ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দখলমুক্তির লড়াই

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ১৪ নভেম্বর ২০১৬

দখলমুক্তির লড়াই

স্পর্শকাতর স্থাপনার কারণে বার বার উদ্যোগ নিয়েও ঢাকার চার নদী দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না। নদীর বুকে কিংবা পাড়ে উপাসনালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থানান্তর ও উচ্ছেদে গঠিত কমিটির কাজে নেই অগ্রগতি। এই বিপন্নতা বোধকরি কর্তৃপক্ষের বিব্রত হওয়ারই অপর নাম! উদ্যোগ গ্রহণ জরুরী বটে, তবে সে উদ্যোগের বাস্তবায়ন না হলে সব বৃথা। উদ্যোগ বাস্তবায়নে ধারাবাহিকতাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চার নদীকে বাঁচানোর জন্য বহু উদ্যোগ সত্ত্বেও নদীচতুষ্টয়ের মৃত্যুঘণ্টা বেজেই চলেছে। হাত পা গুটিয়ে বসে থাকলে নদীমৃত্য আমাদের চেয়ে চেয়েই দেখতে হবে। এটাকে নদীহত্যা বলাই বোধকরি সঙ্গত। অর্ধ যুগ আগে উচ্চ আদালতের আদেশবলে পরিবেশ অধিদফতরের পক্ষ থেকে চার নদীর তীরবর্তী অঞ্চলকে ‘পরিবেশগত সঙ্কটাপূর্ণ এলাকা’ (ইকোলজিক্যাল ক্রিটিক্যাল এরিয়াÑইসিএ) ঘোষণার পরও পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। দখল-দূষণের ধারাবাহিক শিকার ওই চার নদীরক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে অপারগতার জন্য আমরা কাকে দায়ী করব? তবে প্রসঙ্গত বলা দরকার শুধু চার নদী নয়, দেশের বহু নদীই আজ মরণাপন্ন। দখলবাজদের কবলে শুধু রাজধানীর চার নদীই নয়, দেশের অসংখ্য নদীর অস্তিত্ব বিলীন হতে বসেছে। নদীবহুল বাংলাদেশের অসংখ্য নদী দূষণের শিকার হয়ে বিপন্ন বিপর্যস্ত; মানুষের অপরিণামদর্শিতার কারণে বহু নদী ধুঁকে ধুঁকে মরছে। বিশ্বের আর কোথাও এ দেশের মতো এমন নদীহত্যার নজির নেই। বহির্বিশ্বে প্রকৃতির উপহার সংরক্ষণের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নেয়া হয়। নদীকে প্রাণবন্ত, দূষণমুক্ত রাখা এবং তার প্রবাহ অবাধ রাখার জন্য রীতিমতো আইন প্রণয়ন হয়। নদীকে কষ্ট দিয়ে যারা প্রকারান্তরে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী ও প্রকৃতির ক্ষতি করছেন, সেই সব মুনাফালোভী শুভবোধহীন ব্যক্তিকে অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে আসা দরকার। দীর্ঘদিন যাবতই রাজধানীর বুড়িগঙ্গা নদীর দূষণের কথা বলা হচ্ছে। কালে কালে সেই দূষণ এমন ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে যে নদীটির পানি সংশোধনের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বর্তমানে বুড়িগঙ্গার নোংরা ও দূষণকে মধ্য ইউরোপের রাইন ও লন্ডনের টেমস নদীর দূষণকালীন কৃষ্ণবর্ণ ও মলিনতার সঙ্গে তুলনা করা হয়ে থাকে। টেমস ও রাইনকে যদি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে রক্ষা করা সম্ভব হয়, তাহলে বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চার নদীকেও রক্ষা করা সম্ভব। এখনও সময় আছে। এ লক্ষ্যে দেরি না করে সরকারকে উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স এবং মনিটরিং টিম নিয়ে চার নদীর জীবন রক্ষায় দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রভাবশালী মহল, আরও স্পষ্ট করে বললে যখন যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকে তখন সে দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিবর্গই ক্ষমতার জোরে এসব দখল চালিয়ে থাকে। বিগত কয়েক দশকে দখল এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তা চার নদীর গলা টিপে ধরারই নামান্তর। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এদের হাত থেকে নদীর প্রাণ বাঁচাতেই হবে। এ জন্য দৃঢ়তার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়ে দখলমুক্তির লড়াই চালানো জরুরী। তা না হলে ভবিষ্যত প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না। ঢাকা তথা রাজধানী বাঁচানোই শুধু নয়, এটি দেশের হৃৎপি- বাঁচানোরই লড়াই।
×