ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ১৫ নভেম্বর ২০১৬

বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন

প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী অনুপাতে আবাসন সুবিধা এখনও নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি আবাসিক হল থাকলেও অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা বঞ্চিত। এতে চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তি পোহাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে যারা মফস্বল থেকে ঢাকায় পড়াশোনার জন্য আসছেন তাদের অবস্থা আরও সঙ্গিন। বাধ্য হয়ে অনেকেই মেস-বাড়িতে ভাড়া থাকছেন। যেখানে অছাত্রই অনেক। ফলে পাঠ উপযোগী পরিবেশ পাচ্ছেন না অনেকেই। কোন কোন ছাত্রাবাসে সিঙ্গেল সিটে দু’জন করে থাকছেন। রবিবার সহযোগী একটি দৈনিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের দ্বিতীয় তলার বারান্দায় কাটছে ছাত্রদের হলজীবন শিরোনামে এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের নানা চিত্র। দেখে মনে হবে এখানে যেন উদ্বাস্তুদের বসবাস। চেয়ার-টেবিল নেই, বিছানায় বসেই করতে হয় পড়াশোনা। বারান্দার জায়গাটুকু ঘিরে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়েছে পুরনো চাদর বা কাঁথা ঝুলিয়ে। বই-খাতা, প্যান্ট-শার্ট পড়ে আছে ইতস্তত। মেধার দৌড়ে জিতে ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থান করে নিলেও হেরে গেছেন আবাসন সঙ্কটের নির্মম বাস্তবতার কাছে। তাদের ঠাঁই মিলেছে খোলা বারান্দায়। জানা গেছে, এসএম হলে সিট রয়েছে ৪০৫টি। সেখানে দ্বৈতাবাসের অনুমতি দিয়ে আরও ৪০৫ জনের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এভাবে ৮১০ জনের থাকার ব্যবস্থা করা হলেও বাস্তবে থাকছেন প্রায় ১৩০০ শিক্ষার্থী। বাড়তি শিক্ষার্থীরা থাকছেন হলের দুটি বারান্দায়। শুধু সলিমুল্লাহ মুসলিম হলই নয়, অন্য হলগুলোরও একই চিত্র। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, এই চিত্র অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও বিদ্যমান। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা তো আরও ভয়াবহ। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাস নেই হল দূরের কথা। ভাড়া বাড়িতে চলছে পাঠদানের কার্যক্রম। ইউজিসি এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিষয়গুলো জানে। মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে উঠে এলে তাদের হম্বিতম্বি লক্ষ্য করা যায়। তারপর অবস্থা সে তিমিরেই থেকে যায়। আবাসন সঙ্কট ছাত্রদের ক্ষেত্রে যেমন আছে, তেমনি ছাত্রীদের বেলায়ও তা আরও প্রকট। তারা ইচ্ছে করলে মেসবাড়িতে ভাড়া থাকতে পারেন না। সেই ক্ষেত্রে আর্থিক সঙ্গতির বাইরেও সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে উঠে আসে। নারী শিক্ষার উন্নতির কারণে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে তাদের পদচারণা বাড়ছে যা আশাব্যঞ্জক। কিন্তু এই সাফল্য ধরে রাখতে হলে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে নারীর আবাসন সুবিধা বাড়াতে হবে। চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যাও দীর্ঘদিনের। আবাসন সমস্যাই মূলত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রধান সমস্যা। তাই এই সমস্যাটি সমাধানে নজর দেয়া দরকার। এই ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে তুলনামূলকভাবে কম খরচে থাকা-খাওয়া যায় এমন প্রাইভেট ছাত্রাবাস নির্মাণে উৎসাহিত করা যায়। তবে সেখানে অবশ্যই শিক্ষার পরিবেশ ও নিরাপত্তার বিষয়টি অগ্রাধিকার দিতে হবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের পুরনো হল ও ডরমেটরিগুলো ভেঙ্গে বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিতে পারে। যদিও এটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তারপরও এখন থেকেই উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। আপৎকালীন সঙ্কট মেটাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে বাসা ভাড়া করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালনা করা যেতে পারে। ক্রমশ প্রকট হয়ে ওঠা এই সমস্যার সমাধানে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তার যথাযথ বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি। শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার পথ কুসমাস্তীর্ণ করার প্রয়োজনেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের আবাসন সঙ্কট সমাধান জরুরী।
×