ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিপিএলে সাব্বিরের রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরি

প্রকাশিত: ০৬:২২, ১৪ নভেম্বর ২০১৬

বিপিএলে সাব্বিরের রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ প্রথমে মুশফিকুর রহীমের ঝড়ো ব্যাটিং। এরপর তাকেও ছাড়িয়ে গেলেন সাব্বির রহমান। মুশফিক ৫২ বলে ৮১ রানের অপরাজিত একটি ইনিংস খেলেন বরিশাল বুলসের হয়ে। তার মোক্ষম জবাব আরও বিধ্বংসী হয়েই দিলেন রাজশাহী কিংসের সাব্বির। চলতি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল টি২০) আসরের প্রথম সেঞ্চুরিটা আসল তার ব্যাট থেকে। মাত্র ৫৩ বলেই সেঞ্চুরি হাঁকানোর পর ১২২ রান করে ফিরে গেছেন সাজঘরে। এটি ছিল বিপিএল ইতিহাসের নবম শতক। তবে বিপিএলের চতুর্থ দ্রুততম শতক এটি। এর আগে বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের মধ্যে শুধু শাহরিয়ার নাফীস ও মোহাম্মদ আশরাফুলই হাঁকিয়েছেন সেঞ্চুরি। তবে সাব্বিরের ১২২ বিপিএলের রেকর্ডে সেরা। কারণ এটিই এখন পর্যন্ত বিপিএল ইতিহাসে কোন ক্রিকেটারের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। আর নাফীস ও আশরাফুলের চেয়ে দ্রুতগতির সেঞ্চুরি। এবার বিপিএলের চতুর্থ আসরের শুরু থেকেই লো স্কোরিং ম্যাচ হয়েছে। টি২০ ক্রিকেটের সঙ্গে মানানসই কোন বিধ্বংসী ইনিংস দেখা যায়নি। তাই যেন চার-ছক্কা দেখার জন্য দর্শকদের মাঝে যে উন্মাদনা, সেটাই যেন কমে যাচ্ছিল। দর্শক উপস্থিতিও হ্রাস পাচ্ছিল ক্রমেই। তবে ক্রিকেটাররা বারবার দাবি করছিলেন উইকেটের কোন সমস্যা নেই। স্পোর্টিং উইকেট গড়া হয়েছে বিপিএলের জন্য, যেখান থেকে ব্যাটসম্যান এবং বোলার উভয়ে সমান সুযোগ তুলে নিতে পারে। তবে সেটার বাস্তব কোন দৃষ্টান্ত দেখা যায়নি। ব্যাটসম্যানরাই ব্যর্থ হয়েছেন এবং উইকেটের আচরণে মনে হয়েছে রান করা অনেক কঠিন এখানে। তবে রবিবার বিপিএলের ষষ্ঠ দিনে সেটার ব্যতিক্রম দেখা গেল। প্রথম ব্যাট করে রাজশাহী তুললো ৪ উইকেটে ১৯২ রানের বিশাল সংগ্রহ। সেটা বড় হলো মূলত মুশফিকুর রহীমের দুর্ধর্ষ একটি ইনিংসের কল্যাণেই। বিপিএল শুরুর আগেই তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন টি২০ ক্রিকেটে যে মেজাজে খেলেন তিনি সেই স্বরূপে ফিরতে চান। প্রথম থেকেই কথার সঙ্গে কাজের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছিল। প্রথম ম্যাচে অর্ধশতক (৩৬ বলে ৫০*), পরের ম্যাচে ২৩ বলে ৩৩ রান করার পর এবার আরও তা-ব চালালেন। ৪০ বলে ফিফটি হাঁকানোর পর বিধ্বংসী হয়ে গেলেন। বাকি ১২ বলে আরও ৩১ রান করেন। সবমিলিয়ে ৫২ বলে ৫ চার ও ৪ ছক্কায় অপরাজিত ৮১ রান মুশফিকের। চলতি আসরের সেরা ব্যক্তিগত ইনিংসটার সুবাদে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ ৪ উইকেটে ১৯২ রানও ওঠে বরিশাল বুলসের। তবে রাজশাহী ব্যাটিংয়ে নামার পর ম্লান হয়ে গেলেন মুশফিক। রাজশাহীর শুরুটা প্রথম ওভারেই রকিবুল হাসানকে হারিয়ে শুরু হয়েছিল। তবে সেদিকে তেমন গুরুত্বই দিলেন না স্বভাবজাত হিসেবে বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান সাব্বির। আগের দুই ম্যাচে নিজের খেলা ইনিংস নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। এদিন সেটা পুষিয়ে দিলেন। যদিও ব্যক্তিগত ১৪ রানেই সহজ একটি ক্যাচ দিয়েছিলেন, সেটা হাতছাড়া করেন আল আমিন হোসেন। এরপর আরও চড়াও হয়ে ওঠেন সাব্বির। একের পর এক চার-ছক্কার ফুলঝুরি ছুটিয়ে চলতি বিপিএলের সবচেয়ে জমজমাট ম্যাচ করে তোলেন এটিকে। ক্যাচ মিস মানেই ম্যাচ মিস। সাব্বিরকে প্রাণ দেয়ার খেসারত দিতে হয়েছে। কারণ বলা হয়ে থাকে সাব্বির টি২০ স্পেশালিস্ট। সেটার স্বাক্ষর তিনি ইতোমধ্যেই দেখিয়েছেন আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচে। শেষ পর্যন্ত মাত্র ২৬ বলেই ফিফটি পেয়ে যান তিনি। এরপর হয়ে ওঠেন আরও দুরন্ত। সেঞ্চুরি হাঁকাতে সবমিলিয়ে ৫৩ বল লেগেছে তার। এটি বিপিএলের হওয়া নবম সেঞ্চুরি। তবে দ্রুতগতির দিক থেকে চার নম্বরে। আহমেদ শেহজাদ ৪০ বলে, ক্রিস গেইল ৪৪, ৪৬ ও ৫৩ বলে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন। তবে কোন বাংলাদেশীর পক্ষে টি২০ ক্রিকেটে দ্রুতগতির সেঞ্চুরিটা সাব্বিরেরই। নাফীস ৬৭ ও আশরাফুল ৫৬ বল খেলে শতক হাঁকিয়েছিলেন। সাব্বিরের ব্যাটিংয়ে নিশ্চিত জয়ের পথেই এগিয়ে যাচ্ছিল রাজশাহী। কিন্তু তিনি ৬১ বলে ৯ চার ও ৯ ছক্কায় ১২২ রানে ফিরে যান। এরপর আর জিততে পারেনি রাজশাহী। কিন্তু বিপিএল ইতিহাসের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস খেলেছেন সাব্বির। ২০১২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম আসরে ক্রিস গেইল বরিশাল বুলসের হয়ে খেলেছিলেন ১১৬ রানের ইনিংস। সেটাই ছিল বিপিএলের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের রেকর্ড। নতুন রেকর্ড গড়লেন এবার সাব্বির।
×