ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

টুটুল মাহফুজ

পারফিউমের ক্ষতিকর দিক

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ১৪ নভেম্বর ২০১৬

পারফিউমের ক্ষতিকর দিক

পারফিউম। অনেক কাল আগে থেকেই ব্যবহার করে আসছে মানুষ। আভিজাত্য হিসেবে রাজা-বাদশারা ব্যবহার করত। সেই আভিজাত্য ধরে রেখে সমাজের অভিজাত শ্রেণীর মানুষের এখনও পারফিউম ছাড়া চলে না। তবে এখন এই পারফিউম আর শুধু সমাজের অভিজাত শ্রেণীর ভেতরেই সীমাবদ্ধ নেই। ছোট বড় ধনী-গরিব সবাই যেন একটু সুগন্ধি মেখে স্কুল-কলেজ কিংবা হাট-বাজারে যেতে চাই। সবারই হয়ত এক ব্র্যান্ড ভাল লাগে না। তবে বাইরে বেরোবার আগে শরীরে একটু পারফিউম না লাগিয়ে নিলেই নয়। কিংবা একটু বডি স্প্রে! কিন্তু আপনি কি জানেন যে, আপনার এই অল্প সময়ে ফিটফাট ও কেতাদুরস্ত থাকার ফলাফল প্রচ- বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে আপনার ভবিষ্যতকে? সম্প্রতি বেশকিছু গবেষণায় উঠে এসেছে যে সুগন্ধি বা বডি স্প্রেগুলো অদূর ভবিষ্যতে মানুষের শরীরে তৈরি করতে পারে নানারকম চর্মরোগ থেকে শুরু করে ক্যান্সার অব্দি! কিন্তু সত্যিই কি সুগন্ধী ক্যান্সারের কারণ হতে পারে? ২০১৪ সালে ন্যাশনাল এ্যাকাডেমি অব সায়েন্স অনুষ্ঠিত একটি সম্মেলনে জানানো হয় যে, স্টাইরিন নামের উপাদানে তৈরি যে কোন জিনিসই মানুষের শরীরের ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। আর এই জিনিসগুলোর ভেতরে রয়েছে এমনকিছু জিনিসের নাম যেগুলো ধোঁয়া বা গন্ধ সৃষ্টি করে। এই তালিকার প্রথম দিকটাতে সিগারেট থাকলেও আপনার দৈনন্দিন জীবনে শরীরে ব্যবহৃত পারফিউমও কিন্তু বাদ পড়েনি। তবে গবেষকদের মতে এটাই একমাত্র ভয়ের ব্যাপার নয়। আসল ভয়টি হচ্ছে অন্য জায়গায়। তাদের মতে, লিপ গ্লস থেকে শুরু করে, ডিটারজেন্ট, পারফিউমসহ আরও বেশকিছু দ্রব্য স্টাইরিন উৎপন্ন করে। এমনিতে হয়ত আলাদা আলাদাভাবে এরা খুব বেশি শক্তিশালী নয়। তবে একবার যদি এরা অনেকে একসঙ্গে মিলিত হয় তাহলে ঠিক কতটা বেশি শক্তিশালী হয়ে পড়তে পারে সেটা সহজেই অনুমেয়। এছাড়াও গবেষকদের মতে বেশিরভাগ নামী-দামী সুগন্ধির উপাদানের তালিকাতেই থাকে না এর ভেতরে ব্যবহৃত ক্ষতিকারক উপাদানগুলোর নাম। ফলে সেগুলো সম্পর্কে অনঅবগতই থেকে যায় ব্যবহারকারীরা। এতে করে খুব অল্প পরিমাণে হলেও ধীরে ধীরে শুক্রাণু নষ্ট হওয়া, হরমোনের সমস্যা হওয়া থেকে শুরু হয়ে সৃষ্টি হয় ক্যান্সার নামক মারাত্মক ব্যাধিটিও (রোডেলস অরগানিক লাইফ)! সম্প্রতি বেশকিছু সুগন্ধিকে নিয়ে পরীক্ষা চালান গবেষকরা। আর শেষ অব্দি দেখতে পায় যে এদের প্রত্যেকটিরই ভেতরে রয়েছে এমন কিছু উপাদান যেটার নাম কিনা উল্লেখই করা হয়নি লেবেলে! আর সুগন্ধিগুলো হলো- আমেরিকান ইগল সেভেন্টি সেভেন, চ্যানেল কোকো, ব্রিটনি স্পেয়ার্স কিউরিয়াস, ওল্ড স্পাইস, কুইকসিলভার, কেলভিন ক্লেইন ইটার্নিটি, বাথ এ্যান্ড বডি ওয়ার্কস জাপানীজ চেরি ব্লোসোম, হেলি বাই হেলি বেরি, হাননাহ মন্টানা সিক্রেট সেলিব্রেটি, ভিক্টোরিয়াস সিক্রেট ড্রিম এ্যাঞ্জেলস উইশ, এক্স বডি স্প্রে, ক্লিনিক হ্যাপি পারফিউম স্প্রে, ডলচে এ্যান্ড গাবানা লাইট ব্লু ইত্যাদি। এদের প্রত্যেকেই কিছু না কিছু ক্ষতিকারক উপাদানকে লুকিয়েছে ব্যবহারকারীদের চোখ থেকে। তবে এগুলোর ভেতরে আপনার সুগন্ধিটি নেই তারমানে এই নয় যে সেটি পুরোপুরি ভাল। কে জানে, সেটির ব্যবহারও দীর্ঘদিন পর আপনাকে করে দিতে পারে ক্যান্সারের মুখোমুখি। এত কিছুতেও যদি আপনার বিশ্বাস না হয় তাহলে বহুল গবেষণা আর পরিসংখ্যানের পর ২০০৯ সালে প্রকাশিত টক্সিক বিউটি বুকের তথ্যটিই পড়ে দেখুন। সেখানে সুগন্ধির নানারকম ক্ষতিকারক দিককে তুলে ধরা হয়। আর সেক্ষেত্রে সুগন্ধির দুটি উপাদান ক্যান্সার তৈরিতে সাহায্য করে বলে জানানো হয় ( হাফিংটন পোস্ট )। কি ভাবছেন? তাহলে কি আর সুগন্ধি ব্যবহারই করা যাবে না? অবশ্যই করবেন। তবে ব্যবহারের আগে সুগন্ধির প্রকৃতি আর লেবেলের দিকে ভাল করে নজর দিয়ে তবেই সেটা ব্যবহার করুন।
×