ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বহুজাতিক কোম্পানিকে বাজারে আনার প্রস্তাব

প্রকাশিত: ০৬:১২, ১৪ নভেম্বর ২০১৬

বহুজাতিক কোম্পানিকে বাজারে আনার প্রস্তাব

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বহুজাতিক বা বিদেশী কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তালিকাভুক্তির উদ্দেশ্যে পুুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে লিখিত প্রস্তাবও চেয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। রবিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কামরুন নাহারের সভাপতিত্বে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সরকারের পক্ষ থেকে লিখিত প্রস্তাব চাওয়া হয়। বাজারের গভীরতা বাড়াতে মন্ত্রণালয় স্টেকহোল্ডারদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়েছে। একই সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব বিদেশী কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তিতে আগ্রহের কথাও মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, উভয় স্টক একচেঞ্জ, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), পাবলিক লিস্টেড কোম্পানির প্রতিনিধি এবং অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতিনিধিরা বাজারে দ্রুত বহুজাতিক কোম্পানি বা বিদেশী কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তির তাগিদ দেন। তবে তাদের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। সে কারণে কিভাবে কোম্পানিগুলোকে বাজারে আগ্রহী করা যায়, সেটিও গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এ বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বিদ্যুত ও জ্বালানি বিভাগ, শিল্প, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা), বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। জানা গেছে, সাড়ে তিন শতাধিক নিবন্ধিত বিদেশী কোম্পানি বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করছে। ওষুধ, টেলিযোগাযোগ, জ্বালানি, প্রসাধনসামগ্রী, শিশুখাদ্যসহ পণ্যবাজারের একটি বড় অংশ এসব কোম্পানির দখলে। বছর গেলে বড় মুনাফাও করে প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে গত সাত বছরে কোন বহুজাতিক কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি। এজন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হলেও তেমন কাজে আসেনি। ২০০৯ সালে গ্রামীণফোনের পর আর কোন বিদেশী কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি। বর্তমানে সাড়ে তিন শ’ নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান থাকলেও শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত মাত্র ১২টি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশী কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত না হওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণ কাজ করছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ তালিকাভুক্তির শর্ত থেকে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অব্যাহতি দেয়া। এ কারণে বিদেশী কোম্পানিকে আনা সম্ভব হচ্ছে না। এর বাইরে আস্থাহীনতা, সরকারের উদ্যোগের ঘাটতি এবং কর ছাড় যথেষ্ট পরিমাণ না হওয়াকে অনেকাংশে দায়ী বলে তারা মনে করেন। তবে পার্শ¦বর্তী দেশ ভারতে বিদেশী কোম্পানিগুলোর অন্তত ৫ শতাংশ শেয়ার তালিকাভুক্তির বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অন্যদিকে কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করতে বিশেষ ছাড় দিয়েছে এনবিআর। তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানি যেখানে ৩৫ শতাংশ হারে কর্পোরেট কর দিচ্ছে, সেখানে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার ২৫ শতাংশ। একইভাবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আড়াই শতাংশ কর ছাড় পায়। মোবাইল কোম্পানি ৫ শতাংশ ছাড় পাচ্ছে। এর আগে ২০০৬ সালে বিএসইসি আইন করে কোন কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৪০ কোটি টাকা অতিক্রম করলেই সেটিকে তালিকাভুক্তির শর্ত জুড়ে দেয়। পরে বর্তমানে বিলুপ্ত বিনিয়োগ বোর্ডে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো এ শর্ত থেকে অব্যাহতির জন্য আবেদন করে। সাড়ে তিন শতাধিক নিবন্ধিত বিদেশী কোম্পানি বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করছে। ওষুধ, টেলিযোগাযোগ, জ্বালানি, প্রসাধন সামগ্রী, শিশুখাদ্যসহ পণ্যবাজারের একটি বড় অংশ এসব কোম্পানির দখলে। বছর গেলে বড় মুনাফাও করে প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে গত সাত বছরে কোন বহুজাতিক কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি। এমন প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্ত করতে নতুন করে উপায় খুঁজছে সরকার। একই সঙ্গে সরকারী ও বেসরকারী বন্ড জনপ্রিয় করার উদ্যোগও নেয়া হয়েছে।
×