ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারের ব্যাংক ঋণ কমছে

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ১৫ নভেম্বর ২০১৬

সরকারের ব্যাংক ঋণ কমছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার পরিমাণ কমছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) দেশের তফসিলী ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের নেয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। তবে এ সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোন ঋণ করেনি সরকার। উল্টো আগের নেয়া ঋণের প্রায় ১০ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা শোধ করেছে। ফলে সরকারের নীট ব্যাংকঋণ দাঁড়িয়েছে ঋণাতœক (-) ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা। মূলত সঞ্চয়পত্র বিক্রি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় গেল কয়েক বছর ধরেই সরকারের ব্যাংক ঋণের চাহিদা কম রয়েছে। চলতি অর্থবছরেও সঞ্চয়পত্র থেকে বেশি পরিমাণ ঋণ পাচ্ছে সরকার। এ কারণে ব্যাংক ঋণের প্রয়োজন হচ্ছে কম। জাতীয় সঞ্চয় পরিদফতরের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বেড়েছে প্রায় ৭৪ শতাংশ। এ সময়ে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ এসেছে ১১ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সেপ্টেম্বর মাসে নীট বিনিয়োগ এসেছে ৩ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা। এছাড়া গেল অর্থবছরের পুরো সময়ে এ খাতে নীট বিনিয়োগ এসেছিল ৩৩ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে বড় অঙ্কের ব্যাংক ঋণ করেছিল সরকার। এ সময়ে দেশের তফসিলী ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের নেয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা। গেল অর্থবছরের শুরুতেও সরকার বড় অঙ্কের ব্যাংক ঋণ করেছিল। অর্থনীতিবিদদের মতে, সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে বেশি ঋণ নিলে বেসরকারী খাত চাহিদামাফিক ঋণের যোগান থেকে বঞ্চিত হন। শুধু তাই নয়, এতে ঋণের সুদও বাড়ার আশঙ্কা থাকে। তবে বিনিয়োগ স্থবিরতার কারণে বর্তমানে ব্যাংকের হাতে প্রচুর উদ্বৃত্ত তারল্য থাকায় সরকার বেশি ঋণ নিলেও বেসরকারী খাত নিরুৎসাহিত হবে না বলে মনে করেন তারা। বাজেট ঘাটতি পূরণে চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে সরকার ৪৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ নেয়া হবে ২৮ হাজার কোটি টাকা, আর স্বল্পমেয়াদী ঋণ ১৫ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুন পর্যন্ত সরকারের মোট ব্যাংক ঋণের স্থিতি ছিল ১ লাখ ৮ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা। ৩১ অক্টোবর শেষে সরকারের ব্যাংক ঋণের মোট স্থিতি কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ৫৪৯ কোটি টাকা। ফলে এ সময়ে সরকারের নীট ব্যাংক ঋণের স্থিতি কমেছে ৪ হাজার ৯৯ কোটি টাকা। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গেল অর্থবছরের জুন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেয়া সরকারের ব্যাংক ঋণের মোট স্থিতি ছিল ২১ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা। যা অক্টোবর শেষে কমে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ এ সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকার কোন ঋণই করেনি। উল্টে আগের নেয়া ঋণের ১০ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা শোধ করেছে। অন্যদিকে, গেল অর্থবছরের জুন শেষে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের নেয়া ঋণের স্থিতি ছিল ৮৬ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা। যা অক্টোবর শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯২ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ এ সময়ে সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে প্রায় ৬ হাজার ৩৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকার ঋণ নিয়েছে।
×