ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মুনসুর মাহমুদ

রূপে গুণে বাঙালী নারী

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ১৪ নভেম্বর ২০১৬

রূপে গুণে বাঙালী নারী

যেমন রূপ তেমন তাদের গুণ। রূপে গুণে অনন্য বাঙালী নারী। অবশ্য বঙ্গের নারী লাজুক প্রকৃতির, কিন্তু যে কোন উপলক্ষেই প্রাণ খোলা হাসি উপচে পড়ে তাদের টোল পড়া গাল বেয়ে। বাঙালী নারীর গুণের যেন অন্ত নেই। প্রেম-ভালবাসা, আতিথেয়তা, পতিভক্তি, সংসারী, ধৈর্যশীল এমন অনেক বিশেষণই ব্যবহার করা যায় বাঙালী নারীদের নিয়ে। কারও মতে, বাঙালী নারীরা রান্না, বায়না আর কান্না এই তিনটি কাজ ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না। আবার কেউ কেউ বলেন, বাঙালী নারী হচ্ছে লাজুক, ঘোমটা টানা কাজল দেয়া নারী। বাঙালী নারীদের যারা খুব কাছ থেকে দেখেছেন তাদের কাছে কথাটি মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। বাঙালী নারীদের সবচেয়ে বড় গুণ তাদের মমত্ববোধ। বাঙালী নারীরা নিজের আদর, ভালবাসা দিয়ে খুব সহজে জয় করে নিতে পারে যে কোন মানুষের মন। এই ছাড়া আরও কত রকমের বিশেষণের সঙ্গে জড়িত বাঙালী নারীরা। ঘর থেকে বাহির পর্যন্ত তাদের গুণের কোন অভাব নেই। হাজার হাজার বিশেষণ দিয়েও বাঙালী নারীদের বর্ণনা শেষ হবে না। বাঙালী নারীদের আবেগ যেমন দ্রুত স্পর্শ করে। তেমনি স্বাধীনতার প্রশ্নে সবসময়ে তারা সত্যিকার অর্থে অনড় থাকে। নিজের সত্তা নিয়ে তাদের অহঙ্কার আছে যতটা তার চেয়ে তাদের মধ্যে রয়েছে অসীম ধৈর্যের প্রবণতা। আবেগ যেমন সহজে তাদের গ্রাস করে তেমনে মায়াময়ীও হয়ে যায় মুহূর্তে। শাড়ি বাঙালী নারীদের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলে চমৎকারভাবে। যখন কোন নারী শাড়ি পরিধান করেন তখন তাকে লাগে বাঙালী। আর উপহার হিসেবে শাড়ি কোন বাঙালী নারী না চায় বলুন? তাই শাড়িতে সবচেয়ে সুন্দর বাঙালী নারী। বাঙালীর বারো মাসে তেরো উৎসব। ঈদ, নববর্ষ দুর্গা পূজা, বসন্তসহ আরও কত উৎসব পালন করে বাঙালী। কোন উৎসব উযাপনে কখনও বাদ পড়েনি বাঙালী নারী। সব উৎসব যেন বাঙালীর নারীদের জন্য তৈরি। প্রতিটি উৎসবে মানানসই পোশাক পরতে পছন্দ করে বাঙালী নারী। তবে অধিকাংশ বাঙালী নারী উৎসবে পরে শাড়ি। লাজুক প্রকৃতির এই বাঙালী নারীরা যে কোন উপলক্ষেই প্রাণ খুলে হাসতে ভালবাসে। বাঙালী নারীরা হয় গৃহিণী। তাই রান্নাতে তাদের পূর্ণ মনোযোগ। এমন কোন নারী নেই যে রান্না করেন না। যেমন তারা মায়াময়ী তেমনি তারা ভাল রাধুনী। বাঙালী নারীদের কাছে রান্না করা একটি শিল্প যা বাঙালী সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য। রান্না করতে ভালবাসেন প্রত্যেক বাঙালী নারী। বাঙালী নারী পুরুষ উভয়ই ভোজন রসিক। খেতে এবং খাওয়াতে খুবই ভালবাসেন। খাওয়ার ব্যাপারে বিশেষ করে বাঙালী নারীরা বেশ উদার। তাদের খাদ্যের নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই। তারা সবসময় ইচ্ছামতো খেতে পছন্দ করে। আমরা মাছে ভাতে বাঙালী তাতে পিছিয়ে নেই বাঙালী নারীরা। মাছ-ভাতের পাশাপাশি ফুসকা, চটপটি, দই, আইসক্রিম খেতে ভালবাসেন বাঙালী নারী। টক, ঝাল, মিষ্টি, নোনতা অন্যতম পছন্দের খাবার এই বাঙালী নারীদের। মায়াবী মুখের মিষ্টি হাসি বাঙালী নারীদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তাদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলা কি খুব কঠিন কাজ? না সকলেই জানে যে কাজটা কতটা সহজ। একটি লাল গোলাপ পেলে কিংবা রেস্তোরাঁয় নিয়ে গেলে তারা সন্তুষ্ট হয়ে এক সরল হাসি দেয়। এই সরল মিষ্টি হাসির গুণে ভরপুর বাঙালী নারীরা। তাছাড়া বাঙালী নারীরা অল্পতেই খুশি থাকেন। বাঙালী নারীদের মধ্যে যেমন আছে সরলতা তেমনে একইসঙ্গে দৃঢ়তা ও নমনীয়তা এবং প্রজাপতির চালতা রয়েছে। কাজল কালো চোখের অধিকারী বাঙালী নারীরা তাদের কাজল কালো চোখ এতটাই আকর্ষণীয় যে একবার চোখে চোখ পড়লে পলক ফেরানো যায় না। তাদের কাজল কালো চোখের দিকে তাকাতে কে না চাই? তাদের কাজল কালো চোখের প্রশংসা পাবেন অনেক কবির কবিতাতেও। রবি ঠাকুরের কৃষ্ণকলি কিংবা জীবনানন্দ দাশের বনলতা সেনে বাঙালী নারীদের কাজল কালো চোখের প্রশংসা ফুটে উঠেছে। কথা বলাতেও পিছিয়ে নেই বাঙালী নারীরা। তারা যেমন কাজ করতে ভালবাসেন তেমনে কথা বলতেও ভালবাসেন। বাঙালী নারীরা চুপ করে বসে আছেন এমন দৃশ্য কল্পনা করাও খুব কঠিন। তার রান্না থেকে রাজনীতি সব বিষয়ে কথা বলতে ভাল বাসেন। সব বিষয়ে একটা নিজস্ব মতামত আছে বাঙালী নারীদের। তাই বাঙালী নারীরা অনেক বেশি কথা রসিক হয়। বাঙালী নারীরা যে নারী বাদী এত কোন সন্দেহ নেই। তাদের মধ্যে অন্যতম একটি গুণ হলো মাতৃত্ববোধ। মা হিসাবে বাঙালী নারীরা পৃথিবী সেরা। সন্তান লালন পালনে তাদের মধ্যে যে স্নেহ, মায়া, মমতা আর ভালবাসা বিরাজমান তা আর কোথায় নেই। বাঙালী নারীরা তাদের সন্তানের প্রতি যতটা যতœশীল থাকে ততটা আর কোন নারীর মধ্যে নেই। তাই নারীবাদী হচ্ছে মাতৃত্ব বোধের অন্যতম গুণ। প্রকৃতির সঙ্গে বাঙালীর নারীদের সর্ম্পক অতি ঘনিষ্ঠ। তারা খুব ভ্রমণপ্রিয় হয়। বাঙালী বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে পছন্দ করে। ভ্রমণপ্রিয় হয় না এমন বাঙালী নারী পাওয়া যাবে না। কোন জায়গায় ঘুরতে নিয়ে গেলে তারা খুব আনন্দ পায় এবং উপভোগ করে। তারা ঠগ। প্রতারক। হিপোক্রেট। ভীতু। ভণ্ড। তারা প্রেমিক ছিল কি একজনও? আজ এ বেলায় এসে, দুখের দিনগুলোকেও যে সুখের দিন ভেবে সুখ পেতাম, টের পাই। হৃদয় নিংড়ে প্রেম দিয়েছি, যাদের দিয়েছি, বুঝি তারা পুরুষ ছিল সবাই, প্রেমিক ছিল না। এমনই আবেগী বাঙালী নারী। মডেল : মেহজাবিন ছবি : আরিফ আহমেদ
×