ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংক ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈঠকে উদ্বেগ;###;রেমিটেন্স আহরণে এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবহারের সুপারিশ;###;নগদ ডলারের সঙ্কট, খোলা বাজারে ব্যাংকের চেয়ে তিন টাকা বেশি মূল্যে ডলার বিক্রি হচ্ছে

অবৈধ পথে আসছে রেমিটেন্স

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ১৫ নভেম্বর ২০১৬

অবৈধ পথে আসছে রেমিটেন্স

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুত হওয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশীরা অবৈধ উপায়ে দেশে অর্থ পাঠাচ্ছেন। এতে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স প্রবাহ অনেক কমে গেছে। তাই দেশের অর্থনীতিতে রেমিটেন্সের অবদান নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক খুবই উদ্বিগ্ন। তাই করণীয় নির্ধারণে বৈদেশিক লেনদেনে নিয়োজিত ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সঙ্গে সোমবার এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বলা হয়, মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর হুন্ডির তৎপরতা বেড়ে গেছে। সুতরাং গ্রাহকের উপযোগী করে ব্যাংকগুলোকে সেবা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য দ্রুত লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবস্থা ব্যবহার করা যায় কি-না, সে বিষয়টি ইতিবাচকভাবে পর্যালোচনা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর এস কে সুর চৌধুরী বলেন, চলতি অর্থবছরে রেমিটেন্স প্রবাহ কমায় প্রধানমন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে ব্যাংকগুলোর এমডিদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। এতে রেমিটেন্স প্রবাহ কমার পিছনে বেশকিছু কারণ উদ্ঘাটিত হয়েছে। এমডিদের কতগুলো প্রস্তাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশ্লেষণ করছে বলে তিনি জানান। সুর চৌধুরী বলেন, একশ্রেণীর অসাধুরা বিকাশ তথা মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে এদেশের সাব-এজেন্ট দিয়ে গ্রাহকের টাকা দ্রুত পৌঁছে দিচ্ছে। এ অর্থ ব্যাংকিংয়ে চ্যানেলে আসছে না। তাই দ্রুত সেবা নিশ্চিত করার জন্য ওভারসিজ এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে রেমিটেন্সের অর্থ পৌঁছে দেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। এছাড়া বিদেশী ব্যাংকগুলোর এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর সংরক্ষিত অর্থও কমিয়ে আনা হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন। সুর চৌধুরী আরও বলেন, আমাদের নগদ ডলারের সঙ্কট রয়েছে। সে জন্য ব্যাংকের মূল্যের চেয়ে খোলা বাজারে ডলার প্রতি তিন টাকা বেশি রয়েছে। অনেকে ডলার হাতে হাতে নিয়ে এসে বেশি মূল্যে খোলা বাজারে বিক্রি করছে। এপরিস্থিতি উত্তোরণে গতবছরে সাড়ে তিন মিলিয়ন ডলার আমদানি করা হয়েছিল। কিন্তু আমদানির ওপরে ২০ শতাংশ ট্যাক্স থাকায় এতে খুব বেশি লাভবান হওয়া যায়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এনবিআরের কাছে ১০ মিলিয়ন ডলার আমদানিতে ট্যাক্স প্রত্যাহার চেয়েছিল কিন্তু এনবিআর কোন সাড়া দেয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে জানা যায়, ব্যাংকগুলোর কাছে নগদ ডলারের নোটের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক কোটি চার লাখ ৯০ হাজার ডলার। যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। সুর চৌধুরী বলেন, ডলারের বিপরীতে পাউন্ড স্ট্যারলিং ও ইউরোর মূল্য হ্রাস হয়েছে। যা রেমিটেন্স আহরণে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি আরও বলেন, তেলের দর কমে যাওয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের যুদ্ধাবস্থা চলায় শ্রমিকদের বেতন কমে গেছে। এতে শ্রমিকরা আগের মতো রেমিটেন্স পাঠাতে পারছেন না। বৈঠকে ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, রেমিটেন্স প্রবাহ কমার পেছনে অনেক কিছু কারণ রয়েছে। পাউন্ড, ইউরো, রিংগিট, সিঙ্গাপুর ডলারসহ প্রভৃতি মুদ্রার মূল্যমান কমে গেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দর কমে যাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে রেমিটেন্স প্রবাহ কমে গেছে। সূত্র জানায়, অবৈধ উপায়ে দেশে অর্থ আনতে হুন্ডিওয়ালারা মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা ব্যবহার করছে। বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে আর্থিক লেনদেন বাড়লেও সেসব ব্যাংকের এই সেবা রয়েছে, তাদের রেমিটেন্স প্রবাহ কমেছে। এতে বুঝা যায়, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সংগ্রহীত অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলে আসছে না। এই অর্থ পাচারেও ব্যবহƒত হয়ে থাকতে পারে বলে ব্যাংক কর্মকর্তাদের আশঙ্কা।
×