ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংকিং খাতের ছয় মাস

হাজার কোটি টাকার কুঋণ অবলোপন

প্রকাশিত: ০৬:১১, ১৪ নভেম্বর ২০১৬

হাজার কোটি টাকার কুঋণ অবলোপন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ অবলোপনের (রাইট অফ) পরিমাণও বাড়ছে। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এ খাতে খেলাপি ঋণ অবলোপনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪২ হাজার ৩২২ কোটি টাকা। এর মধ্যে জানুয়ারি থেকে জুন এই ছয় মাসে অবলোপন করা হয়েছে ১ হাজার ৪৪ কোটি টাকা। আর মার্চ থেকে জুন এই তিন মাসে অবলোপন হয়েছে ৮৮৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। মূলত আর্থিক অবস্থা ভাল দেখাতে খেলাপি ঋণ অবলোপনের এই কৌশল প্রয়োগ করছে ব্যাংকগুলো। বছরের পর বছর ধরে ব্যাংক ব্যবস্থায় থাকা মন্দমানের (কুঋণ) শ্রেণীকৃত খেলাপি ঋণ আর্থিক বিবরণী (ব্যালান্সশীট) থেকে বাদ দেয়াকে ঋণ অবলোপন বলে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার আলোকে ২০০৩ সাল থেকে ব্যাংকগুলো ঋণ অবলোপন করে আসছে। নীতিমালার আওতায় ৫ বছর বা তার বেশি সময় ধরে থাকা খেলাপি ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন রেখে এবং মামলা দায়ের করে তা অবলোপন করতে হয়। একটি সময় মামলা দায়ের না করে কোন ঋণ অবলোপন করা যেত না। তবে মামলার খরচের চেয়ে অনেকাংশে বকেয়া ঋণের পরিমাণ কম হওয়ায় ২০১৩ সালের শেষভাগ থেকে মামলা না করেই ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ অবলোপনের সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ অবলোপন প্রক্রিয়া চলছে পুরো অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়। এ প্রক্রিয়ায় মূল হিসাব থেকে অবলোপন করা ঋণ বাদ দিয়ে সাধারণের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। কারণ ব্যাংকের মুনাফা থেকে শতভাগ প্রভিশন রাখতে হচ্ছে এসব ঋণের বিপরীতে। এতে লভ্যাংশ বঞ্চিত হচ্ছেন শেয়ারহোল্ডাররা। সূত্রগুলো বলছে, অবলোপন করা খেলাপি ঋণ আদায়ে বিভিন্ন ব্যাংকে আলাদা সেল রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কোন ব্যাংকই ওই ঋণ আদায় করতে পারছে না। অন্যদিকে, বিভিন্ন আর্থিক অনিয়ম. রাজনৈতিক চাপ ও তদ্বিরে ব্যাংকের পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাছবিচার ছাড়া ঋণ অনুমোদন, বিভিন্ন অজুহাতে ঋণগ্রহীতা কর্তৃক সময়মতো ঋণ ফেরত না দেয়ার সংস্কৃতির কারণে প্রতিবছরই খেলাপি ঋণ বাড়ছে। যার বড় অংশ নির্দিষ্ট সময়ান্তে মন্দমানের ঋণে পরিণত হচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মিজ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, দেশে ব্যাংকের সংখ্যা বেশি হওয়ায় তাদের মধ্যে অশুভ প্রতিযোগিতা দেখা দেয়। অনেক ব্যাংকই ঋণগ্রহীতা অন্য ব্যাংকে চলে যেতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে বাছবিচার ছাড়াই ঋণের অনুমোদন দেয়। এতে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে। আবার ঋণ খেলাপিদের শাস্তি না হওয়া এবং অর্থঋণ আদালতে এ সংক্রান্ত মামলা বছরের পর বছর ঝুলে থাকার কারণে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ কমছে না।
×