ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভেজাল চারা রোপণ, নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার ক্ষেত

কক্সবাজারে বেগুন ও মরিচে ফলন বিপর্যয়

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ১৫ নভেম্বর ২০১৬

কক্সবাজারে বেগুন ও মরিচে ফলন বিপর্যয়

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ বিভিন্ন শাকসবজির বীজ সংরক্ষণকারী কিছু নকল প্রতিষ্ঠান থেকে বীজ কিনে প্রতারণার শিকার হয়েছেন জেলার অন্তত ৫ হাজার কৃষক। কক্সবাজারের চকরিয়ায় চলতি মৌসুমে প্রতারণাকারী ওই প্রতিষ্ঠানের বিক্রি করা ভেজাল জাতের বেগুন ও মরিচের বীজ জমিতে রোপণ করে চরম ফলন বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। হাজার হাজার টাকা খরচ করে পথে বসেছে অন্তত শতাধিক কৃষক। চকরিয়ার হালকাকারা, মৌলভীরচর ও পূর্বচর এলাকার মাতামুহুরী নদীর উপকণ্ঠে রোপণ করা বেশির ভাগ বেগুন ও মরিচ ক্ষেত লালচে হয়ে মরে যাচ্ছে। এ অবস্থার কারণে ওই এলাকার শতাধিক কৃষক এ বছর কমপক্ষে কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতিসাধনের সম্মুখীন হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় কৃষকরা অভিযোগ করেছেন, যেখানে সপ্তাহের ব্যবধানে একটি বেগুন গত মৌসুমে দুই শ’ থেকে তিন শ’ গ্রাম ওজনে বিক্রি করা হয়েছে, চলতি মৌসুমে সে ধরনের একটি বেগুনের ওজন মাত্র ২০ কিংবা ৫০ গ্রামে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষকদের দাবি, বাজার থেকে ক্রয় করা ভেজাল বীজ রোপণ করে তারা এ বছর চরম ফলন বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছেন। ভুক্তভোগী কৃষকরা জানিয়েছেন, সরকারীভাবে অনুমোদন না থাকলেও ওসমান গণি নামে এক ব্যক্তি সুপার এগ্রো প্রতিষ্ঠানের নামে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে স্থানীয় সুরমা জাতের বেগুন ও মরিচ বীজ অন্য কোম্পানির প্যাকেটে ঢুকিয়ে দিয়ে তা গ্রীনবল ও গ্রীনবয় নামে বাজারে বিক্রি করেছেন। কৃষকরা অভিযোগ তুলেছেন, শুধু সুপার এগ্রো কোম্পানি নয়, চকরিয়া সদরে অবস্থিত বেশির দোকানে ভেজাল বীজ ও কীটনাশক বিক্রি করা হচ্ছে দেদার। এতে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি ও ডিলারদের সঙ্গে যোগসাজশ রয়েছে। মূলত কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি ও ডিলাররা সিন্ডিকেট করে ভেজাল বীজ বিক্রির মাধ্যমে প্রতিবছর হাজার হাজার কৃষকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। মাতামুহুরী নদীর উপকণ্ঠের সবজি ভা-ার ঘুরে বেগুন ও মরিচ চাষে ফলন বিপর্যয়ের অবস্থা না দেখলে বুঝা যাবে না। বেশির ভাগ কৃষকের ক্ষেত লালচে হয়ে মারা যাচ্ছে। হালকাকারা সওদাগরপাড়ার বাসিন্দা কৃষক মোহাম্মদ ইব্রাহিম জানিয়েছেন, তিনি এবার সাড়ে তিন কানি জমিতে বেগুন ও দেড় কানি জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। সুপার এগ্রো কোম্পানির গ্রীনবল, গ্রীনবয় জাতের হাইব্রিড বেগুন বীজ রোপণ করেছিলেন জমিতে। পাশাপাশি একই কোম্পানির ১৭০১ জাতের মরিচ বীজ রোপণ করেন। এ পর্যন্ত তার যা খরচ পড়েছে বেগুন ও মরিচ বিক্রি করে তা উঠানো সম্ভব হচ্ছে না। কৃষক ইব্রাহিম অভিযোগ করেছেন, চলতি মৌসুমে ফলন বিপর্যয়ের কারণে তার প্রায় দুই লাখ টাকার ক্ষতিসাধন হয়েছে। চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ বলেন, ভেজাল বীজ রোপণে ফলন বিপর্যয়ের ঘটনায় কৃষকরা কোন ধরনের অভিযোগ দেয়নি। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্তসাপেক্ষে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম বলেন, ভেজাল বীজের কারণে যদি কৃষকের জমিতে ফলন বিপর্যয়ের ঘটনা প্রমাণিত হলে অবশ্যই জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×