ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ওরা সকলে ছিল নব্য জেএমবির সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য ;###;২১ জঙ্গীর সাংগঠনিক নাম পাওয়া গেছে ;###;৬ জঙ্গী ভারত ও সিরিয়ায় চলে গেছে

৩৩ জঙ্গী নিহত

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৫ নভেম্বর ২০১৬

৩৩ জঙ্গী নিহত

শংকর কুমার দে ॥ গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় জঙ্গী হামলার পর গত প্রায় সাড়ে ৪ মাসে অন্তত বড় ধরনের ৯টি জঙ্গীবিরোধী অভিযানে নব্য জেএমবির প্রধান, প্রধান সমন্বয়ক, সামরিক কমান্ডারসহ নব্য জেএমবির ৩৩ জঙ্গী নিহত হয়েছে। নিহতরা নব্য জেএমবির সবাই আত্মঘাতী দলের (সুইসাইড স্কোয়াড) সদস্য। এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে নব্য জেএমবির আরও ২১ জঙ্গী যাদের সাংগঠনিক নাম পাওয়া গেছে, প্রকৃত নাম পরিচয় পায়নি গোয়েন্দারা। এ ছাড়াও ৬ জঙ্গী ভারত ও সিরিয়ায় চলে গেছে। নব্য জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমসহ জঙ্গী সংগঠনগুলোর মেরুদ- এমনভাবে ভেঙ্গে গেছে যে, তারা খুব সহসা দাঁড়াতেই পারবে না, জঙ্গী হামলার হুমকিও নেই। তবে বেশ কিছু গোপন জঙ্গী আস্তানা রয়ে গেছে যার হদিস খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ কারণে গত অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে নবেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত গত এক মাস ধরে জঙ্গীবিরোধী বড় ধরনের অভিযান পরিচালনা কিংবা শীর্ষ পর্যায়ের কোন জঙ্গী নেতা ধরা পড়েনি। নব্য জেএমবিসহ জঙ্গী সংগঠনগুলোর সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে এই ধরনের তথ্য চিত্র তুলে ধরা হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার মূল্যায়ন প্রতিবেদনে। গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, গত ১ জুলাই থেকে গত ১৪ নবেম্বর পর্যন্ত গত সাড়ে ৪ মাসে যেই ৯টি বড় ধরনের জঙ্গীবিরোধী অভিযান পরিচালিত স্থানগুলো হচ্ছে, গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি, কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলা, কল্যাণপুর, মিরপুর, আজিমপুর, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও সর্বশেষ সাভারের আশুলিয়ায়। সাভারের আশুলিয়ায় নিহত হয়েছে নব্য জেএমবির প্রধান আবদুর রহমান ওরফে সারোয়ান জাহান ওরফে আবু ইব্রাহিম আল হানিফ। তার বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ই-মেইল, মোবাইল ফোনের এসএমএস, চিঠিপত্র, তথ্য উপাত্ত, যার বিশ্লেষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, নব্য জেএমবির যে ২১ জঙ্গী ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে তার মধ্যে শীর্ষ দুই জঙ্গী নেতা হচ্ছে, গুলশান হামলার অপারেশনাল কমান্ডার নুরুল ইসলাম মারজান ও বাসারুজ্জামান ওরফে চকোলেট। এ ছাড়াও গুলশান হামলার বোমা সরবরাহকারী সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যার সঙ্গে জড়িত একই বিভাগের শিক্ষার্থী শরীফুল ইসলাম খালেদ ও উত্তরাঞ্চলের দুর্ধর্ষ জঙ্গী মামুনুর রশীদ রিপন, গুলশান হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত ভাটারার তরুণ জুনায়েদ হাসান খান ভারতে পালিয়ে যাওয়ার তথ্য পেয়েছে তদন্তকারীরা। এ ছাড়াও কল্যাণপুরের আস্তানা থেকে পালিয়ে যাওয়া জঙ্গী ইকবাল, জঙ্গী ওয়াসিম আজওয়াদ আবদুল্লাহ ওরফে আসিফ আজওয়াদ নিউ জেএমবির ডাকাতির সংগঠক, উত্তরাঞ্চলের কমান্ডার রাজীব গান্ধী ওরফে জাহাঙ্গীর ওরফে সুভাষ বসু, কমান্ডার মানিক, সংগঠক মামুন, প্রশিক্ষক আবদুস সাকিব ওরফে মাস্টার সাকিব, মিজান, অপারেশন বাস্তবায়নকারী সদস্য বাদল মিয়া ওরফে ওস্তাদ বাদল, আবদুল খালেক ও মামা খালেক, সাগর, আকাশ এবং আজাদুল ওরফে কবিরাজ এখনও পলাতক। পলাতকদের মধ্যে জুনায়েদ হাসান খানের ভাই ইব্রাহীম হাসান খান এবং একজন সরকার কর্মকর্তার ছেলে তাহমীদ শাফী, নিহত আবদুর রহমানের অন্যতম সহযোগী ছিল ডাক্তার রোকন নিউ জেএমবিকে বিপুল পরিমাণ অর্থ সহায়তা দিয়ে এখন সিরিয়ায় জঙ্গী ডেরায় অবস্থান করছে বলে গোয়েন্দাদের ধারণার ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে গোয়েন্দা প্রতিবেদন। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, নব্য জেএমবি সংগঠনটির যাত্রা শুরু করে ৩০০ সদস্য নিয়ে। এর মধ্যে বর্তমানে সক্রিয় আছে মাত্র ২১ জন সদস্য। বাদ বাকিরা গ্রেফতার বা পলাতক নয়ত ভারতে পালিয়ে গেছে। নব্য জেএমবির এই ২১ সদস্যের মধ্যে ২জন শূরা সদস্য, ১৯ জন মিড লেভেলের জঙ্গীদের সাংগঠনিক নাম পাওয়া গেছে, যা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। নব্য জেএমবির নেতৃত্বে ২২টি বড় ধরনের হামলায় ৪০ জন নিহত হওয়ার ঘটনার পর ২১টি ঘটনারই দায় স্বীকার করা হয়েছে ইসলামিক স্টেটস (আইএস) এর নামে, যা দেখা গেছে, আইএস বলে দেশের ভেতরে কিছুই নেই। নব্য জেএমবির শীর্ষস্থানীয় জঙ্গী নেতারা নিহত হওয়ায় পর গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার অপারেশনাল কমান্ডার নুরুল ইসলাম মারজান ও বাসারুজ্জামান ওরফে চকোলেট ও সোহেল মাহফুজ নিউ জেএমবির নেতৃত্ব দেয়ার চেষ্টা করছে। জঙ্গী ওয়াসিম আজওয়াদ আবদুল্লাহ ওরফে আসিফ আজওয়াদ নিউ জেএমবির ডাকাতির সংগঠক, উত্তরাঞ্চলের কমান্ডার রাজীব গান্ধী ওরফে জাহাঙ্গীর ওরফে সুভাষ বসু, কমান্ডার মানিক, সংগঠক মামুন, প্রশিক্ষক আবদুস সাকিব ওরফে মাস্টার সাকিব, মিজান, অপারেশন বাস্তবায়নকারী সদস্য বাদল মিয়া ওরফে ওস্তাদ বাদল, আবদুল খালেক ও মামা খালেক, সাগর, আকাশ এবং আজাদুল ওরফে কবিরাজ, কল্যাণপুরের আস্তানা থেকে পালিয়ে যাওয়া জঙ্গী ইকবাল এখনও পলাতক। তাদের সাংগঠনিক নাম পাওয়া গেলেও প্রকৃত নাম পরিচয় ঠিকানা এখনও পাওয়া না যাওয়ায় তারা গ্রেফতার এড়িয়ে চলতে সক্ষম হয়েছে। তারা কোন গোপন জঙ্গী আস্তানায় লুকিয়ে আছে বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। গায়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, দেশের ভেতরে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি জঙ্গী তৎপরতায় ছিল নব্য জেএমবি ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। পুরনো জেএমবি বা হরকত-উল-জিহাদ (হুজি)-এর মতো জঙ্গী সংগঠনগুলোর আগেই মেরুদ- ভেঙ্গে গেছে। সম্প্রতি নব্য জেএমবির জঙ্গীরা বিদেশী নাগরিক, ধর্মযাজক, পুরোহিত ও ভিন্নমতাবলম্বীদের হত্যা করত। আর আনসারুল্লাহ বাংলা টিম হত্যা করত প্রগতিশীল লেখক, ব্লগার, প্রকাশক শ্রেণীর পেশাজীবীদের। দুই ধারার দুই জঙ্গী সংগঠনের বেপরোয়া তৎপরতায় কিছুদিন দেশে জঙ্গী তৎপরতার নতুন মাত্রা যুক্ত হয়, যা দেশে ও বিদেশে ভাবমূর্তি বিনষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। বর্তমানে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ও নব্য জেএমবির সাংগঠনিক অবস্থা এখন অনেকটাই নড়বড়ে, ক্ষয়িষ্ণু। তবে মোস্ট ওয়ান্টেডের তালিকায় এখন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়া, নব্য জেএমবির নুরুল ইসলাম মারজান, বাশারুজ্জামানের মতো শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন জঙ্গী নেতা ধরা না পড়া বা গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত জঙ্গী হামলার জন্য এখনও হুমকি বলে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
×