।
×