ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সাব্বিরের রেকর্ড সেঞ্চুরি টেক্কা দিয়ে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে ৪ রানে জয়ী বরিশাল

তীরে এসে তরী ডুবল রাজশাহীর

প্রকাশিত: ০৬:২১, ১৪ নভেম্বর ২০১৬

তীরে এসে তরী ডুবল রাজশাহীর

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ কি দুর্দান্ত খেলা হলো। উত্তেজনা মিলল। উত্তাপও ছড়াল। বিপিএলে যে খেলা দেখতে সবাই আগ্রহী। সেইরকম খেলাই দেখার মিলল। দুই ইনিংসেই জমজমাট ব্যাটিং হলো। মুশফিকুর রহীম ৮১ রান করে বরিশাল বুলসকে ১৯২ রানে নিয়ে গেলেন। সেই রান অতিক্রম করতে গিয়ে সাব্বির রহমান রুম্মন শতকই করে ফেললেন। ১২২ রানের ইনিংস খেললেন। কিন্তু তার শতকের পরও ১৮৮ রানের বেশি করতে পারেনি রাজশাহী। সাব্বিরের শতকের পরও ৪ রানে হারে রাজশাহী। টুর্নামেন্টে বরিশাল দ্বিতীয় জয় তুলে নেয়। বরিশাল ৪ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৯২ রান করে। এত বিশাল রান। অথচ মুমিনুল হকের সঙ্গে রকিবুল হাসান ওপেনিংয়ে ব্যাট করতে নামেন। ১ রান হতেই প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই আউটও হয়ে যান রকিবুল। দলের ২০ রানের সময় সাব্বির রহমান রুম্মনের উইকেটটিও হারাতো রাজশাহী। কিন্তু ১৪ রানে থাকা সাব্বিরের ক্যাচটি ধরতে পারেননি আল আমিন। তা পুষিয়ে দিয়েছেন। ৪৯ রানের সময় টানা দুই বলে মুমিনুল ও পাকিস্তান ব্যাটসম্যান উমর আকমলকে আউট করে দেন। আকমলের আউট নিয়ে তো সবার আফসোসই হয়। কি আউট দিলেন আম্পায়ার খালিদ মাহমুদ। আল আমিন বল করলেন। বল গিয়ে আকমলের পায়ে লাগল। কোন আপীল হলো না। অথচ আম্পায়ার আউটের সিদ্ধান্ত দিলেন। তবে সাব্বির কিন্তু সুযোগটি পেয়ে ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং করতে থাকেন। ২৬ বলেই ৩ চার ও ৪ ছক্কায় অর্ধশতক করে ফেলেন। ৪৯ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর সাব্বিরের ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ে ১১ ওভারের সময়েই শত রানে পৌঁছে যায় রাজশাহী। সাব্বিরের সঙ্গে সামিত প্যাটেল যোগ্য সঙ্গই দিচ্ছিলেন। ১১৭ রানে মধ্যেই ৬৮ রানের জুটি হতেই রনির বলে আউট হয়ে যান প্যাটেল। তবে সাব্বির ঠিকই উইকেটে থাকেন। দেখতে দেখতে বিপিএলের এবারের আসরের সর্বোচ্চ স্কোরটি গড়ে ফেলেন। বিপিএলের এবারের আসরে প্রথম শতকটিও করে ফেলেন। ১৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগ দিয়ে ২ রান নিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম টি২০ শতক পূরণ করেন। ৫৩ বলেই শতক করে ফেলেন। ‘ছক্কা-চার’ হাঁকাতে থাকেন। ১১৫ রানও ব্যক্তিগত স্কোরবোর্ডে যোগ করে ফেলেন। আর ২ রান করলেই বিপিএলের প্রথম আসরে ক্রিস গেইলের করা ১১৫ রানকে টপকে যাবেন সাব্বির। এমন যখন আলোচনা চলছে। আল আমিনের করা ১৬ ওভারের দ্বিতীয় বলে উইকেটের পেছন দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে এক ম্যাচে বিপিএলের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান সংগ্রাহক ব্যাটসম্যানও হয়ে যান সাব্বির। ২৫ বলে জিততে ৩৪ রান লাগে। এমন মুহূর্তে ৬১ বলে ৯ চার ও ৯ ছক্কায় ১২২ রান করা সাব্বির আউট হয়ে যান। সাব্বির আউট হতেই হারের শঙ্কাও তৈরি হয়ে যায়। ২৪ বলে জিততে যে ৩৪ রান লাগে, তা কী বাকিরা তুলতে পারবেন? এমন প্রশ্নও ওঠে। শেষ পর্যন্ত পারা যায়নি। ১২ বলে জিততে ১৮ রান লাগে। সামি ও সোহান ব্যাটিংয়ে থাকেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেসার রায়াদ এমরিট ৯ রান দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সামির (২৭) উইকেটটিও নেন। শেষ ওভারে জিততে ৯ রান লাগে। শ্রীলঙ্কান পেসার থিসারা পেরেরা বল করতে আসেন। সোহান ও আবুল হাসান রাজু ব্যাটিংয়ে থাকেন। ৫ বলে ৩ রান হয়। ১ বলে জিততে লাগে ৬ রান। সোহান ব্যাটিংয়ে। ১ রান নেন। এই ওভারে ৪ রান হয়। বরিশালের ৪ রানে জয় নিশ্চিত হয়ে যায়। ৬ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৮৮ রানের বেশি করতে পারেনি রাজশাহী। বরিশালও রানের খাতা খোলার আগেই ওপেনার শ্রীলঙ্কান দিলশান মুনাবিরাকে হারায়। তাকে আউট করে দেন ফরহাদ রেজা। ২১ রান হতেই আবার ইংল্যান্ডের ডেভিড মালানের উইকেটটিও শিকার করেন। শুরুতেই বিপাকে পড়ে যায় বরিশাল বুলস। এরপর শাহরিয়ার নাফীস ও মুশফিকুর রহীম মিলে সেই বিপাক থেকে দলকে রক্ষা করেন। দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান ধীরে ধীরে এগিয়ে যান। স্কোরবোর্ডে রানও জমা করতে থাকেন। ৫২ বলে গিয়ে ৫০ রান স্কোরবোর্ডে যোগ করে ফেলে বরিশাল। ৪১ বলে আবার দুইজন মিলে ৫০ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন। দুইজন মিলে দলকে ১০০ রানেও নিয়ে যান। ১১১ রানের সময় প্যাটেলের বলে ডিপ মিডউইকেট দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে ৩৮ বলে অর্ধশতকও করে ফেলেন শাহরিয়ার। একের পর এক ‘ছক্কা-চার’ হাঁকাতে থাকেন। শত রানের জুটিও হয়ে যায়। যেটি এবারের আসরে প্রথম শতরানের জুটি। জুটিটি ১১২ রানেও পৌঁছে যায়। দলের স্কোর ততক্ষণে ১৩৩ রানে চলে যায়। এমন সময় ৪৪ বলে ৪ চার ও ৪ ছক্কায় ৬৩ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ড্যারেন সামির বলে আউট হন শাহরিয়ার। শাহরিয়ার আউটের পর ৪০ বলে মুশফিকও অর্ধশতক করেন। শাহরিয়ার যখন ‘ছক্কা-চার’ হাঁকান, তখন মুশফিক একপ্রান্ত আগলে রাখেন। শাহরিয়ার আউট হতেই মুশফিক ধুন্ধুমার ব্যাটিং করতে থাকেন। ৭৭ রানে গিয়ে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে ক্যাচ আউট হওয়া থেকে বাঁচেন মুশফিক। শেষ পর্যন্ত ৫২ বলে ৫ চার ও ৪ ছক্কায় অপরাজিত ৮১ রান করেন মুশফিক। আর ৫ রান যদি মুশফিক করতে পারতেন, তাহলে বিপিএলে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে এক হাজার রান হয়ে যেত। ৬ রান করতে পারলেতো টি২০ ক্যারিয়ারে যে সর্বোচ্চ ৮৬ রান আছে মুশফিকের, তা অতিক্রম করে ফেলতেন। কিন্তু কোনটিই হলো না। হতে দিলেন না আসলে শ্রীলঙ্কান থিসারা পেরেরা। তিনিও যে মারমুখী হয়ে খেলেন। ১১ বলেই ২৪ রান করে ফেলেন পেরেরা। ৩ ছক্কা হাঁকান। এরমধ্যে শেষ ওভারেই দুটি ছক্কা মারেন। মুশফিক তাই ব্যাট করার সুযোগটিই পেলেন না। শেষ বলে দুই রান নিতে গিয়ে আউট হয়ে যান পেরেরা। শেষ পর্যন্ত ৪ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৯২ রান করে বরিশাল। পাওয়ার প্লেতে ২৮ রান করেছিল বরিশাল। ২ উইকেটও হারিয়েছিল। সেখান থেকে শাহরিয়ার-মুশফিকের দুর্দান্ত জুটিতে পরের ১০ ওভারে ১১২ রান করে বরিশাল। বাকি ৪ ওভারে মুশফিক ও পেরেরা মিলে ৫৯ রান স্কোরবোর্ডে জমা করেন। তাতে করে দলের স্কোর দুই শ’ ছুঁইছুঁই হয়ে যায়। সেই স্কোরেই জয় মিলে যায় ৪ রানে। টান টান উত্তেজনার ম্যাচে সাব্বিরের শতকের পরও জিততে পারেনি রাজশাহী। এরপরও শতক করে যে ম্যাচটিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করেছেন সাব্বির, তাতেই ম্যাচসেরা হয়েছেন।
×